জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিহত দুই নারীর স্বজনদের আহাজারি। আজ দুপুরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রী ও খালাশাশুড়িকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আরও একজন আহত হয়েছেন। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার হলহলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজন হলেন মৌ আক্তার (২৫) ও তাঁর খালা আলেয়া বেগম (৬৫)। মৌ ওই এলাকার রুবেল হোসেনের স্ত্রী এবং আলেয়া বেগম মো. সোলায়মানের স্ত্রী। ছুরিকাঘাতে আহত নীরব হোসেন (২২) আলেয়া বেগমের ছেলে। তাঁকে জয়পুরহাট ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অভিযুক্ত রুবেল হোসেন ঘটনার পরপরই বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন।
লাশ দুটি আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। পুলিশ লাশের সুরতহাল তৈরি করেছে। নিহত একজনের পুরো শরীর ছুরিকাঘাতে ক্ষতবিক্ষত এবং অপরজনের পেটে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে বলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাকসুদুল আলম আকন্দ জানিয়েছেন।
পুলিশ, নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, ১০ থেকে ১২ বছর আগে হলহলিয়া গ্রামের মৌ আক্তারের সঙ্গে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের রুবেল হোসেনের বিয়ে হয়। তাঁদের আট বছরের এক মেয়ে রয়েছে। মৌয়ের মা কমলা বেগম সাত বছর আগে গৃহপরিচারিকা হিসেবে সৌদি আরব গেছেন। কমলা বেগম তাঁর মেয়েকে হলহলিয়া গ্রামে জমি কিনে বাড়ি করে দিয়েছেন। পাঁচ বছর ধরে মেয়ে মৌ ও জামাতা রুবেল হলহলিয়া গ্রামে বসবাস করছেন।
কমলা বেগম সৌদি আরব থেকে মেয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে টাকা পাঠাতেন। এ টাকায় মৌ আক্তার সংসারের খরচ চালানোর পাশাপাশি সঞ্চয় করছিলেন। এক সপ্তাহ আগে কমলা বেগম সর্বশেষ তাঁর মেয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠান। আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রুবেল তাঁর স্ত্রী মৌয়ের কাছে শাশুড়ির বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা চান। মৌ তাঁর স্বামীকে টাকা দিতে চাননি। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। রুবেল ঘর থেকে ছুরি এনে তাঁর স্ত্রী মৌয়ের পুরো শরীরে আঘাত করেন। মৌয়ের চিৎকার শুনে তাঁর খালা আলেয়া বেগম ছুটে এলে রুবেল তাঁর পেটেও ছুরিকাঘাত করেন। তখন আলেয়ার ছেলে নীরব হোসেন তাঁর মা ও খালাতো বোনকে বাঁচাতে গেলে তাঁর হাতে ছুরিকাঘাত করে রুবেল পালিয়ে যান।
গ্রামবাসী এসে রুবেলের স্ত্রী মৌ আক্তার, তাঁর খালা আলেয়া বেগম ও নীরবকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাকসুদুল আলম আলেয়া বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন। মুমূর্ষু অবস্থায় মৌকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। তবে পথেই মৌ আক্তার মারা যান। নিহত আলেয়া বেগমের ছেলে নীরব হোসেনকে জয়পুরহাট ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। নীরব সেখানে চিকিৎসাধীন।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নয়ন হোসেন বলেন, স্ত্রী ও খালাশাশুড়িকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর রুবেল হোসেন পালিয়েছেন। পুলিশ তাঁকে ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করেছে।