অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৪৯ রান যোগ করেন তাওহিদ–মাহমুদউল্লাহ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ক্রীড়া প্রতিবেদক: কে এগিয়ে—জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বারবারই শোনা যাচ্ছিল প্রশ্নটা। বাংলাদেশ দলের রান তাড়ায় বারবার বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল বেরসিক বৃষ্টি। এক-দুইবার নয়, তিনবার বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়েছে। প্রেসবক্সে প্রতিবারই ডিএল মেথডে কে এগিয়ে জানতে অফিশিয়াল স্কোরারের কাছে কেউ না কেউ এগিয়ে যাচ্ছিলেন।
বাংলাদেশের ভাগ্য ভালো। বৃষ্টি খুব বেশি সময় নষ্ট করেনি। জিম্বাবুয়ের ৭ উইকেটে ১৩৮ রানের পেছনে ছুটতে গিয়ে ডিএল মেথডে দুই দফা এগিয়ে থাকলেও তৃতীয়বার পিছিয়ে ছিল ৩ রানে। এরপর আর খেলা না হলে বাংলাদেশকে ৩ রানে হারতে হতো। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তাওহিদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহর ঝড়ে ৯ বল ও ৬ উইকেট হাতে রেখে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিও বাংলাদেশ জিতে গেছে সহজেই। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে নাজমুলের দল এখন ২-০ তে এগিয়ে।
বাংলাদেশ ইনিংসের শুরুতে লিটন দাস যেভাবে খেলছিলেন, বৃষ্টি হলেও ডিএল মেথড নিয়ে ভাবতে হবে না বাংলাদেশকে। উদ্বোধনে নেমে ৭ বলে ১৭ রান করে ছন্দে ফেরার আভাস দিচ্ছিলেন লিটন। কিন্তু প্রথমবার বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার পর যেন খেই হারিয়ে বসেন। ২০০ স্ট্রাইক রেটে ইনিংস শুরু করা লিটন আউট হয়ে যান ২৫ বলে ২৩ রান করে। একইভাবে খেলে আউট হয়েছেন আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান। আউট হওয়ার আগে ১৯ বলে করেন ১৮ রান। ১৫ বলে ১৬ রানে থেমেছেন নাজমুল হোসেনও। ১ ছক্কায় ১২ বলে ১৩ রান করে আউট হয়েছেন জাকের আলী।
বাংলাদেশের ভাগ্য ভালো, জিম্বাবুয়ের আস্কিং রান রেট ছিল নাগালেই। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের মন্থরগতির ইনিংসের পরও বাংলাদেশ স্বাচ্ছন্দ্যে এগোচ্ছিল জয়ের পথে। তাওহিদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ কাজটাকে আরও সহজ করে তোলেন আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে। দুজনই খেলেছেন দেড় শ স্ট্রাইক রেটে। হৃদয় ২৫ বলে ৩টি চার ও ২টি বিশাল ছক্কায় করেছেন ৩৭ রান, মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ছিলেন ১৬ বলে ২৬ রানে। ৪টি চার ও ২টি ছক্কা ছিল তাতে।
প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও জিম্বাবুয়েকে ভুগিয়েছে তাদের শুরুর দিকের ব্যাটিং। সাধারণত কন্ডিশন একটু কঠিন হলে দলগুলো পাওয়ার প্লের প্রথম তিন ওভার দেখেশুনে পরের তিন ওভারে মেরে খেলে। ব্যাটিং অর্ডার লম্বা হলে কোনো কোনো দল প্রথম ওভার থেকেই আক্রমণে যায়। এদিন জিম্বাবুয়ে দুটির একটিও করল না।
বাংলাদেশ দলের বোলিংয়ের সামনে শট খেলাই যেন ভুলে গিয়েছিলেন দুই ওপেনার জয়লর্ড গাম্বি ও তাদিওয়ানাশে মারুমানি! জিম্বাবুয়ে বাউন্ডারি মেরেছে মাত্র একটি, সেটাও লেগ বাই। ব্যাট থেকে দলটির প্রথম বাউন্ডারি আসে পাওয়ার প্লের পরের ওভারে। রিশাদ হোসেনের বলে গাম্বির রিভার্স সুইপে বল বাউন্ডারি পার হলে যেন জেগে ওঠে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের দর্শকেরা। যে দলই হোক, অবশেষে ব্যাট থেকে বাউন্ডারি তো দেখা গেল!
ইনিংসের প্রথম ১০ ওভারে জিম্বাবুয়ের বাউন্ডারি মেরেছে ওই দুটিই। উইকেট হারিয়েছে ৪টি, রান মাত্র ৩৮। এমন শুরুর পর দলটা বেশি দূর যাবে না, এই ভবিষ্যদ্বাণী করাই যাচ্ছিল। কিন্তু দুই তরুণ জোনাথন ক্যাম্পবেল ও ব্রায়ান ব্যানেট টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট কী জিনিস তা দেখিয়ে দিলেন। জিম্বাবুয়ের হয়ে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা জোনাথন ইনিংসের শুরুর দুঃস্বপ্ন ভুলিয়ে দেন সুইপ আর স্লগ সুইপে। যেন মনে করিয়ে দিলেন বাবা অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের কথা। ২৪ বলে ৪৫ রানের ঝলমলে ইনিংসে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কা মেরেছেন।
১৮৭ স্ট্রাইক রেটের সে ইনিংসের কারণেই বাংলাদেশের বোলারদের স্লোয়ার, কাটার, ইয়র্কার, বাউন্সারের মতো বৈচিত্র্য আনতে হয় বোলিংয়ে। শরীফুল এসে ক্যাম্পবেলকে আউট করলেও শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন ব্যানেট। ২০ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার ২৯ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১৫১ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৪৪ রান। জিম্বাবুয়ের ইনিংসের দ্বিতীয়ার্ধে ফুটে উঠেছে তাঁদের ব্যাটিংয়ের ছাপই। ১৩৮ রানের ইনিংসে ১০০ রানই যে এসেছে শেষ ১০ ওভারে!