এ কিউ এম ডিসেন্ট আহম্মেদ | ছবি: সংগৃহীত

প্রতিনিধি বগুড়া: বগুড়ার গাবতলীতে সড়কের পাশে গাছ কাটার অভিযোগে করা মামলায় এ কিউ এম ডিসেন্ট আহম্মেদ ওরফে সুমন (৩৯) নামের এক বিএনপি নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিকেলে আদালতের নির্দেশে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

ডিসেন্ট আহম্মেদ গাবতলী উপজেলার কালুডাঙ্গা গ্রামের হারুনুর রশিদের ছেলে ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ তাঁকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গাবতলীর নেপালতলী ইউনিয়নের কালুডাঙ্গা-ভিটাপাড়া সড়কের পাশে লাগানো সরকারি ১০টি আমগাছ কাটেন বিএনপি নেতা ডিসেন্ট আহম্মেদের নেতৃত্বে অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জন। দা, কুড়াল, করাতসহ ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁরা গাছগুলো কাটেন। পরে গাছের কাণ্ড ও ডাল চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন বাধা দেন। এ সময় অভিযুক্ত বিএনপি নেতা ও তাঁর সহযোগীরা তাঁদের ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে গাছ রেখে চলে যান।

এজাহারে কেটে ফেলা গাছের আনুমানিক মূল্য ১০ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। নেপালতলী ইউনিয়নের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বাদী হয়ে ডিসেন্ট আহম্মেদের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। পুলিশ কেটে ফেলা গাছ জব্দ করেছে। তবে পারিবারিক ও রাজনৈতিক বিরোধের জেরে ব্যক্তিগত গাছ সরকারি দেখিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিসেন্ট আহম্মেদের চাচাতো ভাই মশিউর রহমান কয়েক বছর আগে কালুডাঙ্গা-ভিটাপাড়া সড়কের পাশে বেশ কিছু আমগাছ লাগান। ওই গাছের কারণে সড়ক দিয়ে বড় কোনো গাড়ি ঢুকতে পারত না। সম্প্রতি কালুডাঙ্গা-ভিটাপাড়া সড়কের ৩৮০ মিটার অংশ কার্পেটিং করতে দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজটি পায় মেসার্স মাহি ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দরপত্র অনুযায়ী ৮ ফুট মূল সড়কে কার্পেটিংয়ের পাশাপাশি দুই পাশে ৩ ফুট করে ৬ ফুট মাটি ভরাট করার কথা। কিন্তু সড়কের দুই পাশে আমগাছ থাকায় ঠিকাদার মাটি ভরাট করতে পারছিলেন না।

সূত্র জানায়, বিএনপি নেতা ডিসেন্ট আহম্মেদ গ্রামে বহুতল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। মাঝেমধ্যে ঢাকা থেকে গাড়ি নিয়ে বাড়িতে আসেন। এ জন্য সড়ক প্রশস্তকরণের পক্ষে ছিলেন তিনি। ঠিকাদার দরপত্র অনুযায়ী কাজ করতে না পারায় চাচাতো ভাইয়ের লাগানো সড়কের পাশের আমগাছ স্থানীয় কিছু লোক নিয়ে তিনি কেটে ফেলেন। প্রবাসে থাকা চাচাতো ভাই গাছ কাটার বিষয়টি জানতে পেরে ভাইকে শায়েস্তা করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ-যুবলীগ নেতাদের সহযোগিতায় সরকারি গাছ কাটার মামলায় ফাঁসানোর সুযোগ নেন। মামলার সাক্ষীও হয়েছেন মশিউরের স্ত্রী শামিমা আকতার।

শামিমা আকতার বলেন, ২০-২৫ বছর আগে শ্বশুরের জায়গায় তাঁর স্বামী গাছগুলো লাগান। গাছে এবার প্রচুর আম ধরেছিল। গাছের কারণে চাচাতো দেবরের গাড়ি নিয়ে বাড়িতে যাতায়াত করতে সমস্যা হয়েছিল। এ নিয়ে আগে থেকেই পারিবারিক দ্বন্দ্ব ছিল। তিনি লোকজন নিয়ে হিংসাত্মকভাবে গাছগুলো কেটেছেন। এ নিয়ে থানায় মামলা দিতে গেলে ভূমি কার্যালয়ের লোক গাছগুলো সরকারি দাবি করে তাঁরা বাদী হয়ে মামলা করেন এবং তাঁকে সাক্ষী করেন।

মামলার বাদী আনিসুর রহমান বলেন, সড়কের জায়গা মেপে দেখা গেছে, গাছগুলো সড়কের সীমানায় লাগানো। সরকারি গাছ কাটা অপরাধ। সড়ক সম্প্রসারণের প্রয়োজন হলে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে গাছ কাটা যেত। কিন্তু বিএনপি নেতা বেআইনিভাবে সরকারি গাছ কেটেছেন। এ জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে থানায় মামলা করেছেন।

বিএনপির নেতার ভাই কলেজশিক্ষক মারুফ আহম্মেদ বলেন, সড়কটি এমনিতেই সরু। সড়ক সম্প্রসারণে গোটা গ্রামের লোকজন একজোট। গাছের কারণে ঠিকাদার সম্প্রসারণ করতে পারছিলেন না। এ জন্য গ্রামের লোক একজোট হয়ে দুই পাশের আমগাছ কেটে ফেলেন। গাছের মালিক তাঁর চাচাতো ভাই। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় মালিকানা সরকারি দেখিয়ে তাঁর ভাইকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে এনেছে পুলিশ।