উপজেলা নির্বাচন | প্রতীকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ মঙ্গলবার ।  অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে চিন্তায় রয়েছে এ সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। প্রথম ধাপের ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় ধাপেও তারা কম ভোট পড়ার আশঙ্কা করছে। অবশ্য কমিশন বলেছে, তারা ভোটের হার নিয়ে ভাবছে না। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নে ভোটারের উপস্থিতি কোনও ম্যাটার করে না।

দ্বিতীয় ধাপে দেশের ১৫৬ উপজেলায় সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এর মধে ২৪টি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম), বাকি উপজেলাগুলোতে কাগজের ব্যালটে ভোট হবে। সোমবার ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনি সরঞ্জাম পৌঁছেছে। ব্যালট পৌঁছেছে ৬৮৫টি কেন্দ্রে । বাকি ১২ হাজার ৩৩১ কেন্দ্রে ভোটের দিন ভোরে ব্যালট যাবে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট উপজেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা এবং যান চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৬টি উপজেলায় বিজিবি, র‌্যাব ও কোস্টগার্ডের বাড়তি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিগত বছরগুলোর নির্বাচনের চেয়ে এবার ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য থাকছে। এসব প্রস্তুতির পরও ভোটারের উপস্থিতির হার নিয়ে ইসির চিন্তা রয়েছে। রোববার নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) মো. আহসান হাবিব খান নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে মাইকিং করা হবে বলে জানিয়েছেন। সোমবার নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, ভোটের হার বেশি হলে আমরা খুশি হবো। কিন্তু ভোটার উপস্থিতি বেশি না হলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কারণ, জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কোনও বিধি-নিষেধ বা নিয়ম নেই যে, কত শতাংশ ভোট পড়লে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। এগুলো নিয়ে ইসি ভাবে না।

এবার চার ধাপে উপজেলা নির্বাচন করছে ইসি। গত ৮ মে অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপে ৩৬.১০ শতাংশ ভোট পড়ে। এই হার ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ ও গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে কম। ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে। এরইমধ্যে রোবার ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান ইসি আহসান হাবিব। বরগুনায় শিল্পকলা একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ভোটারদের কেন্দ্রে আনার দায়িত্ব প্রার্থীদের। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে নিরাপত্তা দেওয়া, যাতে ভোটাররা কেন্দ্রে এসে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিরাপদে চলে যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, নির্ভয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে ভোট দিতে আসতে এলাকায় মাইকিং করা হবে। ভোটাররা কেন্দ্রে এসে নিরাপদে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরবে— এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

দ্বিতীয় ধাপে গত ২ এপ্রিল ১৬১ উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ হচ্ছে ১৫৬টিতে। রাউজান ও কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সবাই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় সেখানে ভোটগ্রহণের প্রয়োজন হচ্ছে না। বান্দরবানের রুমা ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। বরিশালের বাবুগঞ্জ, উজিরপুর ও বানারীপাড়া উপজেলার ভোট এ ধাপে থাকলেও তা পিছিয়ে চতুর্থ ধাপে নেওয়া হয়েছে।

এ ধাপে ২১ জন একক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৭ জন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছেন।

ইসি জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে এক হাজার ৮২৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান ৬০৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ৬৯৩ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ৫২৮ জন। এ নির্বাচনে ভোটার রয়েছেন ৩ কোটি ৫২ লাখ। ভোটারদের মধ্যে এক কোটি ৭৯ লাখ ৫ হাজার পুরুষ এবং এক কোটি ৭২ লাখ ৯৯ হাজার নারী ভোটার। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৩ হাজার ১৬টি ও ভোটকক্ষ ৯১ হাজার ৫৮৯টি। এ নির্বাচনে ৭ জন চেয়ারম্যানসহ মোট ২২জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ওইসব পদ বাদে বাকিগুলোতে মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ হবে।

নির্বাচনের এই ধাপে নিরাপত্তার দায়িত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় তিন লাখ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ ৯৩ হাজার আনসার, ৮৯ হাজার ৮৬৩ জন পুলিশ, দুই হাজার ৭৬৮ জন র‌্যাব ও ৪৫৮ প্লাটুন বিজিবি সদস্য রয়েছেন। স্বাভাবিক এলাকার প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের পাহারায় ১৭ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮-১৯ জন সদস্য মোতায়েন থাকবেন।

ফকিরহাটের ওসি ও ডিবি কর্মকর্তা প্রত্যাহার
ভোটের আগের দিন সোমবার বাগেরহাটের ফকিরহাট থানার ওসি আশরাফুল আলম ও গোয়েন্দা পুলিশের ওসি স্বপন রায়কে ভোট পর্যন্ত দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাদেরকে খুলনা রেঞ্জে সংযুক্ত করে অন্য দুই কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। নির্বাচন কমিশনের উপসচিব মিজানুর রহমানের সই করা এ সংক্রান্ত চিঠি পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজিকে পাঠানো হয়েছে।

এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কোনও দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেয়নি। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে মাত্র চারটি দল প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। দলগুলো হলো— জাতীয় পার্টি (এরশাদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এবং জাতীয় পার্টি (জেপি)। এ চারটি দল চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান  ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৮ জন প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। এদিকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো এ নির্বাচন বয়কট করেছে। তবে বেশকিছু উপজেলায় বিএনপি সমর্থিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।