বাসচালককে জরিমানা করার প্রতিবাদে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌরশহরের কলেজ বাজারে সড়কের ওপর বাস রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন পরিবহনশ্রমিকেরা  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে পৌর শহরের কিশোরীর মোড়ে যাত্রীবাহী একটি বাস দাঁড় করিয়ে রাখার অপরাধে চালককে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। রোববার দুপুরে আক্কেলপুরের ইউএনও মনজুরুল আলম তাঁদের জরিমানা করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে পরিবহনশ্রমিকেরা প্রথমে সড়কে আড়াআড়ি বাস রেখে যান চলাচল বন্ধ রাখেন এবং পরে দুই রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন।

 প্রত্যক্ষদর্শী ও বাসশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউএনও মনজুরুল আলম আক্কেলপুর পৌর শহরের ভেতরে কোথায় বাস-অটোরিকশা দাঁড়াবে, তা সাইনবোর্ড লাগিয়ে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আজ বেলা দেড়টার দিকে জয়পুরহাটগামী একটি যাত্রীবাহী বাসে কিশোরীর মোড়ে দাঁড় করিয়ে রেখে যাত্রী ওঠানো হচ্ছিল। ইউএনও মনজুরুল আলম সেখানে এসে বাসচালক আনিছুর রহমানকে ধরে তাঁর গাড়িতে তুলে তাঁর কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। ইউএনও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বাসচালকের এক হাজার টাকা জরিমানা করেন।

বাসচালককে আটকে রাখার খবর মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। পরে আক্কেলপুর-বগুড়া ও আক্কেলপুর-জয়পুরহাট রুটের পরিবহনশ্রমিকেরা খবর পেয়ে বাস নিয়ে ছুটে আসেন। তাঁরা কলেজ বাজারের এমআর সরকারি ডিগ্রি কলেজ গেট থেকে সিদ্দির মোড় পর্যন্ত সড়কের ওপর আড়াআড়িভাবে বাস রেখে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। খবর পেয়ে ইউএনও মনজুরুল আলম ঘটনাস্থলে আসেন। এরপর পরিবহনশ্রমিকেরা ইউএনওর সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।

খবর পেয়ে থানার ওসি ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এরপর সেখান থেকে তিন বাসশ্রমিককে ইউএনওর কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। ইউএনওর কার্যালয়ে জেলা বাস মালিক সমিতির নেতা পতন চৌধুরীকে ডেকে আনা হয়। সেখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোকছেদ আলী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান, নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান এসআই টুটুল হোসেন, আছিয়া খানম সম্পা ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে বাসচালকদের সেখান থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইউএনও কার্যালয়ে বৈঠকের পর বাস মালিক সমিতির নেতাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে বাসচালকেরা সড়ক থেকে বাস সরিয়ে টার্মিনালে নিয়ে যান। এরপর তাঁরা আক্কেলপুর-জয়পুরহাট ও আক্কেলপুর-বগুড়া রুটে বাস চলাচল বন্ধ রাখেন।

বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, টার্মিনাল থেকে কোনো রুটে বাস ছাড়েনি। টার্মিনালে  শ্রমিকেরা এসে জড়ো হচ্ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে অটোরিকশাচালকেরাও যোগ দেন। এরপর জয়পুরহাট মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সহসাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে বাস টার্মিনাল এলাকায় একটি মিছিল বের করা হয়। ওই মিছিল থেকে পরিবহনশ্রমিকেরা ইউএনও মনজুরুল আলমের বদলি চেয়ে স্লোগান দেন।

বাসচালক আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমি বেলা দেড়টার দিকে যাত্রী নিয়ে জয়পুরহাটের উদ্দেশে যাচ্ছিলাম।  কিশোরীর মোড় বাস থামিয়ে যাত্রী নিচ্ছিলাম। ইউএনও এসে আমাকে নামিয়ে তাঁর গাড়িতে তুলে উপজেলায় নিয়ে আমার এক হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে বাসচালকেরা সড়ক অবরোধ করেন।’

 বাসচালক রাজু আহাম্মেদ চৌধুরী বলেন, ‘কয়েক দিন আগে রেলগেট এলাকায় বাস দাঁড়ানোর অপরাধে ইউএনও আমার দুই হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।’
 অটোরিকশাচালক সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘ইউএনও সাহেব আমাদের গালিগলাজ করে চাবি কেড়ে নেন। ইউএনওর সঙ্গে থাকা আনসার সদস্যরা মারমুখী আচরণ করেন।’  

জয়পুরহাট মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সহসাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আক্কেলপুর পৌর শহরের বাস চলাচলের সময় ইউএনও প্রায় দিনই বাসচালকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছিলেন। ইউএনও সাহেব আজকে একজন বাসচালককে তাঁর কার্যালয়ে ধরে নিয়ে জরিমানা করেছেন। ইউএনওর এমন আচরণের প্রতিবাদে আমরা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছি। আমরা ইউএনওর বদলি দাবি করছি। আগামীকাল বাস চলাচল করবে কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

  আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নয়ন হোসেন বলেন, আজ দুপুরে কলেজ বাজারে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ের সামনে বাস রেখে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন পরিবহনশ্রমিকেরা। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে।

  ইউএনও মনজুরুল আলম বলেন, সড়কের ওপর যাত্রীবাহী বাস দাঁড় করিয়ে রেখে যানজট সৃষ্টি করছিল। এ ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বাসচালকের এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বাসচালক জরিমানার টাকা দিতে পারেননি। এ কারণে তাঁকে উপজেলা পরিষদে আনা হয়েছিল। জরিমানার টাকা দেওয়ার পর বাসচালককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।