বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস |
নিজস্ব প্রতিবেদক: এখন সময় ইন্টারনেট আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্ত থাকার। এ দুয়ের কারণে যেকোনও ব্যক্তি কনটেন্ট প্রডিউসার হয়ে উঠছেন। নিজের কনটেন্ট মূলধারার মিডিয়ার মতোই হাজির করা যাচ্ছে। নেই কোনও সম্পাদকীয় গেটকিপিং বা ফিল্টারিং এবং মানুষ তা যাচাই-বাছাই ছাড়াই বিশ্বাস করছে। একইসঙ্গে আরও দ্রুতগতিতে শেয়ার করে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
কেন সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্য এরকম ছড়িয়ে পড়ছে এবং কেনই বা মানুষ তা বিনা দ্বিধায় মেনে নিচ্ছেন? যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও সমাজবিজ্ঞানীদের দাবি—জনজীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মূলধারার গণমাধ্যম তাদের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করতে পারছে না। ফলে মানুষ নিজের মতো করে তথ্য তৈরি করছে এবং সুবিধামতো ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি করছে। সারা বিশ্বে আজ তাই অপতথ্য মোকাবিলা একটি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘মিসইনফরমেশন’ ও ‘ডিসইনফরমেশন’ মোকাবিলা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে অভিযোগ করে গণমাধ্যমকর্মীরা বলছেন, মিসইনফরমেশন হচ্ছে অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনও ভুল তথ্য প্রচার করা। সেটা সতর্ক থেকে মোকাবিলা করা যায়, কিন্তু প্রযুক্তি ব্যবহার করে ‘ডিসইনফরমেশন’-এর যে ভয়াবহতা, তার পেছনে খারাপ উদ্দেশ্য থাকে। যিনি ছড়াচ্ছেন তার উদ্দেশ্যই থাকে মানুষকে বিভ্রান্ত করা। এটা মোকাবিলা সহজ নয়। ফলে মুক্ত গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা চর্চায় এ পরিস্থিতি অন্তরায় হয়ে উঠেছে। অপতথ্য ও অর্ধসত্যের মধ্যে মুক্ত গণমাধ্যম এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
মিডিয়া ওয়াচডগ রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে সর্বশেষ বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলছে, ৭০ ভাগ দেশে সাংবাদিকতার পরিবেশ ‘খারাপ’ এবং মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য সবচেয়ে সংকটজনক পরিবেশ হলো এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে। এ পরিস্থিতিতে আজ ৩ মে ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’ পালিত হচ্ছে। ইউনেস্কোর মতে, অবাধ, মুক্তচিন্তা এবং মতপ্রকাশের অধিকার হচ্ছে মানবাধিকারের মূল কথা। মুক্ত সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের দাবিতে সারা বিশ্বে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হয়ে থাকে।
১৯৯১ সালে ইউনেস্কোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশ অনুযায়ী, ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ৩ মে ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে’র (বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস) স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপর থেকে সাংবাদিকরা দিবসটি পালন করে আসছেন। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো—‘পরিবেশগত সংকটের মুখোমুখি সাংবাদিকতা’।
যখন কিনা কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে সবার হাতে, সেসময় গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য বাড়তি মনোযোগ দরকার কিনা, প্রশ্নে গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ‘নিজের ভূমিকার প্রতি গণমাধ্যমকর্মীদের আস্থা রাখা দরকার। গণমাধ্যমের কর্মকাণ্ড নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব আমাদের নিজেদেরই। পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে নাগরিক সমাজের নানা সংগঠন আছে—যারা গণমাধ্যম আক্রমণ হলে, বিপদে পড়লে তাদের পাশে দাঁড়ায়। এ দেশে তেমন সংহতির খুব অভাব।’ গণমাধ্যম কখনও মুক্ত ছিল কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘কোনও না কোনও চাপ আছে বলেই যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ‘প্রেসার অন মিডিয়া’ যুগ যুগ ধরে বড় আলোচনায়। বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতেই লড়াইটা জারি রাখতে হয়।’’
এদিকে বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ২০২৪’ উপলক্ষে ‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিবেশগত সংকটের প্রেক্ষাপটে মুক্ত গণমাধ্যম এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, ‘রিপোর্টিংয়ের সততা থাকতে হবে। যেকোনও ধরনের সমালোচনাকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে মিথ্যাচারকে নয়। সরকারের কার্যক্রম নিয়ে যেকোনও সমালোচনা যে কেউ করতে পারে। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে যখন ধারাবাহিক মিথ্যাচার করা হয়, তখন প্রশ্ন ওঠে। সবাইকে আমরা স্বাগত জানাই, যারা বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করতে চায়।’
পুঁজিবাদী জামানায় গণমাধ্যম কখনও মুক্ত ছিল কিনা প্রশ্নের জবাবে ডিবিসি টেলিভিশনের সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু বলেন, ‘এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর হলো, না। গণমাধ্যম বলতে আমরা যা বুঝি, তা কখনোই মুক্ত ছিল না। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে এখানকার গণমাধ্যম জাতীয়তাবাদী ভূমিকায় রাষ্ট্র সৃষ্টির পক্ষে গণমানুষের হয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের গণমাধ্যম পুঁজিবাদ কাঠামোর মধ্যে থেকে কিছুটা গণমাধ্যম হওয়ার চেষ্টা করে গেছে। কিন্তু বর্তমানে অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে যে বড় বড় করপোরেট গ্রুপগুলো আর রাষ্ট্রশক্তির স্বার্থের মধ্যে থেকেই কাজটা করে যেতে হচ্ছে। যতটুকু না করলে বাজারে টেকা যাবে না ততটুকুই করছে।’