ম্যাচ শেষে জিম্বাবুয়ের খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন তানজিদ তামিম। ৪৭ বলে ৬৭ রানে অপরাজিত ছিলেন এই ওপেনার | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ক্রীড়া প্রতিবেদক: আজ দুপুরে চট্টগ্রাম শহরের এক রেস্তোরাঁয় দুই বিদেশির সঙ্গে দেখা। দুজনই যাবেন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। পাশের টেবিলে বসে দুজনের কথাবার্তা শুনে যা মনে হলো, ক্রিকেটের সঙ্গে তাঁদের পরিচয় নেই বললেই চলে।

কিন্তু শুক্রবারের বিকেল-সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে বিনোদনের কিছু খুঁজে না পেয়ে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের প্রথম টি-টোয়েন্টি দেখতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন দুজন। তার আগে গুগলে একজন আরেকজনকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের পাঠ পড়ে শোনাচ্ছিলেন—২০ ওভারের খেলা, প্রতি দলে ১১ জন খেলোয়াড়। টি-টোয়েন্টিকে ক্রিকেটের অন্য দুই সংস্করণ ওয়ানডে ও টেস্টের চেয়ে রোমাঞ্চকর ও জনপ্রিয় বলেও জানাল গুগল। 

কিন্তু যে ম্যাচ নিয়ে দুই বিদেশির আগ্রহ, সেই খেলাটা হলো একেবারেই ম্যাড়মেড়ে। বৃষ্টি বাধা দিল দফায় দফায়। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণের যে চিরন্তন এই রূপের সঙ্গে সবাই পরিচিত, সেটিও দেখা গেল না। বাংলাদেশের আমন্ত্রণে আগে ব্যাট করা জিম্বাবুয়ে ১ উইকেট হারিয়ে ৩৬ রান করলেও এরপর ৫ রান তুলতেই হারিয়ে ফেলে ৬ উইকেট! রান আউট, বাজে ব্যাটিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো বোলিংয়ে ৭.৪ ওভারে জিম্বাবুয়ের রান ৭ উইকেটে ৪১! ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে ক্লাইভ মানদান্দে ও ওয়েলিংটন মাসাকাদজা অষ্টম উইকেট জুটিতে ৬৫ বলে ৭৫ রান যোগ করলে জিম্বাবুয়ের রান গিয়ে দাঁড়ায় ১২৪-এ। এই ম্যাচেই অভিষিক্ত তানজিদ হাসানের অর্ধশতকে বাংলাদেশ যা টপকে গেছে সহজেই। ৮ উইকেটের বড় জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে শুরুটাই হয়েছে দুর্দান্ত।

নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট নিয়েছেন অফ স্পিনার শেখ মেহেদী হাসান। পরে উইকেট নিয়েছেন আরও একটি। তবে মেঘলা আকাশ আর সবুজ উইকেটে পেসারদের জন্যই বেশি সাহায্য ছিল। তাসকিন আহমেদ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ৩টি করে উইকেট তার প্রমাণ। একই সুবিধাটা জিম্বাবুয়ের ব্লেসিং মুজারাবানিরও পাওয়ার কথা। সেটি কাজে লাগিয়ে নিজের ওভারের দ্বিতীয় বলেই লিটন দাসের স্টাম্প উড়িয়েছেন। ৩ বল খেলে ১ রান করে আউট হয়েছেন লিটন।

মুজারাবানির পরের ওভারে আউট হতে পারতেন আরেক ওপেনার তানজিদ হাসানও। নিজের বলে তানজিদের ক্যাচ ধরতে পারেননি মুজারাবানি, একই ওভারে কাভারে তানজিদের ক্যাচ ফেলেছেন ব্রায়ান বেনেট। ৩ ও ৪ রানে দুই জীবন পাওয়া সেই তানজিদই ভুগিয়েছেন জিম্বাবুয়েকে। চার-ছক্কায় তিনিই বাংলাদেশের রান বাড়িয়েছেন। দুই দফা বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার পরও বাংলাদেশকে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে এগিয়ে রেখেছেন তানজিদ। তিনে নামা নাজমুল হোসেন আরেক প্রান্ত থেকে খেলছিলেন এক-দুই রানে। দ্বিতীয় দফা বৃষ্টির পর অষ্টম ওভারে এসে প্রথম বাউন্ডারির দেখা পেয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

দুই বাঁহাতি ক্রিজে থাকায় জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক সিকান্দার রাজা নিজেই বোলিং এসেছেন, আরেক প্রান্ত থেকে বল তুলে দিয়েছেন বেনেটের হাতে। তবে রানরেটের চাপ না থাকায় ব্যাটের প্রতাপ দেখানোর দরকার ছিল না। দুজনই খেলছিলেন স্বচ্ছন্দে। দশম ওভারে এসে ভুলটা করেন নাজমুল। লুক জঙ্গুয়ের প্রথম ওভারে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হয়ে যান। ২৪ বলে এক বাউন্ডারিতে ২১ রানে থামে নাজমুলের ইনিংস। বাংলাদেশের রান তখন ৯.২ ওভারে ২ উইকেটে ৫৭ রান। যদিও জয়ের জন্য ৬৪ বলে ৬৮ রান দূরের লক্ষ্য মনে হচ্ছিল না। ক্রিজে টিকে থাকলেই জয় নিশ্চিত।  

তানজিদ অবশ্য শুধু টিকে থাকলেন না, ঝড়ের বেগে বাকি কাজটা শেষ করেছেন। ৩৬ বলে অর্ধশত করে অভিষেক টি-টোয়েন্টি ম্যাচটা স্মরণীয় করে রাখলেন এই বাঁহাতি। এই কীর্তিতে তিনি জুনায়েদ সিদ্দিকীর পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান। বিশ্বকাপের বিকল্প ওপেনারের অডিশনেও ইতিবাচক ছাপ রেখে গেলেন।

শেষ পর্যন্ত ৪৭ বলে ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৭ রানে অপরাজিত, স্ট্রাইক রেট ১৪২। তাওহিদ হৃদয় এসে তানজিদের কাজটা আরেকটু সহজ করেছেন। ১৮ বলে করেছেন অপরাজিত ৩৩ রান, ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৮৩ স্ট্রাইক রেট। দুজনের সৌজন্যে খেলাটা শেষ হয়ে যায় ২৮ বল আগেই। প্রশ্নাতীত আধিপত্য একেই বলে! 

 জিম্বাবুয়ে: ২০ ওভারে ১২৪
বাংলাদেশ: ১৫.২ ওভারে ১২৬/২
ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী