নির্বাচন কমিশন ভবন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, দেখে নেওয়ার হুমকি, সংঘর্ষ–ভাঙচুরসহ নানা অনিয়মের ঘটনা দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচারেও দেখা গেছে। এরপরও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আশা, দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রথম ধাপের চেয়ে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে।

দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার গতকাল রোববার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। শেষ দিনেও বিভিন্ন স্থানে প্রতিপক্ষকে হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার গোলকপুর বাজারে কাছাকাছি সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী সমাবেশ ডাকার পর সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়। স্থানীয় প্রশাসন শেষ পর্যন্ত কাউকেই সমাবেশ করতে দেয়নি।

আগামীকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় ধাপে দেশের ১৫৬ উপজেলা পরিষদে ভোট গ্রহণ করা হবে। এই নির্বাচন বর্জন করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি। ফলে অনেকটা একতরফা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন। বেশির ভাগ উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নেতারাই। তবে তারপরও দ্বন্দ্ব–সংঘাতের ঘটনা ঘটছে।

তবে দলীয়ভাবে বর্জন করলেও দ্বিতীয় ধাপেও বিএনপির বর্তমান ও সাবেক নেতাদের মধ্যে অন্তত ৬৬ জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী আছেন ২৯ জন। ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আছেন ২০ জন; আর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ১৭ জন। এর আগে প্রথম ধাপের নির্বাচনে চেয়ার‍ম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান—এই তিন পদ মিলিয়ে বিএনপির সাবেক ও বর্তমান ৮০ জন নেতা প্রার্থী হন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন ২৭। তাঁদের মধ্যে ৭ জন নির্বাচিত হয়েছেন।

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ভোট গ্রহণ করা হয় ৮ মে। ভোটের পর সহিংসতার বিভিন্ন ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনী প্রচারেও বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্ন সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচন কমিশন জানায়, দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬টি উপজেলার মধ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হবে ২৪ উপজেলায়।

হামলা–সংঘর্ষ
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বেরুলি বাজার এলাকায় গত শনিবার রাতে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর দুই কর্মীকে হাতুড়িপেটা করা হয়েছে।

বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ। এখানে আরও প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হাকিম। উপজেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

দলীয় সূত্র বলছে, শনিবার রাতে উপজেলার সোনাপুর বাজারে আবুল কালাম আজাদের পথসভা হয়। এই পথসভায় যোগ দিতে আজাদের সমর্থক আবদুস সালাম ও জাহাঙ্গীর হোসেন ভ্যানে করে যাচ্ছিলেন। বেরুলি বাজার এলাকায় পৌঁছানোর পর তাঁদের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা সালাম ও জাহাঙ্গীরকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পালিয়ে যায়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সৌরভ শিকদার বলেন, একজনের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে। আরেকজনের বাঁ হাতে আঘাতের চিহ্ন আছে। হাতুড়ির আঘাতে এমনটি হয়ে থাকতে পারে।

চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, নির্বাচনকে অস্থিতিশীল করতে তাঁর কর্মীদের ওপর বারবার হামলা করা হচ্ছে।

শনিবার রাতের ঘটনার বিষয়ে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী এহসানুল হাকিমের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছে । কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।

হামলাকারীদের শনাক্ত করতে পুলিশ কাজ করছে বলে জানান বালিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন।

গত শনিবার রাতে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলাতেও একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর বৈঠকে হামলা হয়েছে। এ সময় দুটি গাড়ি, প্রচারকাজে ব্যবহৃত একটি মাইক ও বেশ কিছু চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। শনিবার রাত আটটার দিকে উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের ব্রাহ্মণকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর চেয়ারম্যান প্রার্থী মোখলেছুর রহমানের নেতৃত্বে তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষোভ মিছিল করেন।

মোখলেছুর রহমানের দাবি, ফরিদপুর–৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান ওরফে নিক্সন চৌধুরীর সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী কাওছার ভূঁইয়ার লোকজন এই হামলা চালিয়েছেন।

তবে কাওছার ভূঁইয়া দাবি করেন, মোখলেছুরের অভিযোগ ঠিক নয়। ওই সময় তাঁর কোনো সমর্থক ওই এলাকায় ছিলেন না।

এ বিষয়ে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন আল রশিদ বলেন, শনিবার রাতে মোখলেছুর রহমানের উঠান বৈঠকে ৩০-৪০ জন লোক হামলা চালিয়েছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।

নির্বাচনী বিরোধকে কেন্দ্র করে মেহেরপুরের মুজিবনগরে আওয়ামী লীগের এক নেতার সাড়ে আট বিঘা জমির অসংখ্য ফলের গাছ ও ফসল নষ্ট করেছে দুর্বৃত্তরা। গত শনিবার রাতে উপজেলার মহাজনপুর ইউনিয়নের নীলজাবার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

যাঁর জমির ফসল নষ্ট করা হয়েছে, তিনি মহাজনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম মোস্তফা। তিনি অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যান প্রার্থী আমাম হোসেনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছেন। যে কারণে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন তিনি।

‘এখনই বলা যাবে না’
৮ মে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের এক সপ্তাহ পর গোপালগঞ্জে সহিংসতায় এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত এ ঘটনার মূল কারণ বলা যাবে না। এটা নির্বাচনী সহিংসতা, নাকি পারিবারিক দলাদলি থেকে হয়েছে—সে বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত দেওয়া যাবে না। গতকাল নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন মো. আলমগীর।

দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন প্রথম ধাপের চেয়ে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে—এমন আশা প্রকাশ করেন মো. আলমগীর। তিনি বলেন, ভোটাররা যাতে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন এবং বাধাহীনভাবে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, দ্বিতীয় ধাপে ভোটের হার কেমন হবে, তা আগে থেকে বলা যাবে না। পরিবেশ যদি ভালো থাকে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে ভোটাররা আগ্রহী হতে পারেন। তবে যেহেতু সব দল অংশ নিচ্ছে না, তাই ভোটের হার নিয়ে আগাম বলা যাবে না।