সকাল আটটায় কমলাপুর স্টেশনে এসেছেন তাঁরা। সকাল নয়টার রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন বেলা দুইটাতেও আসেনি। ট্রেনের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে স্টেশনেই ঘুমিয়ে পড়েছেন এই মা-মেয়ে। ছবিটি বেলা একটার দিকে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে রংপুরের উদ্দেশে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছাড়ার সময় ছিল সকাল ৯টা ১০ মিনিট। শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি দেরিতে, বেলা আড়াইটাতেও ট্রেনটি ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে এসে পৌঁছাতে পারেনি।

ঢাকা থেকে জামালপুরের তারাকান্দি গন্তব্যের অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেনের কমলাপুর থেকে ছাড়ার কথা ছিল বেলা সাড়ে ১১টায়। দুই ঘণ্টা দেরিতে ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশনের চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিল।

পরে বেলা ১টা ৪০ মিনিটের দিকে ট্রেনটি কমলাপুর ছেড়ে যায়। ট্রেনের এমন শিডিউল বিপর্যয়ে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে কমলাপুর স্টেশনে আসা যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।

আজ শনিবার বেলা একটার দিকে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের ভিড় জমেছে। স্টেশনের ভেতরে ও প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের যেখানে বসার জায়গা আছে, সেখানে কোনো আসন খালি নেই।

সন্তান ও স্বজন নিয়ে কেউ বসে আছেন, কেউবা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়েছেন বসার জায়গা না পেয়ে। স্টেশনের ভেতর অনেক যাত্রীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

বগুড়ার সান্তাহার যেতে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কেটেছিলেন খায়রুল আলম। সকাল নয়টায় ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল। স্ত্রী মেঘনা আলম ও মেয়ে সারিহা তাসনিমকে নিয়ে সকাল আটটার মধ্যেই কমলাপুর স্টেশনে চলে আসেন বলে জানান তিনি।

খায়রুল আলম  বলেন, ‘ট্রেনটি কোথায় আছে, আসতে কতক্ষণ লাগবে, কিছুই জানতে পারছি না। একবার এলইডি বোর্ডে দেখাল ট্রেন ১২টা ৪০ মিনিটে ছাড়বে। আবার এখন দেখাচ্ছে ১টা ২০ মিনিটে ছাড়বে। ট্রেন আদৌ আসবে কি না, সেটাই এখন নিশ্চিত হওয়া দরকার।’ বেলা একটার দিকে খায়রুলের স্ত্রী মেঘনা আলম বলেন, ‘এই গরমে প্রচুর কষ্ট হচ্ছে, খারাপ লাগছে। মেয়েটা বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।’ 

যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল থেকেই ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে। কমলাপুর স্টেশনে বেলা পৌনে দুইটার দিকে ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল। ট্রেনটি ছাড়ার কথা ছিল বেলা সোয়া একটায়। কখন ছাড়বে, সেই সময় স্টেশনের এলইডি বোর্ডে দেখা যায়নি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে জয়দেবপুর জংশনের দক্ষিণে ছোট দেওড়া আউটার সিগন্যালে তেল ও যাত্রীবাহী দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। এতে এক ট্রেনের দুই চালকসহ চারজন আহত ও নয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঢাকামুখী যাত্রীবাহী ট্রেনটি প্রায় যাত্রীশূন্য ছিল। নয়তো ঘটনা আরও ভয়ানক হতে পারত।

এ দুর্ঘটনায় তিন ঘণ্টার মতো ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-উত্তরবঙ্গ পথে রেল চলাচল বন্ধ ছিল। এ সময় বিভিন্ন পথের যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। গতকাল বেলা একটা থেকে এ পথে ডাউন লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। আজ শনিবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধারকাজ শেষ হয়নি। ডাবল লাইনের ঢাকা-জয়দেবপুর রেলপথের একটি দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে।