ধর্মঘটের কারণে ওষুধের দোকানগুলো বন্ধ। আজ রোববার দুপুরে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের সামনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

প্রতিনিধি নওগাঁ: ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নওগাঁ জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক তোফায়েল আহমেদকে বদলি, ঔষধ প্রশাসন ও ভোক্তা অধিদপ্তরের ওষুধ ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধসহ আট দফা দাবিতে সকাল-সন্ধ্যা ধর্মঘট চলছে। বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি (বিসিডিএস) নওগাঁ শাখার আহ্বানে আজ রোববার সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ধর্মঘট পালন করছেন নওগাঁর ওষুধ ব্যবসায়ীরা। এতে রোগী ও স্বজনেরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার বিসিডিএস নওগাঁ শাখার পক্ষ থেকে আট দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নওগাঁ জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। অন্য দাবিগুলোর মধ্যে আছে—চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে আন-রেজিস্টার্ড (অনিবন্ধিত) ওষুধ ও ফুড সাপ্লিমেন্ট লেখা বন্ধ করা, অনিবন্ধিত ওষুধ ও ফুড সাপ্লিমেন্ট বাজারজাত করছে—এমন ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, নতুন ওষুধ ও কসমেটিকস আইন ২০২৩ যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সংশোধন করা এবং যত্রতত্র নিয়মবহির্ভূতভাবে মুদিদোকানের মতো ড্রাগ লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করা।

আজ সকাল থেকে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের সামনের সড়কের উভয় পাশে, কাজীর মোড়, দয়ালের মোড়, পুরাতন হাসপাতাল রোড, বাটার মোড়ের ওষুধের দোকানসহ শহরের বিভিন্ন পাড়ায় গিয়ে সব ওষুধের দোকান বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক স্থানে ওষুধ ব্যবসায়ীদের ওষুধের দোকানের সামনে অবস্থান নিতে দেখে গেছে।

আজ দুপুরে শহরের দয়ালের মোড়ে ওষুধ কিনতে এসে ধর্মঘটের কারণে দোকান বন্ধ পান রেজাউল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ওষুধ ব্যবসায়ীরাই নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ধর্মঘট ডেকেছেন। চিকিৎসক আর ওষুধ দোকানদারেরা কাজ বন্ধ রাখলে মানুষ সবচেয়ে অসহায় হয়ে পড়েন।

নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের সামনে এক রোগীর স্বজন বলেন, আজ সকাল ১০টার দিকে তাঁর সন্তানসম্ভবা বোনের অস্ত্রোপচারের (সিজার) সময় দিয়েছিলেন চিকিৎসক। এ জন্য চিকিৎসক ওষুধ ও চিকিৎসা উপকরণ কিনে আনার জন্য নাম লিখে দেন। শহরের অনেক জায়গা ঘুরে কোনো ওষুধের দোকান খোলা পাননি তিনি। ওষুধের দোকান বন্ধ থাকায় আজ তাঁর বোনের অস্ত্রোপচার হয়নি।

ধর্মঘটের বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিডিএস নওগাঁ শাখার সভাপতি আতাউর রহমান বলেন, ওষুধ ব্যবসা একটি সেবামূলক কাজ। নিজেদের সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়ে ওষুধ ব্যবসায়ীরা ওষুধ সরবরাহ করে থাকেন। তারপরও ঔষধ প্রশাসনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন তাঁরা। স্বনামধন্য চিকিৎসকেরা অনুমোদনহীন ওষুধ ও ওষুধসামগ্রী প্রেসক্রিপশন করছেন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত চিকিৎসক ও অনিবন্ধিত পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানির বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অনেক ওষুধ ব্যবসায়ীর পুঁজি ১ থেকে ২ লাখ টাকা। অথচ ওষুধ কসমেটিকস আইনে একেকটি প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ টাকা জরিমানাসহ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে ওষুধ ব্যবসায়ীদের পক্ষে ব্যবসা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই তাঁরা দ্রুত দাবিগুলো পূরণ না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।