নাদিমা জাহান: বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার ফিলিস্তিনিদের মুক্তিসংগ্রামের একনিষ্ঠ সমর্থক। ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন বাংলাদেশের জনগণ। অনেকে ইসরায়েল ও গাজা যুদ্ধকে সমর্থন করে-এমন প্রতিষ্ঠানের পণ্য বর্জন করছেন।
ইসরায়েলবিরোধী এই প্রতিবাদে এক অনন্য নীরব সংযোজন বাংলাদেশের তিনজন সরকারি কর্মকর্তার প্রতিবাদ। তাঁরা দেখিয়েছেন, একটি বাক্য উচ্চারণ না করেও প্রতিবাদ করা যায় অত্যন্ত কার্যকর ও জোরালোভাবে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কর অঞ্চল-১১ ঢাকার কর কমিশনার সামিয়া আখতারের নেতৃত্বে পোশাকের মাধ্যমে প্রতিবাদের এক অনন্য উদাহরণ তৈরি হয়েছে। তাঁর দপ্তরের উপ-কর কমিশনার রকিবুল হাফিজ ও জহিরুল ইসলাম এই প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। তাঁরা তিনজনই ফিলিস্তিনের পতাকার রং আর নকশায় বিশেষ বার্তাযুক্ত পোশাক পরে নিজেদের দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করছেন। এর মাধ্যমে তাঁরা ফিলিস্তিনে চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসন আর নিপীড়নের শিকার সাধারণ জনগণের প্রতি সহমর্মিতা ও সংহতি জানিয়ে আসছেন।
কর কমিশনার সামিয়া আখতার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিলিস্তিনে চলমান হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রথম থেকে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা প্রয়াত ইয়াসির আরাফাত আর ফিলিস্তিনের জনগণের অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন। সে ধারাবাহিকতায় একটি সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের কর্মকর্তা হিসেবে ফিলিস্তিনের প্রতি সরকারের সমর্থন ও সহমর্মিতার জায়গাটি সবার সামনে তুলে ধরার জন্য এই প্রয়াস।’
গত ২৮ এপ্রিল সামিয়া আখতারের কার্যালয়ে গিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। এদিন তিনি সাদা সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে ফিলিস্তিনের পতাকার কালো, লাল আর সবুজ রঙে বিশেষ বার্তা লেখা সুদৃশ্য সাদা শ্রাগ আর স্কার্ফ পরেছেন। তাতে ইংরেজিতে দুটি বার্তা লেখা হয়েছে। বার্তা দুটি হলো, ‘মাই হার্ট একস ফর প্যালেস্টাইন’ (ফিলিস্তিনের জন্য আমার হৃদয় ব্যথিত) ও ‘সি ইউ অন দ্য জাজমেন্ট ডে’ (শেষ বিচারের দিন দেখা হবে)। স্কার্ফেও ইংরেজিতে লেখা রয়েছে, ‘হেল্প দ্য বিলিভার্স ইন প্যালেস্টাইন’ (ফিলিস্তিনে বিশ্বাসীদের সহায়তা করুন)।
সেগুনবাগিচায় কর অঞ্চল-১১ ঢাকার কার্যালয়ে কর কমিশনার সামিয়া আখতার। ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে এই নকশার পোশাক তাঁর | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
এদিন উপ-কর কমিশনার রকিবুল হাফিজ ও জহিরুল ইসলাম পরেছেন শ্রাগের মতো প্রিন্টের ফুলহাতা শার্ট। সেই সঙ্গে তাঁরা একটি ব্যানারও ডিজাইন করেছেন, তাতে আরবি ও ইংরেজিতে লেখা রয়েছে ‘ও আল্লাহ, হেল্প দ্য বিলিভার্স ইন প্যালেস্টাইন’। (হে আল্লাহ, ফিলিস্তিনে বিশ্বাসীদের সাহায্য করুন)।
এই অনন্য প্রতিবাদ প্রসঙ্গে কর কমিশনার সামিয়া আখতার বললেন, জনগণ সব সময় যেকোনো উদ্যোগের ক্ষেত্রে জানতে চান সরকারের ভূমিকা। সেদিক থেকে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি জানানোর এই পদক্ষেপ সবাইকে অনুপ্রাণিত করবে, সেটাই তাঁদের প্রত্যাশা।
গত ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় সাড়ে ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। দেশে দেশে এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ বাড়ছে। এই বিক্ষোভে নতুন মাত্রা এনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন লন্ডন, প্যারিস ও রোম থেকে সিডনি, টোকিও, বৈরুতসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরের মুক্তিকামী মানুষ। গাজায় হামলা বন্ধের পাশাপাশি ইসরায়েল ও গাজা যুদ্ধকে সমর্থন করে, এমন সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিও জোরদার হচ্ছে।