খুব সহজ হলেও ভালো ছবি তোলার জন্য আরও কিছু বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিতে হয় । মডেল: নুসরাত অনি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

জীবনযাপন ডেস্ক: সবার হাতের কাছেই স্মার্টফোন আর ক্যামেরা থাকায় ছবি তোলা বর্তমানে শুধু ক্লিকের ব্যাপার মাত্র। তবে ছবি তোলা এখন খুব সহজ হলেও ভালো ছবি তোলার জন্য আরও কিছু বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিতে হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক অসাধারণ সব ছবি তোলার ৮টি উপায়।

কল্পনাশক্তি বৃদ্ধি করা
ভালো ছবি তোলার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কল্পনাশক্তি আর সৃজনশীলতা। কোন ছবিটি কীভাবে তুললে ভালো হবে, ছবির মূল বিষয় বা ছবির পেছনের গল্প কীভাবে ভালো ফুটিয়ে তোলা যাবে এগুলো যত বেশি বোঝা যাবে ছবি ততই সুন্দর হবে। আর এজন্য নামকরা সব চিত্রগ্রাহকদের তোলা ছবি দেখতে হবে। ছবিটি কোথায় এবং কীভাবে তোলা, কেন ছবিটি নজর কাড়ছে, ছবির পেছনের গল্পটি কীভাবে ফুটে উঠছে এই বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে অনেক কিছু শেখা যায়।

ভালো কম্পোজিশন তৈরি
সুষ্ঠু কম্পোজিশন বলতে বোঝায় ছবির ভেতরের সব কয়টি উপাদানকে দৃষ্টিনন্দন উপায়ে সাজানো। এক্ষেত্রে 'রুল অফ থার্ড' সবচেয়ে জনপ্রিয় কৌশল। এটি হলো ছবির পুরো ফ্রেমকে সমান ৩ ভাগে ভাগ করে নিয়ে মূল বিষয়টির অধিকতর অংশকে ছবির এক-তৃতীয়াংশ সমান জায়গা দিয়ে বাকি অংশ অপেক্ষাকৃত খালি রাখা। এতে করে ছবিটি দৃষ্টিনন্দন হয় এবং মূল বিষয়টির সঙ্গে পারিপার্শ্বিকতার ভারসাম্য বজায় থাকে।

আলোর সঠিক ব্যবহার
আলোর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য ছবির বিষয়বস্তু আর ক্যামেরার সেটিং ২ দিকেই লক্ষ্য রাখতে হবে। ক্যামেরায় শাটার স্পিড, এপারেচার এবং আইএসও—এই ৩টি সেটিংস পরিবর্তনের মাধ্যমে ছবির আলোর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

অনেক সময় ছবির মূল বিষয়বস্তুর তুলনায় এর পেছনের আলোর পরিমাণ অনেক বেশি প্রকট হতে পারে।ফলে সাধারণভাবে তোলা ছবি অস্পষ্ট আসতে পারে। তখন ক্যামেরার এক্সপোজার বা আলোর মাত্রার সেটিং ছবির প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করে নিলে এই সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে।

রং তত্ত্বের ব্যবহার
কখনো কখনো খুব সাধারণ বিষয়বস্তু নিয়ে তোলা ছবিও অসাধারণ হয়ে ওঠে শুধু ছবিতে রং তত্ত্বের সঠিক ব্যবহারের কারণে। কালার হুইল বা রং চক্রকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে ছবিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা সম্ভব। রং চক্রের বিপরীত রংগুলো একে অন্যকে ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করে। যেমন—চক্রে সবুজের বিপরীতে লালের অবস্থান। এজন্যই সবুজ বনের মাঝে লাল ছাতা মাথায় ব্যক্তির ছবি আমাদের দৃষ্টি কাড়ে। আবার অনেক সময় রং চক্রের পাশাপাশি রংগুলো ছবিতে একসঙ্গে ব্যবহার করলেও তা ছবিকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে পারে। 

ছবির মাধ্যমে গল্প বলা
ছবি তোলা প্রথম শুরু করার পর যা দেখতে ভালো লাগে তাই তুলে ছবি তোলার চর্চা শুরু হয়। কিন্তু শুধু সুন্দর ছবি তোলাই যথেষ্ট নয়। ছবির মান বাড়ানোর জন্য একজন চিত্রগ্রাহকের উচিত ছবির পেছনের গল্পকে প্রাধান্য দেওয়া। মনে রাখতে হবে, ছবি একটি সৃজনশীল মাধ্যম আর এর মধ্য দিয়ে যে চিত্রগ্রাহক যত ভালো গল্প বলতে পারবেন তিনি তত বেশি সফল হবেন। যেমন- নিজ শহরের অলিগলিতে ঘুরলেই চোখে পড়বে হাজারো গল্প, যেগুলো ক্যামেরায় তুলে আনা যায়। কিংবা তুলে আনা যেতে পারে শিশু শ্রমিকদের অসহায়ত্বের চিত্র। এ ছাড়াও সফল চিত্রগ্রাহকদের তোলা ছবি দেখে কীভাবে ছবির মাধ্যমে গল্প বলা হয় তা শেখা যেতে পারে।

পরিবেশকে কাজে লাগানো
সবসময় মনের মতো ছবি তোলার অনুকূল পরিস্থিতি পাওয়া যায় না বলে অনেক চিত্রগ্রাহকই সমস্যায় ভোগেন। কিন্তু একটু কৌশলী হলে আসলে যে কোনো পরিবেশকে কাজে লাগিয়েই ভালো ছবি তোলা যায়। যেমন—কোথাও ছবি তুলতে গিয়ে হঠাৎ বৃষ্টি নেমে গেলে ছবি তোলার পরিকল্পনা বাতিল না করে বরং বৃষ্টিকে কাজে লাগিয়েই অসাধারণ সব মুহূর্তের ছবি তোলা যেতে পারে। আবার ভীড়ের মাঝে ছবি তুলতে গেলে সামনে মানুষ এসে পড়লে তখন ভাবতে হবে কীভাবে এই ভীড়কে সঙ্গে নিয়েই একটি প্রাণবন্ত ছবি তোলা যায়। অর্থাৎ যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিকেই নিজের অনুকূলে ব্যবহার করে ভাল ছবি তোলা সম্ভব।

জুম ও ফ্ল্যাশ যথাসম্ভব ব্যবহার না করা
ছবি তোলার ক্ষেত্রে দূর থেকে ডিজিটাল জুম ব্যবহার করে তোলা ছবি সবসময় আশানুরূপ হয় না। কারণ এতে ছবির অনেক সূক্ষ্ম ও খুঁটিনাটি বিষয় স্পষ্টতা হারায়। তাই যদি সম্ভব হয় তবে জুম ব্যবহার না করে লক্ষ্যবস্তুর যতটা সম্ভব কাছে গিয়ে ছবি তোলা উচিত।

আর একই কথা ক্যামেরার ফ্ল্যাশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অন্ধকারে ছবি তোলার সময় ফ্ল্যাশের ব্যবহারে অনেক সময় ছবিকে কৃত্রিম দেখায়। এ ছাড়া এতে ছবি তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত আলো পাওয়া যায় না এবং আলোর অবস্থান নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এজন্য যদি সম্ভব হয় অন্ধকারে ছবি তুলতে হলে সঙ্গে আলাদা আলোর ব্যবস্থা যেমন বাতি, লাইট বা টর্চ ইত্যাদি নেওয়া উচিত।

ভালো মানের ছবি তোলার জন্য বেশ কিছু কৌশল জানতে হবে । মডেল: নুসরাত অনি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ডিভাইসের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে অবগত হওয়া
ভালো ছবি তোলার জন্য ডিভাইস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। কিন্তু এরপরও প্রতিটি ডিভাইসের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। যেমন অনেক ক্যামেরায় অল্প আলোয় ভালো ছবি ওঠে না, আবার অনেক ক্যামেরা প্রতিকূল আবহাওয়াতে খাপ খাওয়াতে পারে না।ডিভাইস নিয়ে হতাশায় না ভুগে বরং এই সীমাবদ্ধতাগুলো নিয়েই কীভাবে ভালো ছবি তোলা যায় সে বিষয়ে মনোযোগী হওয়া উচিত।