ফিলিস্তিন সংহতি কমিটির উদ্যোগে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে নারী ও শিশু সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা, ৩ মে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের গণহত্যা, ধর্ষণ ও দখলদারত্বের প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকায় ‘নারী ও শিশু সংহতি সমাবেশ’ করেছে ফিলিস্তিন সংহতি কমিটি, বাংলাদেশ।

শুক্রবার বিকেলে শাহবাগে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের বন্ধুরা (মানুষ) প্রাণপণ লড়াই করছেন। সে লড়াই বিচ্ছিন্ন কোনো লড়াই নয়। সে লড়াই আমাদেরও লড়াই। এ লড়াই সারা পৃথিবীর মানুষের লড়াই।’

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ফিলিস্তিন সংহতি কমিটির আহ্বায়ক। সংহতি সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনে যা ঘটছে, তা সামান্য নয়। ফিলিস্তিনের শিশু, নারীর যে আর্তনাদ, কান্না; তা সারা বিশ্বের বিপন্ন আর্তমানুষের কান্না, চিৎকার। ফিলিস্তিন হচ্ছে বিপন্ন, নিপীড়িত মানুষের বাসভূমি। ফিলিস্তিনে ইসরায়েল যা করছে, তা মানবসভ্যতা ও মনুষ্যত্বকে ধ্বংস করার কাজ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ফিলিস্তিনের মানুষের ওপর ইসরায়েলের আগ্রাসনের কারণে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিশ্বব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হিটলারের সঙ্গে তুলনা করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, হিটলার সারা পৃথিবীকে গ্রাস করতে চেয়েছিল। পরে হিটলার আত্মহত্যা করেছে। তারপর আশা করা হয়েছিল যে পৃথিবীতে হিটলার আর আসবে না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, বড় হিটলার চলে গেছে, ছোট ছোট হিটলার পৃথিবীজুড়ে দেখা দিয়েছে। পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থা হিটলারকে জন্ম দিয়েছিল, যা এখনো বিদ্যমান। সে জন্যই নতুন নতুন হিটলার আসছে। হিটলার ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হলে ব্যক্তিমালিকানার জায়গায় সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
ফিলিস্তিনের বর্তমান চিত্র তুলে ধরতে সমাবেশ মঞ্চের কাছে রাখা হয় প্রতীকী লাশ ও রক্তাক্ত জামা। এ ছাড়া মঞ্চের পাশে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘স্টপ জেনোসাইড’ (গণহত্যা বন্ধ করো) এবং ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ (ফিলিস্তিন স্বাধীন করো)।

সমাবেশ চলার ফাঁকে ফাঁকে ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষের সমর্থনে গান ও আবৃত্তি শোনান শিল্পীরা। তাঁদের কারও গলায়, কারও হাতে ঝুলছিল পোস্টার–প্ল্যাকার্ড। সেসব পোস্টারে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী মানুষের প্রতি সংহতি জানানোর পাশাপাশি ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধের দাবি তোলা হয়। সমাবেশ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মঞ্চের সামনে ছিল এক দল শিশু। তারা রং-তুলির আঁচড়ে ফিলিস্তিনের শিশুদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে।

সমাবেশে অংশ নেওয়া অনেকের হাতেও ছিল পোস্টার–প্ল্যাকার্ড। এসব পোস্টারের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতার দাবি জানানো হয়।

এই সংহতি সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো যে মানবতা ও গণতন্ত্রের কথা বলে, ফিলিস্তিনে ধ্বংসযজ্ঞের মধ্য দিয়ে তা চুরমার হয়ে গেছে।

সমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ফিলিস্তিন সংহতি কমিটির সদস্য তাহেরা বেগম। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ইসরায়েল ফিলিস্তিনে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, তার পেছনে মদদদাতাদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ পশ্চিমা দেশগুলো।

ঘোষণাপত্রে সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফিলিস্তিনি শিশু ও নারীসহ ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধ করা; ফিলিস্তিনিদের জন্য আশ্রয়, খাদ্য, পানীয়, চিকিৎসাসামগ্রী ও জ্বালানি নিশ্চিত করা; যুক্তরাষ্ট্রসহ সব দেশের অস্ত্র সরবরাহে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা প্রভৃতি।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত ফিলিস্তিনের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম কিশকো। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সমর্থন জানাতে সমাবেশে আসা সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

ইব্রাহিম কিশকো বলেন, গাজা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ থেকে আরও খারাপ হচ্ছে। ফিলিস্তিনের মানুষের জন্য প্রার্থনা করা এবং তাঁদের পক্ষে বিশ্বজুড়ে আওয়াজ তোলার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সমাবেশে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আইনুন নাহার, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহসভাপতি রেখা চৌধুরী, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী রূপসী চাকমা, ভাসানী নারী মুক্তি পরিষদের আহ্বায়ক সোনিয়া আকতার প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ফিলিস্তিন সংহতি কমিটির সদস্য হারুন-অর-রশিদ।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, শিল্পী অরূপ রাহী প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে ফিলিস্তিনের মানুষের পক্ষে এবং ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মিছিল বের করা হয়। এই মিছিল শাহবাগ থেকে কাঁটাবন ও টিএসসি যায়। সমাবেশ ও মিছিলে কয়েক শ নারী ও শিশু অংশ নেয়।