প্রতীকী ছবি |
প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে পাবনার ঈশ্বরদীতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে প্রার্থীদের কারো কারো আপত্তি থাকলেও নতুন এ পদ্ধতিতে ভোট দেওয়ার জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন ভোটাররা। ব্যালট পেপার ভাঁজের ব্যাপার নেই, সিল মারতেও হবে না। শুধু বোতাম চাপলেই শেষ। ভালোই হবে, বললেন ২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার প্রদীপ কুমার।
তাঁর মতো উপজেলার ৭টি ওয়ার্ডের ভোটাররা আজ বুধবার সকাল ৮ থেকে ভোট দেবেন ইভিএমে। এর আগে ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর ইউপি নির্বাচনে একটি ইউনিয়নে ইভিএম ব্যবহার হলেও প্রথমবারের মতো বড় পরিসরে ব্যবহার করা হচ্ছে এ প্রযুক্তি।
তবে মঙ্গলবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে কারো কারো মধ্যে দ্বিধা থাকলেও নতুন এ প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হতে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন সবাই। আর এক্ষেত্রে তরুণ আর নারীরাই এগিয়ে আছেন। অবশ্য কেউ কেউ বলেছেন, নতুন এ প্রযুক্তি চালু করার আগে নির্বাচনী এলাকায় আরও বেশি জনসচেতনতা তৈরি করা হলে ভোটারদের কারো মধ্যে কোনো 'সন্দেহ' থাকতো না।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলছেন, ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং ভোটার সচেতন করতে যথেষ্ট প্রচার চালানো হয়েছে। ভোটাররা ইভিএম ব্যবহারে এখন স্বচ্ছন্দ্য বোধ করবেন বলেন তিনি।
তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যে সেগুলো কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গিয়েছে। যন্ত্রগুলো ঠিকঠাক কাজ করছে কি-না, তাও পরীক্ষা করে দেখা হয়।
তিন প্রজন্মের 'ভোট প্রস্তুতি'
৫৫ বছর বয়সী মাজেদা বেগম ইভিএম দেখেন নি, কোনো ধরনের মহড়াও দেননি। তারপরও আজ বুধবার তিনি ভোট দেবেন নতুন এ পদ্ধতিতে। আমি তো আগে ব্যালটে ভোট দিয়েছি। এবার বউমা আমাকে নিয়ে যাবে। টিপ দিয়েই নাকি ভোট দেওয়া যায়। ভালো তো, ঝামেলা কম মনে হয়।
ইভিএম নিয়ে আগ্রহ থাকলেও মাজেদা বেগমের মেয়ে সেলিনা বেগমের 'ভোট' ব্যালট পেপারের পক্ষে। তিনি বলেন, বয়স্করা তো ইভিএম বোঝে কম। একদিন মহড়া হয়েছে এখানে। অনেকে আবার সন্দেহও করে। ছেলে-মেয়েরা আবার এই পদ্ধতি চায়। আমি মনে করি, আরও প্রচার দরকার ছিল, বলেন তিনি।
অবশ্য সেলিনার ছেলে রায়হান হোসেন নতুন প্রযুক্তির পক্ষে। তিনি বলেন, আগের যুগ নেই। মোবাইল-কম্পিউটার ব্যবহার করছে সবাই। আধুনিক প্রযুক্তিতে আসতেই হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ চাইলে মানসিকতাও সেরকম থাকতে হবে। আমরা প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট দেবো। এটা ভালো উদ্যোগ। এখন যে জায়গায় ইভিএমে ভোট হচ্ছে না, তারা পরে আফসোস করবে।
এবারই প্রথম ভোট দেবেন উপজেলা সদরের বাসিন্দা ফেরদৌস ফারহানা স্বপ্না ও সাথী হোসেন। ইতোমধ্যে ইসির ইভিএম মহড়ায় অংশও নিয়েছেন তারা। এখানে ঝামেলার কিছু নেই। কারচুপিরও সুযোগ নেই। মাত্র ২০ সেকেন্ডে ভোট দেওয়া যাবে বলেন স্বপ্না ।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অর্মিতা সাহা শুধু ইভিএমে ভোট দেওয়ার জন্যই রাজধানী ঢাকা থেকে নিজের এলাকা পূর্বটেংরীতে এসেছেন। তিনি বলেন, "নতুন পদ্ধতিতে ভোট। আগ্রহও বেশি।
ঈশ্বরদী উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামার মাসুদ রানা জানান, প্রয়োজনীয় চাহিদার চেয়ে বেশি ইভিএম পাঠানো হয়েছে। এর ব্যবহার নিয়ে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। ভোটারদের ইভিএমে ভোট দেওয়া খুবই সহজ। প্রতিটি ভোট কক্ষে কীভাবে ভোট দেবে তার লিফলেট থাকবে। কোনো ধরনের ঝামেলার আশঙ্কা নেই।
একই ধরনের মত প্রকাশ করলেন পাকশী রেলওয়ে ডিগ্রি কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তবে যারা ইভিএম পাহারা দেবে, তারা কতোটুকু তা করতে পারবেন, কেউ কেন্দ্র দখল করবে কি না, জোর করে ভোট দেওয়া হয় কিনা- এগুলো এবার বোঝা যাবে।