রাজশাহীর ২ হাজার শিক্ষার্থী পেল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়ার পুরস্কার

অতিথিদের হাত থেকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া কর্মসূচির পুরস্কার নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার দুপুরে রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

নিজস্ব প্রতিবেদক: বই পড়ার জন্য পুরস্কার বই। একজনের জন্যই এক হাজার টাকার বই। নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহীর নওহাটা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া তাসনীমের চিৎকার। সে ছুটল মঞ্চে। বই পেয়ে বাইরে বেরিয়ে আবার সেলফি। আনন্দ আর আনন্দ। একজন অতিথি বললেন, আনন্দ না পেলে কেউ কিছু গ্রহণ করতে চায় না। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের উৎসবে শিক্ষার্থীরা সেই আনন্দের সন্ধান পেয়েছে।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এসেছিলেন দাদের মা-বাবাও। অভিভাবকদের বসার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে বসেই তাঁরা অধীর হয়ে অপেক্ষায় করছিলেন, কখন ছেলেমেয়েরা মিলনায়তনের ভেতর থেকে পুরস্কারের হাসি নিয়ে বের হয়ে আসবে।

আজ শুক্রবার রাজশাহীর ২ হাজার ২১২ জন শিক্ষার্থীকে এই পুরস্কার দিয়েছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও গ্রামীণফোন। প্রতিটি স্কুলের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের স্বাগত পুরস্কার, শুভেচ্ছা পুরস্কার, অভিনন্দন পুরস্কার ও সেরা পাঠক পুরস্কার—এই চার ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়। রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।

আয়োজকদের সূত্রে জানা যায়, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ৪৫ বছর ধরে সারা দেশে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের বই পড়ার অভ্যাস তৈরির জন্য নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। দেশভিত্তিক ‘উৎকর্ষ (বইপড়া) কার্যক্রম’ এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি। বর্তমানে সারা দেশে এই কর্মসূচির আওতায় প্রায় ১ হাজার ৭০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২ লাখ ছাত্রছাত্রী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বই পড়াকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে বিপুলসংখ্যক পুরস্কারের ব্যবস্থা।

২০২৩ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী মহানগরের ৫১টি স্কুলের প্রায় ৬ হাজার ছাত্রছাত্রী বই পড়া কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে। এদের মধ্যে মূল্যায়ন পর্বে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে, এমন ২ হাজার ২১২ জন ছাত্রছাত্রীর হাতে এই উৎসবে চারটি পর্বে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৬০ জন শিক্ষার্থী সরাসরি মঞ্চ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করে এবং ৫৫২ জন শিক্ষার্থীর পক্ষে সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষক পুরস্কার গ্রহণ করেন।

বই পড়ার পুরষ্কার পেয়ে সেলফিতে মেতেছে শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার দুপুরে রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

দিনব্যাপী পুরস্কার বিতরণ উৎসবে প্রথম পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের অন্যতম ট্রাস্টি ও অবসরপ্রাপ্ত সচিব আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া, বিশিষ্ট অভিনেতা ও লেখক খায়রুল আলম সবুজ, গ্রামীণফোনের সার্কেল মার্কেটিং হেড মো. শাহিনুর রহমান এবং বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন। এ ছাড়া অন্যান্য পর্বে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের নাটোর শাখার সংগঠক অধ্যাপক অলোক মৈত্র, কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক জুলফিকার মতিন, ঔপন্যাসিক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শহীদ ইকবাল, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোয়াজ্জেম হোসেন এবং সুজন-রাজশাহী জেলার সভাপতি ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র রাজশাহী শাখার সাবেক সংগঠক আহমেদ শফিউদ্দিন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, একটি উন্নত ও সুশৃঙ্খল জাতি গঠনে বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি সবাইকে বই পড়ার আহ্বান জানান।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ও অবসরপ্রাপ্ত সচিব আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, মানুষের জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে সুখ পাওয়া। এই সুখের জন্য একটি নৈতিক দেশ গঠন করতে হবে। এ জন্য নাগরিকদেরও নৈতিক ও মানবিক হয়ে উঠতে হবে। এর অন্তরায় হচ্ছে অশিক্ষা, কুসংস্কার ও কলহপ্রিয়তা। এগুলো দূর করার জন্য শিক্ষার প্রয়োজন। এ জন্যই বই পড়তে হবে। এর বিকল্প নেই। তবে আনন্দ না পেলে কেউ কিছু গ্রহণ করতে চায় না। এ জন্য বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এই বয়সী শিক্ষার্থীদের বেছে নিয়েছে। তিনি এর একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ডিম যেমন সেদ্ধ হয়ে গেলে তা দিয়ে আর বাচ্চা ফোটানো যায় না, এই জন্যই এই বয়সের শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হচ্ছে। যাতে তারা ভবিষ্যতে একটি নৈতিক কাঠামোর মধ্য থেকে জাতিসত্তা নির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারে।