ঈশ্বরদীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড, রোজায় জনজীবনে অস্বস্তি

শহরজীবন থেকে শুরু করে গ্রামের মানুষও গরমে অতিষ্ঠ। গরম থেকে স্বস্তি পেতে অনেকেই পুকুর কিংবা খালে গোসল করতে গিয়ে পানিতেই দীর্ঘক্ষণ সময় কাটাচ্ছে। একদল শিশু–কিশোর পুকুরের শীতল পানিতে দুরন্তপনায় মেতেছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: টানা তিন দিন ধরে মাঝারি তাপপ্রবাহের পর আজ শনিবার পাবনার ঈশ্বরদীতে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। আজ বেলা তিনটায় উপজেলায় সর্বোচ্চ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। চলতি মৌসুমের মধ্যে যা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে ৪ ও ৫ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৭-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

মাঝারি থেকে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ বইতে থাকায় রোজার মধ্যে জনজীবনে অস্বস্তি নেমে এসেছে। প্রচণ্ড গরম অনুভূত হওয়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। দাবদাহ থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষ ছাতা মাথায় বা গাড়িতে চলাচল করছেন। কৃষিকাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের অনেককে ক্লান্ত দেহে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে।

আবহাওয়াবিদরা জানান, ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। এ ছাড়া ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ ও ৪২ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রাকে খুব প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ বলা হয়।

চোখে–মুখে পানি ছিটিয়ে শীতল হওয়ার চেষ্টা করছেন এক ব্যক্তি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, ১ এপ্রিল ঈশ্বরদীতে প্রথম মাঝারি তাপপ্রবাহ শুরু হয়। ওই দিন উপজেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে ৪ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ৬ ও ৫ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। তাপমাত্রার হিসাবে টানা দুই দিন মাঝারি তাপপ্রবাহ ছিল। আজ একলাফে ২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়ে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উন্নীত হয়। বইতে থাকে মৌসুমের প্রথম প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ।

গরম থেকে স্বস্তি পেতে পানি পান করছে এক শিশু শিক্ষার্থী | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

এদিকে প্রচণ্ড দাবদাহে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। উপজেলা সদরের গোরস্থান পাড়া এলাকায় ঠাণ্ডু মিয়ার নির্মাণাধীন একটি বাড়িতে কাজ করছিলেন ছয় শ্রমিক। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বোতল থেকে পানি নিয়ে চোখে-মুখে ছিটাচ্ছিলেন। গামছা দিয়ে ঘাম মুছছিলেন। তাঁদেরই একজন মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘১১ বছর ধরে রাজমিস্ত্রির কাজ করছি। আজকের মতো গরম কোনোদিন লাগেনি।’

সত্তরোর্ধ্ব সামসুদ্দিন আলী ঈশ্বরদী বাজারে কলা বিক্রি করেন। বিকেলে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়। গরমে হাঁসফাঁস করা সামসুদ্দিন বলেন, সন্তানেরা আলাদা থাকেন। স্ত্রী আশুরা বেগমকে নিয়ে তাঁর সংসার। তিনি বলেন, ‘ক'দিন ধরে যে-রকম গরম পড়ছে, তাতে মনটা বলে না বাড়ি থেকে বের হই। গরমে বের না হলে খেতে দেবে কে? পেটে খিদে থাকলি কি আর বাড়িতে বসে থাকা যায়?’

ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বলেন, আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শফিকুল ইসলাম শামীম বলেন, তাপপ্রবাহ চলাকালে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের না হওয়া ভালো। এ সময় প্রত্যেককে পানিসহ বেশি বেশি তরল খাবার খেতে হবে। চা-কফি এড়িয়ে ফলমূল খেতে হবে। রোজাদারদের ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন তিনি।

প্রচণ্ড গরমে রিকশা চালিয়ে ক্লান্ত চালক। তাই একটু জিরিয়ে নেওয়া | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন