জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসা রোগীদের দীর্ঘ সারি। সম্প্রতি তোলা ছবি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের পদ আছে ২৭টি, এর মধ্যে ২৪টি পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। কাগজে-কলমে তিনজন থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র একজন। তিন সপ্তাহ ধরে ওই একজন চিকিৎসক রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। স্ত্রীরোগ, সার্জারি–বিশেষজ্ঞ ও অবেদনবিদ না থাকায় এখানে দীর্ঘদিন ধরে প্রসূতি অস্ত্রোপচারসহ সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ। চিকিৎসকের অধিকাংশ পদই শূন্য থাকায় এখানে এসে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসকসংকটের পাশাপাশি ওষুধসংকটও রয়েছে। চিকিৎসক ও ওষুধসংকটে এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচারের কক্ষও আছে। অথচ বছরের পর বছর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় অস্ত্রোপচার হয় না। এতে অস্ত্রোপচারের জন্য কেনা চিকিৎসাসরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিন সপ্তাহ ধরে চিকিৎসা কর্মকর্তা মাকসুদুল আলম আকন্দ একাই জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগ সামাল দিচ্ছেন। এই হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ২০০-২৫০ জন এবং অন্তর্বিভাগে ৬০–৭০ জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক পদায়নের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ববাবর একটি আবেদনও করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু শফি মাহমুদ। গত ১৭ এপ্রিল তিনি এই আবেদন করেন। চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ওই আবেদনে বলা হয়েছে, এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মোট ২৭ জন চিকিৎসকের অনুমোদিত পদ রয়েছে। অনুমোদিত পদের বিপরীতে তিনজন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। সেই তিনজন চিকিৎসকের একজন প্রশিক্ষণে এবং আরেকজন সহকারী ডেন্টাল সার্জন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। বর্তমানে অনুমোদিত ২৭ জন চিকিৎসকের বিপরীতে একজন চিকিৎসক কর্মরত। ২৪ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কনিষ্ঠ বিশেষজ্ঞের (জুনিয়র কনসালটেন্ট) ১১টি পদ আছে। এগুলো মেডিসিন, সার্জারি, স্ত্রীরোগ, শিশু, অর্থোপেডিকস, নাক-কান-গলা, চর্ম ও যৌন, চক্ষু, অ্যানেসথেসিয়া, ফিজিক্যাল মেডিসিন ও হৃদ্‌রোগ। কয়েক বছর ধরে এসব পদ শূন্য। এর ফলে এখানে এসে রোগীরা যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না। স্ত্রীরোগ–বিশেষজ্ঞ না থাকায় নারীদের সমস্যা বেশি হচ্ছে। এখন এখানে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু শফি মাহমুদ ও চিকিৎসা কর্মকর্তা মাকসুদুল আলম আকন্দ কর্মরত আছেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু শফি মাহমুদ দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকছেন। গত শনিবার থেকে তিনিও দাপ্তরিক কাজে ঢাকায় আছেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ ও বর্হিবিভাগে রোগীদের ভিড়। জরুরি বিভাগ ও বর্হিবিভাগে উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা রোগী দেখছিলেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার (আরএমও) কক্ষে মাকসুদুল আলম ভর্তি হওয়া রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দেখছিলেন। মাকসুদুল আলম বলেন, ‘আমি ছাড়া হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক নেই। এ কারণে জরুরি বিভাগ ও বর্হিবিভাগের গুরুত্বপূর্ণ রোগীদের আমার কাছে পাঠানো হচ্ছে। অন্তর্বিভাগের পাশাপাশি আমাকে জরুরি বিভাগ ও বর্হিবিভাগ সামলাতে হচ্ছে।