রাজশাহী জেলার মানচিত্র |
প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহীর পুঠিয়ার হাড়োগাথী বিলে পুকুর খনন বন্ধে ৫২ কৃষক একত্র হয়েছেন। তাঁরা তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন বন্ধ করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জমা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁরা এই আবেদন জমা দেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তাঁরা পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একই আবেদন করেন।
কৃষকেরা তাঁদের আবেদনে উল্লেখ করছেন, তাঁরা পুঠিয়া উপজেলার হাড়োগাথী, খামারমাড়িয়া, বিলমাড়িয়া গ্রামের সাধারণ জনগণ। হাড়োগাথী গ্রামের বাজারের পূর্ব পাশে তিন ফসলি আবাদি জমির একটি মাঠ আছে। সেখানে বরেন্দ্র বহুমুখী সেচ প্রকল্পের আওতায় একটি গভীর নলকূপও আছে। হাড়োগাথী বিলের মধ্য দিয়ে বর্ষাকালে তিনটি বিলের পানি প্রবাহিত হয়। কিন্তু হাড়োগাথী বিলে ৩০ বিঘা জমিতে পুকুর খনন হচ্ছে। যেখানে পুকুর খনন হচ্ছে, তার পাশে দুটি কালভার্ট এবং একটি সেতু আছে। এমনকি খনন করা ওই পুকুরের মুখে রয়েছে চন্দ্রাবতী খালের সংযোগ। এই খালের মুখে পুকুর খনন হলে তিনটি গ্রামের বৃষ্টির পানি নামায় বাধা সৃষ্টি হবে।
কৃষকদের ওই আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, খালের মুখ দিয়ে বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় ওই এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। আর এ কারণে এই দুই শ বিঘা তিন ফসলি জমিতে ধান চাষসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করা সম্ভব হবে না। এতে তাঁরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজের মাধ্যমে জীবন যাপন করে থাকেন। যদি পুকুরটির খননকাজ বন্ধ করা না হয়, তবে ওই এলাকার জনগণকে মানবেতর জীবন যাপন করতে হবে। খননকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা প্রভাবশালী হওয়ায় জমির মালিকেরা এবং গ্রামবাসী বাধা দিলে তাঁরা বিভিন্ন ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হমকি দিচ্ছেন। অসহায় জমির মালিক ও গ্রামবাসী আর কোনো উপায় না পেয়ে জেলা প্রশাসকের শরণাপন্ন হয়েছেন।
উপজেলা কৃষি ও মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, পুঠিয়ায় ৯ হাজার ৬২৯ হেক্টর কৃষিজিমি। আর ১ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে ৭ হাজার ৭৬২টি পুকুর আছে। অধিকাংশ পুকুর কয়েক বছরে খনন করা হয়েছে। এসব পুকুর খনন করতে কৃষি বিভাগ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়নি। যদিও কৃষিজমি সুরক্ষা আইন-২০১৬ (খসড়া)-এর ৪(১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনোভাবেই কৃষিজমির ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। আর ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ আইনে কৃষিজমি, পাহাড় ও টিলার মাটি কেটে ইট তৈরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
২৪ এপ্রিল রাতেই পুঠিয়ার তিনটি স্থানে পুকুর খনন বন্ধে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে তিনজনকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করে।
ফসলি জমি রক্ষার দাবিতে ৫২ জন কৃষকের স্বাক্ষর নিয়ে হাড়োগাথী গ্রামের কৃষক সাখাওয়াত হোসেন, সবুজ আলী, জোবাইদুল ইসলাম জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জমা দেন। জোবাইদুল বলেন, ওই পুকুর খনন হলে গ্রামের ধানি জমিতে আর ফসল হবে না। কারণ পানি আর খালে নামতে পারবে না। অনেকের বাড়িতেও পানি উঠবে।
তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। তিনি সভায় আছেন। জেলা প্রশাসকের ই-সেবা শাখায় আবেদনটি নেওয়া হয়েছে।