নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল ভালো হলেও শিক্ষার্থীর সংকটে পড়বে অনেক কলেজ। কারণ, একাদশ শ্রেণিতে সব মিলিয়ে আসন আছে ২৫ লাখ। কিন্তু এবার মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে প্রায় পৌনে ১৭ লাখ শিক্ষার্থী। সবাই ভর্তি হলেও একাদশ শ্রেণিতে ৮ লাখের বেশি আসন ফাঁকা থাকবে।
আবার জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থীই ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারবে না, এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম থাকায়।
শিক্ষাবিদেরা বলছেন, দেশে চাহিদার চেয়ে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেশি। তবে সব প্রতিষ্ঠানই মানসম্পন্ন নয়। মানহীন কলেজে শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবেই ভর্তি হতে চাইবে না। এগুলোই শিক্ষার্থীর সংকটে পড়বে। তাই প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানোর চেয়ে মানের দিকে নজর দিতে হবে।
সব শিক্ষা বোর্ড (সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি) মিলিয়ে এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট অংশগ্রহণকারী ছিল ২০ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৭ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ৯৮ হাজার ৭৭৬ জন এবং ছাত্র ৮৩ হাজার ৩৫৩ জন। এবার গড় পাসের হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৪, যা গত বছরের চেয়ে ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি। গত বছর ছিল ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য বলছে, সারা দেশে একাদশ শ্রেণিতে আসন রয়েছে ২৫ লাখ। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকাতেই রয়েছে ৫ লাখের বেশি আসন।
একই তথ্য জানান ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।
সোমবার তিনি বলেন, এবার একাদশ শ্রেণিতে ৮ লাখের বেশি আসন ফাঁকা থাকবে। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির যাবতীয় তথ্য শিগগির জানানো হবে।
ঢাকা বোর্ড সূত্র বলেছে, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু হতে পারে ২৬ মে, যা চলবে আগামী ১১ জুন পর্যন্ত। এবারও একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে। তবে নটর ডেম, হলিক্রস ও সেন্ট জোসেফ কলেজ লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করবে।
ঢাকা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাস করেছে ৩ লাখ ৪২ হাজার ৩৭৯ শিক্ষার্থী। এই বোর্ডের অধীনে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে আসন আছে ৫ লাখের বেশি। একইভাবে অন্য শিক্ষা বোর্ডগুলোতেও পাস করা শিক্ষার্থীর চেয়ে আসন বেশি আছে। তাঁরা বলেন, তবে আগ্রহ-স্বপ্ন থাকলেও ভালো মানের কলেজে পড়া হবে না জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থীর। কারণ, সারা দেশে ভালো মানের কলেজ হিসেবে বিবেচিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দুই শতাধিক। এগুলোতে সব মিলিয়ে আসন ১ লাখের কাছাকাছি। অথচ জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজারের বেশি।
রাজধানীতে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ভালো প্রতিষ্ঠান ২৫ থেকে ৩০টি। কিন্তু ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৯ হাজার ১৯০ জন। রাজধানীর বাইরে বড় বিভাগীয় শহর ছাড়া অন্যান্য শহরে ভালো প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হাতে গোনা। মেয়েদের ভালো কলেজের সংখ্যা আরও কম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এম তারিক আহসান বলেন, ‘উচ্চমাধ্যমিক স্তরে অনেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে সঠিক মান আছে কি না, এটা বড় প্রশ্ন। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই মানের দিক চিন্তা না করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দিয়ে দিই। ফলে প্রয়োজনের চেয়ে প্রতিষ্ঠান অনেক বেশি হয়ে গেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এগুলোর মানোন্নয়নে জোর দিতে হবে।’
এম তারিক আহসান বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে ঝরে পড়ার হার তুলনামূলকভাবে কমবে। তাই সঠিক মান না থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না করে এগুলোর মানোন্নয়নে কাজ করতে হবে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় ১২ মার্চ। করোনা মহামারির পর এবারই প্রথম পূর্ণ পাঠ্যসূচি (সিলেবাস), পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে এই পরীক্ষা হয়েছে।