পুলিশের সিটি এসবির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রফিকুল ইসলাম শিমুল | ছবি: সংগৃহীত |
নিজস্ব প্রতিবেদক: পুলিশের স্পোশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে রফিকুল ইসলাম চাকরি করে কী পরিমাণ বেতন-ভাতা পেয়েছেন তার তথ্য চেয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শককে চিঠি দিয়েছেন।
সোমবার দুদক থেকে এ চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে রফিকুল ইসলামের চাকরি মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় হয়েছে কিনা তার তথ্য চাওয়া হয়। আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তথ্য দুদকে পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়।
দুদকের উপপরিচালক মোহা. নূরুল হুদা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, পাবনার পুলিশ সুপার (এসপি) বর্তমানে সিটি এসবির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রফিকুল ইসলাম শিমুল ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করে চাকরিতে প্রবেশ করে অবৈধভাবে নিজ ও আত্মীয়-স্বজনের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার চাকরিতে যোগদানের তারিখ, পদবি, বিপি নম্বর এবং চাকরিতে যোগদানের পর থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত অর্থ বছর ভিত্তিক বেতন-ভাতার পরিমাণ ও এ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি প্রয়োজন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগে কততম বিসিএস’র মাধ্যমে যোগদান করেন এবং কোনো বিশেষ কোটায় চাকরি পেয়েছেন কিনা তার রেকর্ডপত্রের ফটোকপি পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। এসব তথ্য জরুরি ভিত্তিতে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে দুদকে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের একজন উপপরিচালক দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পুলিশ অফিসার শেখ রফিকের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতিসহ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থপাচারের একটি অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানে দুদক। অভিযোগটি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুদকের উপপরিচালক মোহা. নূরুল হুদাকে প্রধান করে ৩ সদস্যের টিম গঠন করা হয়। অনুসন্ধান টিম অভিযোগ সংক্রান্ত নথিপত্র চেয়ে ২৬টি দপ্তরে চিঠি দিয়েছে। ওই তলবি নোটিশের পর বেশ কিছু নথিপত্র দুদকে জমা হয়েছে। অনুসন্ধান টিম সম্পদের তথ্য-উপাত্ত ঘটনা দেখতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এখন তথ্য চাওয়া হয়েছে তিনি চাকরি করে কী পরিমাণ বেতন-ভেতন পেয়েছেন। এই তথ্য পাওয়ার পরই তার রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করবে অনুসন্ধান টিম। ওই প্রতিবেদেনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন কমিশন।
দুদকের টেবিলে থাকা অভিযোগে বলা হয়, শেখ রফিকুল ইসলামের বাবার মৃত্যুর পর তিনি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ সংগ্রহ করে সেই সনদ দিয়ে পুলিশে চাকরি এবং সরকারি জমি নেন। তিনি চাকরিকালীন সময়ে ঘুষ, দুর্নীতির মাধ্যমে শতশত কোটি টাকার মালিকানা অর্জন করেছেন। এর মধ্যে তিনি গোপালগঞ্জের পাইককান্দি মৌজায় ৫৬৯ দাগে ১ দশমিক ৭ একর জমি ক্রয় করেন। তিনি গ্রামের বাড়িতে ১ দশমিক ৫৬ একর জমির ওপর ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেন। বাড়ির সীমানা বাড়াতে সরকারি পুকুর ভরাট করে দখল করে রেখেছেন। তার স্ত্রীর ৪টি জাহাজ রয়েছে, যার মূল্য ১০-১৫ কোটি টাকা। তিনি অবৈধভাবে দুবাইয়ে অর্থপাচার করে সোনার দোকান করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, রফিকুল ইসলাম ইন্দিরা রোডের ৮২/২ নম্বর বাড়ি বসবাস করেন। বহুতল ফাউন্ডেশনের ওপর চারতলা নির্মাণ করেছেন। এতে ব্যয় হয়েছে ৫৬ কোটি টাকা। বাড়ির ভাড়ার টাকা তার স্ত্রী সংগ্রহ করেন। তিনি মিরপুর চিড়িয়াখানার পাশে ১২ কোটি ১৯ লাখ টাকায় ২ বিঘা জমি কিনেছেন। তিনি ২০২২ সালে গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালের পাশে ১৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তার স্ত্রী ফারজানা রহমানের নামে ৬ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছেন। এর আগে ২০১৯ সালে ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পে ১০ কোটি টাকা খরচ করে দুটি প্লট ক্রয় করেন। এ ছাড়া তিনি পাঁচ ভাইয়ের নামে ঢাকা, গোপালগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৪২ কোটি টাকা মূল্যের প্লট-ফ্ল্যাট কিনেছেন।
অভিযোগের বিষয় জানতে সোমবার রাতে অতিরিক্ত ডিআইজি রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পারিবার ঝামেলার কারণে ব্যস্ত থাকায় কথা বলতে চাননি।