রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের একটি পক্ষের নেতা-কর্মীরা দেশি অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে মাদার বখ্শ হলের সামনে জড়ো হন। গতকাল সোমবার মাঝরাতে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
প্রতিনিধি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ানোর পর এবার এক নেতাকে ‘হত্যার’ হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে এক পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ সময় তারা দেশি অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়।
ওই ঘটনার পর দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে হল প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যরা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে তল্লাশি করেন। অভিযান শেষে আজ মঙ্গলবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
দ্বন্দ্বে জড়ানো দুটি পক্ষ হলো বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান (বাবু) এবং শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ। জড়ো হওয়া নেতা-কর্মীরা ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারী।
ছাত্রলীগ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত দেড়টার দিকে নিয়াজ মোর্শেদ তাঁর অন্তত ১২ জন অনুসারী নিয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে প্রবেশ করেন। এ সময় হল গেটে ওই হলের সহসভাপতি আতিকুর রহমান ওরফে আতিকের সঙ্গে নিয়াজের দেখা হয়। একপর্যায়ে নিয়াজ তাঁকে মারধর ও হত্যার হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন আতিক। তবে হত্যার হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন নিয়াজ। বিষয়টি জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের সামনে মোস্তাফিজুর ও গালিবের অনুসারীরা জড়ো হতে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য হল থেকেও নেতা-কর্মীরা সেখানে যোগ দেন। এ সময় নেতা-কর্মীদের হাতে রামদা, রড, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও ইটপাটকেল দেখা যায়।
খবর পেয়ে রাত আড়াইটার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম সাউদ, জনসংযোগ প্রশাসক প্রণব কুমার পান্ডে, সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ। এর কিছুক্ষণ পর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সেখানে উপস্থিত হন।
এ সময় ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদক সোহরাওয়ার্দী হলে বহিরাগত প্রবেশ করেছে বলে অভিযোগ করেন। পরে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে রাত সোয়া তিনটার দিকে সোহরাওয়ার্দী হলে অভিযান চালায় হল প্রশাসন। আজ ভোর সাড়ে চারটার দিকে অভিযান শেষ হলে নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। উত্তেজনা নিরসনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল ও মাদার বখ্শ হলের সামনে আগে থেকেই পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। এক পক্ষের এই উত্তেজনা ও অস্ত্রশস্ত্র দেখে কয়েক গাড়ি পুলিশ এবং পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটের (ডিবি) সদস্যরা সেখানে যোগ দেন।
এ ব্যাপারে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘জোহা হল এবং মাদার বখ্শ হলের ছাদ থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বেশ কিছু বহিরাগতকে ডাইনিংয়ের ছাদ দিয়ে হলে প্রবেশ করতে দেখেন। এ বিষয়ে তাঁরা প্রক্টর স্যারকে জানান। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় হলে অভিযান চালায়। তাঁদের এক নেতাকে হত্যার হুমকির অভিযোগে নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়েছিলেন। তবে তাঁদের নেতা-কর্মীদের হাতে রামদা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র থাকার বিষয়টি জানেন না বলে এড়িয়ে যান তিনি।
হুমকির ব্যাপারে জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী হলের সহসভাপতি আতিকুর রহমান আতিক বলেন, ‘হল গেটে নিয়াজ ও তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে আমার দেখা হয়। এ সময় তাঁরা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিতে থাকেন। একপর্যায়ে আমার পা ভাঙবেন বলে হত্যার হুমকি দেন। পরে বিষয়টি জানালে নেতা-কর্মীরা হলের সামনে জড়ো হন।’
তবে বহিরাগত প্রবেশ ও হত্যার হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেতা নিয়াজ মোর্শেদ। তিনি বলেন, সবার সামনে দিয়ে হলের ১০ জন ছোট ভাই নিয়ে তিনি হলে প্রবেশ করেন। সেখানে পুলিশ প্রশাসনও উপস্থিত ছিল। হল গেটে প্রবেশ করার সময় আতিকের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল, কিন্তু কোনো কথা হয়নি। হত্যার হুমকির অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি হলের প্রধান ফটক দিয়েই বের হন। এ সময় তাঁর সঙ্গে কোনো বহিরাগত ছিল না।
প্রায় দুই ঘণ্টা সোহরাওয়ার্দী হলে অভিযান শেষে আজ ভোর পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা একটি সূত্র থেকে হলে বহিরাগত প্রবেশের খবর পেয়ে অভিযান চালাই। এ সময় আমরা একটি চাইনিজ কুড়ালের অংশবিশেষ পেয়েছি। এ ছাড়া কিছু সন্দেহজনক কক্ষে অভিযান চালিয়েছি। সেখানে কিছু অনাবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু কোনো বহিরাগতদের হলে পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি বিবেচনায় অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে হল প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’
হলের বাইরে এক পক্ষের নেতা-কর্মীদের হাতে রামদা, রড ও দেশীয় অস্ত্রের মহড়ার বিষয়ে আসাবুল হক বলেন, ‘আমাদের চোখে এখনো এমন দৃশ্য পড়েনি। হলে রাজনীতির বিষয়টা থাকায় আমরা উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার চেষ্টা করছি।’
গত শনিবার অতিথিকক্ষে বসাকে কেন্দ্র করে রাত ১১টা থেকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত ছাত্রলীগের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ছয়টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় দফায় দফায় রামদা ও লাঠিসোঁটা হাতে একে অপরকে ধাওয়া দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল গেট ও মাদার বখ্শ হলের মধ্যবর্তী স্থানে দুই পক্ষ অবস্থান নিয়ে এ হামলা চালায়।