রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় | ফাইল ছবি |
প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আবদুল লতিফ হলে প্রাধ্যক্ষের কক্ষে ৪৮ ঘণ্টা ধরে তালা ঝুলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানালেও এখন পর্যন্ত তালা খোলার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গত সোমবার দুপুরে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে হলগেটে তালা দিয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠে। সেদিন থেকেই প্রাধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলছে। হল প্রশাসনের অভিযোগ, ছাত্রলীগ এই তালা লাগিয়েছে।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক ও নবাব আবদুল লতিফ হলের প্রাধ্যক্ষ এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান আজ বুধবার দুপুরে বলেন, তিনি সোমবার থেকে আর হলে যাননি। তাঁর কক্ষে এখনো তালা ঝুলছে। কার্যত হলে কোনো কার্যক্রম চলছে না। শিক্ষার্থীদের জরুরি কাজগুলো তিনি বাসায় বসে করছেন। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। তিনি বিষয়টি তাদের বলেছেন।
হল সূত্রে জানা যায়, সোমবার নবাব আবদুল লতিফ হলে বেলা দেড়টার দিকে এক ছাত্রলীগকর্মী খাবারে সিগারেটের টুকরা পান বলে অভিযোগ করেন। এরপর হলগেটে তালা লাগিয়ে প্রাধ্যক্ষের কক্ষও তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় হল প্রাধ্যক্ষের কক্ষের নামফলক এবং তালা ভেঙে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া হলের একটি সিসিটিভি ক্যামেরা, একটি ঘড়ি, নোটিশ বোর্ড ও অতিথিদের কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। দুপুরে গিয়ে প্রাধ্যক্ষ হলে প্রবেশ করতে পারেননি। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলমসহ একজন সহকারী প্রক্টর আসেন। এ সময় তাঁদেরও হলের মধ্যে আটকে দেওয়া হয়। পরে বেলা তিনটার দিকে হলগেটের তালা খুলে দেওয়া হয়।
হল প্রাধ্যক্ষ এ এইচ এম মাহবুবুর রহমানের অভিযোগ, ছাত্রলীগের নেতাদের ২০টি জার্সি না দেওয়ায় তাঁরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আন্দোলন করে হলে ভাঙচুর চালিয়েছেন। তবে ছাত্রলীগের নেতারা এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। এ ঘটনায় সেদিন রাতেই এক জরুরি সভায় প্রাধ্যক্ষ পরিষদ ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে মামলারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
এ ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক অনীক কৃষ্ণ কর্মকারকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটির অন্যরা হলেন আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল কাদের, মেজবাউল সালেহীন ও হল সুপারভাইজার ইলিয়াস হোসেন। তাঁদের তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তবে হলের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কমিটি কাজ শুরু করেনি।
হল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, লতিফ হলে ভাঙচুরের সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান হোসেন, হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি তাসকিফ আল তৌহিদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুর রহমানকে দেখা গেছে। তাঁরা হলের প্রধান ফটকে লাল কাপড় টাঙিয়ে ও গেটে তালা দিয়ে অবস্থান নেন। পরে তাঁরা প্রাধ্যক্ষের কক্ষের তালা ভেঙে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেন।
হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি তাসকিফ আল তৌহিদ হল গেট ও প্রাধ্যক্ষের কক্ষে তালা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। বুধবার দুপুরে তিনি বলেন, এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছিল। তাঁরা এর সঙ্গে জড়িত নন। তাঁরা তালা দেননি, ভাঙচুরও করেননি। তিনি আরও বলেন, ‘শুনেছি আজও তালা রয়েছে। প্রাধ্যক্ষও আর আসেননি।’
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব হলের প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে এক জরুরি সভায় বসে। সেখানে প্রাধ্যক্ষরা হলের চলমান সমস্যাগুলো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ছাত্রলীগের কারণে তাঁরা হলে তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। অনেক সময় তাঁদের হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। সবশেষ নবাব আবদুল লতিফ হলের প্রাধ্যক্ষ হেনস্থার শিকার হন। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিলে তাঁরা একযোগে পদত্যাগের হুঁশিয়ারি দেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরে সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গেও বসেছিল।
আজ দুপুরে নবাব আবদুল লতিফ হলে গিয়ে দেখা যায়, হলের কর্মচারীরা হল গেটে এক জায়গায় বসে আছেন। তাঁরা জানান, হলে প্রাধ্যক্ষ নেই, তাই তেমন কোনো কাজ নেই।