মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য ব্যালট বাক্স ও সরঞ্জামাদি সদর উপজেলা পরিষদ থেকে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নিজস্ব প্রতিবেদক: আলোচনা-সমালোচনার জাতীয় সংসদ নির্বাচন পার করে এবার আরেকটি পরীক্ষার সামনে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।
চার ধাপের ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে বুধবার ভোট হচ্ছে ১৩৯টি উপজেলায়, যেখানে ভোটারদের কেন্দ্রে আনা আর আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখাটাই ইসির সামনে মূল চ্যালেঞ্জ।
এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর অবশ্য মেলেনি। আচরণবিধি লঙ্ঘনের কয়েকটি ঘটনায় নির্বাচন কমিশনকে কঠোর অবস্থান নিতেও দেখা গেছে।
বুধবার সকাল ৮টা থেকে ভোট চলবে একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত। সেজন্য মঙ্গলবারই নির্বাচনী মালামাল কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনের প্রচার পর্বে বেশ কিছু এলাকায় প্রভাব খাটানো ও গোলযোগের অভিযোগের মধ্যে নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে ‘হুশিয়ারি’ দিয়ে আসছে। মন্ত্রী-এমপিদের আচরণবিধি মানাতে স্পিকারকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারদের এ বিষয়ে কঠোর থাকতে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ করে চার মাসের মাথায় দেশজুড়ে উপজেলার এ ভোট হচ্ছে। শান্তিপূর্ণভাবে এ নির্বাচন শেষ করার পাশাপাশি ভোটার উপস্থিতি কেমন হয়, তা নিয়েই এখন সবার আগ্রহ।
আওয়ামী লীগ নির্বাচন ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক’ দেখানোর কৌশলে উপজেলায় দলীয় মনোনয়ন বা প্রতীক দেয়নি। ফলে এ নির্বাচনে নৌকার কোনো প্রার্থী নেই, যদিও প্রার্থীদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের নেতা, তারা ভোট করছেন স্বতন্ত্র হিসেবে।
জাতীয় নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি স্থানীয় সরকারের ভোট বর্জনের সিদ্ধান্তেও অটল। তবে এই ধাপে দলটির স্থানীয় পর্যায়ের ৮০ জনের মত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি দলীয় প্রতীক দিলেও প্রথম পর্বের ভোটে তাদের প্রার্থী কেবল ৪ জন। এর বাইরে জেপির দুই জন, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের প্রার্থী একজন।
এ অবস্থায় ভোটের হার কতটা বাড়বে, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের সাবেক পরিচালক আব্দুল আলীম বলেন, “আওয়ামী লীগেরও দলীয় প্রার্থী নাই। সেই হিসাবে আওয়ামী লীগও রাজনৈতিক দল হিসেবে এই নির্বাচনটা বয়কট করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছে। তার মানে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগই। ফলে এক শ্রেণির মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাবে না। সেক্ষেত্রে ভোটের হার ২০১৪ বা ২০১৯ সালের চেয়ে কমে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি।”
২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত আগের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গড়ে ৬১ শতাংশ ভোট পড়েছিল। সবশেষ ২০১৯ সালের নির্বাচনে ভোট পড়ে ৪১ শতাংশের বেশি।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মালামাল রাখা হয়েছে বিতরণ করার জন্য। উপজেলা পরিষদ, বরিশাল | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে করার জন্য 'সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে' জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ভোটে প্রভাব বিস্তার রোধে 'সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে'।
ভোটের দিনে নির্বাচন কমিশের ভূমিকা নিয়ে সিইসি সতর্ক থাকা এবং কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটর করার কথা বলেছেন। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম বলেন, “অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আচরণবিধি প্রতিপালন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে পর্যাপ্ত আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য নিয়োজিত রয়েছে।”
⚫ প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলার মধ্যে ২২টিতে ইভিএমে ও বাকিগুলোতে প্রচলিত ব্যালট পেপারে ভোট হবে।
⚫এই ধাপে প্রার্থী রয়েছেন মোট ১ হাজার ৬১৯ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫৬৫, ভাইস চেয়ারম্যান ৬১৯ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৩৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
⚫এ ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৮, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ করে অর্থাৎ মোট ২৮ জন প্রার্থী ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
⚫প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ১১ হাজার ৫৫৬ কেন্দ্রের ৮১ হাজার ৮০৪ ভোট কক্ষে ৩ কোটি ১৪ লাখ ৬৮ হাজার ১০২ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
⚫এর মধ্যে পুরুষ ১ কোটি ৬০ লাখ ২ হাজার ২২৪, নারী ১ কোটি ৫৪ লাখ ৬৫ হাজার ৬৯০ এবং ১৮৮ জন হিজড়া ভোটার রয়েছেন।
নিরাপত্তা
ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম নেওয়ার আগে উপজেলা আনসার ভিডিপির এক কর্মকর্তা আনসার সদস্যদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ কেন্দ্রে ১৭ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ থেকে ১৯ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। বিশেষ এলাকায় (পার্বত্য ও দুর্গম এলাকা) সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ থেকে ২১ জন সদস্য মোতায়েন থাকবে।
এ ছাড়াও উপজেলার আয়তন, ভোটার সংখ্যা ও ভোটকেন্দ্রের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রতি উপজেলায় ২ থেকে ৪ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করবেন। উপকূলীয় এলাকার দ্বীপাঞ্চলে কোস্টগার্ড, মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। ভোটকেন্দ্রে আনসার ব্যাটালিয়ন মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোটগ্রহণের আগের দুই দিন, ভোটগ্রহণের দিন ও ভোটগ্রহণের পরের দুই দিনসহ মোট পাঁচ দিন নিয়োজিত থাকবেন।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটগ্রহণের তিন দিন আগ পর্যন্ত আচরণবিধি প্রতিপালন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রতিরোধে প্রতি উপজেলায় একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট এবং ভোটগ্রহণের তিন দিন আগে থেকে ভোটগ্রহণের পরের দিন পর্যন্ত প্রতি তিন ইউনিয়নের জন্য একজন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন।
এছাড়া ভোটগ্রহণের দুই দিন পূর্ব থেকে ভোটগ্রহণের দুই দিন পর পর্যন্ত প্রতি উপজেলায় একজন করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, চার ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনের সব ধাপেই দুর্গম কেন্দ্রে আগের দিন ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। অন্যগুলো যাবে ভোটের দিন সকালে। মাঠ প্রশাসন থেকে দুর্গম এলাকা চিহ্নিত করে প্রতিবেদন পাঠালে নির্বাচন কমিশন সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রথম ধাপের ভোট পরিস্থিতি দেখতে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যবেক্ষক রয়েছেন ৪ হাজার ৯৫৯ জন। এছাড়া নির্বাচন ভবনে কেন্দ্রীয়ভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তদারকিতে একটি মনিটরিং সেল রয়েছে।নিষেধাজ্ঞা
মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে বুধবার অর্থাৎ ভোটগ্রহণের দিন রাত ১২টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকায় ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, পিকআপ, ট্রাক, লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত বোটসহ (নির্দিষ্ট রুটে চলাচলকারী ব্যতীত) অন্যান্য যানবাহন চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
ভোটগ্রহণের সাত দিন আগে ও ভোটগ্রহণের পরবর্তী সাত দিন পর্যন্ত লাইসেন্সধারীরা যাতে অস্ত্রসহ চলাচল কিংবা বহন ও প্রদর্শন না করেন সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
ব্যালট পেপার
প্রথম ধাপে দুর্গম এলাকার ৪২৪ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের আগের দিন মঙ্গলবার ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে। আর ১১ হাজার ১৩২ কেন্দ্রে ব্যালট পৌঁছাবে বুধবার সকালে।
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান সাংবাদিকদের বলেন, যাতায়াতের অসুবিধার জন্য দুর্গম এলাকায় ভোটের আগের দিন ব্যালট পাঠানোর জন্য সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসি। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে।
১০টি জেলার ২৪টি উপজেলার দুর্গম কেন্দ্রে ব্যালট আগের দিন মঙ্গলবার পাঠানো হয়েছে। উপজেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে, কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী, চর রাজীবপুর; মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া; হবিগঞ্জের বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, সরাইল, সন্দ্বীপ; রাঙ্গামাটির রাঙামাটি সদর, কাউখালী, জুড়াছড়ি, বরকল; বান্দরবানের বান্দরবান সদর, আলীকদম; খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি, মানিকছড়ি, মাটিরাঙ্গা, রামগড়; সুনামগঞ্জের দিরাই, শাল্লা ও লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা। এসব উপজেলার ৪২৪টি কেন্দ্র দুর্গম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ইভিএমে ভোট যেভাবে
নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পর ভোটার নম্বরের ভিত্তিতে ভোটকক্ষ খুঁজে নিতে হবে ভোটারদের। লাইনে দাঁড়িয়ে নির্ধারিত কক্ষে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সামনে পৌঁছানোর পর যাচাই করা হবে ভোটারের পরিচয়।
কয়েকটি উপায়ে ভোটারের পরিচয় শনাক্ত করেন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার।
- স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করে
- দশ ডিজিটের স্মার্ট কার্ডের নম্বর
- ১৭ ডিজিটের লেমিনেটেড এনআইডির নম্বর
- ১২ ডিজিটের ভোটার নম্বর
- আঙুলের ছাপ
এর যে কোনো একটি পদ্ধতিতে তালিকায় ভোটারের নাম শনাক্ত করার পর মেলানো হবে তার আঙুলের ছাপ। ছাপ সঠিক হলে ভোটারের ছবি ও ভোট তথ্য সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সামনে একটি মনিটরে ভেসে উঠবে। প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ও ভোটার তা দেখতে পাবেন।
কন্ট্রোল ইউনিট থেকে আঙুলের ছাপ মিললে একজন পোলিং অফিসার ভোটার তালিকায় ভোটারের নামের পাশে টিক চিহ্ন দিয়ে রাখবেন। আরেকজন পোলিং অফিসার ভোটারের আঙুলে লাগিয়ে দেবেন অমোচনীয় কালি। এরপর সেই ভোটারকে ইভিএমে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।
কোনো কারণে আঙুলের ছাপ না মিললেও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার বিধি মেনে মোট ভোটারের সর্বোচ্চ ১ শতাংশকে ভোটার হিসেবে শনাক্ত করে ইলেকট্রনিক ব্যালট ইস্যু করতে পারবেন।
উপজেলা নির্বাচনে তিনটি পদে পছন্দের প্রার্থী ও প্রতীক দেখে ডান দিকের বোতাতে চাপ দিয়ে সিলেক্ট করতে হবে এবং সবুজ রংয়ের CONFIRM বোতাম চেপে ভোট সম্পন্ন করতে হবে।
সিইসির সতর্কবার্তা
ভোটের আগের দিন মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, বুধবারের ভোট অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের অনিয়ম যাতে না হয় সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
স্থানীয় ভোটে প্রভাব বিস্তার প্রতিরোধে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে সিইসি বলেন, “মন্ত্রী-এমপিদের নিবৃত্ত করা হয়েছে, প্রভাব বিস্তারের কারণে কিছু কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনের দিন কেউ যেন ভোটকেন্দ্রে অনুপ্রবেশ করতে না পারে এবং সেখানে যেন অনিয়ম না হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। ভোটের দিন আমরা সতর্ক থাকব, কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করব। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি জানান, দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের সুযোগ থাকলেও দলীয় মনোনয়ন না থাকায় স্বতন্ত্র হয়ে লড়ছেন প্রার্থীরা। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে।
সিইসি বলেন, “সংসদ সদস্য, মন্ত্রী অনেককে নিবৃত্ত করতে পেরেছি। হয়ত অনেকে এলাকায় আছেন। সরকারের তরফ থেকে যতদূর দেখেছি, দলীয়ভাবে হোক বা সরকারের পক্ষ থেকে হোক, যাতে নির্বাচনটা অবাধ, নিরপেক্ষ হয়, কেউ যেন প্রভাব বিস্তার না করেন সে বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রভাব বিস্তার প্রতিরোধে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। দেখা যাক, কতটুকু হয়।”
যা কিছু নতুন
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক যুক্ত হওয়ার পর এবারই দলীয় প্রার্থী নেই বললেই চলে। কাগজে কলমে প্রার্থীদের সবাই দল নিরপেক্ষ বা স্বতন্ত্র।
এ নির্বাচনের প্রার্থীদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। অথচ নৌকা মার্কার কোনো প্রার্থী নেই, কারো প্রতি স্থানীয় পর্যায় থেকে সমর্থনও ঘোষণা হয়নি, যা এর আগে কখনো ঘটেনি।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীমের মতে, এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ।
“আওয়ামী লীগেরও নিজস্ব কোনো দলীয় প্রতীকের প্রার্থী নেই। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছে। মানুষ জানে, তাদের লোকরাই জিতবে। ভোটে টার্নআউট ২০১৪ বা ২০১৯ সালের চেয়ে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।”
জাতীয় নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি স্থানীয় সরকারের ভোট বর্জনের সিদ্ধান্তেও অটল। তবে প্রথম ধাপে যে কটি উপজেলায়ে ভোট হচ্ছে তাতে দলটির স্থানীয় পর্যায়ের ৮০ জনের মত নেতা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের সবাই স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার মনে করেন, এবার আবার পুরনো জায়গায় ফিরেছে নির্বাচন।
তিনি বলেন, “দলীয় প্রতীকবিহীন নির্বাচন। কারণ নির্বাচনটা যেন প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হয়। ভোটের ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ কমেছে। কিন্তু স্থানীয় নির্বাচনে মানুষের আগ্রহ বেশি হওয়ার কথা। কিছু জায়গায় বিএনপির যেসব প্রার্থী অংশ নিয়েছে, তারাও জিতে যেতে পারে।”
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ-জানিপপ এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে স্থানীয় সরকারের এ উপজেলা নির্বাচনের গুণগত কিছু পার্থক্য রয়েছে; এক করে দেখা যাবে না। কিন্তু সার্বিকভাবে এবারের উপজেলা ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন হবে কিংবা টার্ন আউট খুব কম হবে- এটা ভাবা ঠিক হবে না।”
নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে নির্বাচন পরিচালনা বিধি ও আচরণবিধি সংশোধন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথ সহজ করেছে। এতদিন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ২৫০ জন ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরের যে তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হত, এবার তা দিতে হয়নি।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এবার প্রথমবারের মতো সাদাকালোর সঙ্গে রঙিন পোস্টারও ছাপাতে পেরেছেন প্রার্থীরা। তবে জামানতের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে এবার।
চেয়ারম্যান পদে জামানতের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করা হয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামানত ৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা।
প্রথমবারের মত অনলাইনেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে হয়েছে সব প্রার্থীকে।
প্রথম ধাপের পর ২১ মে দ্বিতীয়, ২৯ মে তৃতীয় এবং ৫ জুন শেষ ধাপের ভোট হবে।