ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী এই হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছে। ১৯ মে, দেশটির পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে | ছবি: ইরানের সংবাদ সংস্থা ইরনা |
পদ্মা ট্রিবিউন ডেস্ক: ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তের জন্য ইরানের উচ্চপর্যায়ের একটি দলকে নির্দেশনা দিয়েছেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাগেরি। এরই মধ্যে বিধ্বস্ত ওই হেলিকপ্টারে রেডিও সংকেত পাঠানোর ‘ট্রান্সপন্ডার’ ছিল না বা বন্ধ ছিল বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে তুরস্ক।
গত রোববার দুপুরে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের ভারজাগান এলাকায় ওই হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। এতে রাইসি ছাড়াও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসাইন আমির আবদোল্লাহিয়ান ও ছয় আরোহী ছিলেন। গতকাল সোমবার সকালে দুর্গম পাহাড়ি জঙ্গলের ভেতরে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটির খোঁজ পাওয়া হয়। এরপর সব আরোহীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে তেহরান।
গতকাল গঠন করা ওই তদন্ত দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইরানের সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার আলী আবদুল্লাহি। দলটি এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে দিয়েছে। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেবে তারা। এদিকে তদন্তে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়ে রাশিয়া বলেছে, প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত তারা।
রোববার হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় ঘটনাস্থলে ঘন কুয়াশা ও বৈরী আবহাওয়া ছিল। সে সূত্র ধরে সরকারি গণমাধ্যমে প্রাথমিকভাবে এটুকুই বলা হয়েছে, খারাপ আবহাওয়ার কারণে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বেল-২১২ মডেলের হেলিকপ্টারটি বেশ পুরোনো ছিল। কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে ওই দেশ থেকে বহু বছর হেলিকপ্টারটির জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি করতে পারেনি ইরান। এর আগে ২০১৮ সালের এপ্রিলে ইরানে একই মডেলের একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রকে দুষছে রাশিয়া
রাইসিকে বহনকারী ওই হেলিকপ্টারে রেডিও সংকেত পাঠানোর ‘ট্রান্সপন্ডার’ ছিল না বা বন্ধ ছিল বলে জানিয়েছে তুরস্ক। হেলিকপ্টারটি উদ্ধারে অংশ নেওয়া তুরস্কের দলের প্রাথমিক তদন্তে এ তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির যোগাযোগমন্ত্রী আবদুল কাদির উরালো লু।
তুরস্কের এই মন্ত্রী বলেন, হেলিকপ্টারের ট্রান্সপন্ডার থেকে পাঠানো সংকেত থেকে সেটির উচ্চতা ও অবস্থান সম্পর্কে তথ্য জানা যায়। বিধ্বস্ত হওয়া হেলিকপ্টারটি থেকে এমন সংকেত খোঁজার চেষ্টা করেছিল তুরস্ক। তবে তা পাওয়া যায়নি। মনে করা হচ্ছে, দুর্ভাগ্যবশত ওই হেলিকপ্টারে ট্রান্সপন্ডার ছিল না বা বন্ধ ছিল।
তুরস্কের দেওয়া এই তথ্যও ইরানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পুরোনো হেলিকপ্টার ব্যবহারের বিষয়টি সামনে আনছে। এসব হেলিকপ্টার নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে সরকারকে দুটি রুশ হেলিকপ্টার কেনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ইরানের কর্মকর্তারা। ইরানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জাফরি বলেছেন, রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্র দায়ী। কারণ, দেশটির নিষেধাজ্ঞার কারণে হেলিকপ্টারটির প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনা কঠিন হয়ে পড়েছিল।
একই ভাষ্য রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভেরও। আজ মঙ্গলবার কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় অনুষ্ঠিত সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বেসরকারি আকাশযানের সরঞ্জাম সরবরাহের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মানুষের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছে মার্কিন সরকার।’
বৃহস্পতিবার দাফন, চলছে শোকমিছিল
বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটিতে করে পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজে যাওয়ার কথা ছিল প্রেসিডেন্ট রাইসির। সোমবার তাঁর ও হেলিকপ্টারে থাকা বাকিদের মরদেহ উদ্ধার করে প্রথম নিয়ে যাওয়া হয় সেই তাবরিজ শহরেই। আজ সেখানে মরদেহবাহী কফিনগুলো নিয়ে শোকমিছিল হয়। তাতে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ।
তাবরিজে শোকমিছিল শেষে সবার মরদেহ নেওয়া হয় কোম শহরে। এই শহরটিকে ইরানের দ্বিতীয় পবিত্র শহর হিসেবে ধরা হয়। কোমে শোকমিছিল শেষে মরদেহগুলো রাজধানী তেহরানে নেওয়ার কথা রয়েছে। আগামীকাল বুধবার সেখানে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির নেতৃত্বে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলী শহর মাশহাদে রাইসিকে দাফন করার কথা রয়েছে।