নেচে-গেয়ে গোদাগাড়ীর ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের বর্ষবরণ

 

পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন উপলক্ষে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের ঐতিহ্যবাহী নাচ-গান পরিবেশন। রাজশাহীর গোদাগাড়ী কাকনহাট পৌর মিলনায়তনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি চাঁপাইনবাবগঞ্জ: ভারতের সাঁওতালি গানের ও বাউলশিল্পী রুবিন কিস্কু তাঁর গান দিয়ে এবং বিজলি মুর্মু ১১টি কলসি মাথায় নিয়ে নাচ পরিবেশন করে মন মাতালেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে উপজেলার কাকনহাট পৌরসভা মিলনায়তনে ভারতের কয়েকজন এবং স্থানীয় বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক দলের অংশগ্রহণে এ অনুষ্ঠান ছিল মনোমুগ্ধকর।

ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ‘মান্ওয়া’ নাট্যদলের সার্বিক সহযোগিতায় গোদাগাড়ী আদিবাসী যুবসমাজ গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আয়োজনে নানাভাবে সহযোগিতা করে স্থানীয় নাগরিক সমাজও। দুটি দিন কাকনহাট ছিল উৎসবমুখর। খোঁপায় ফুল গুঁজে বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীদের অনুষ্ঠানে আসতে দেখা গেছে। বিরাট মিলনায়তন ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। স্থান সংকুলান না হওয়ায় মিলনায়তনের পাশে খোলা প্রাঙ্গণেও ছিল বহু নারী-পুরুষের ভিড়। পর্দায় তাঁদের অনুষ্ঠান দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়।

দুই দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান ভারতের শান্তিনিকেতনের রুথিন কিস্কু ও মেদিনীপুরের বিজলি মুর্মু ছাড়াও শান্তিনিকেতনের সাঁওতালি গানের শিল্পী কেরানী হেম্ব্রম, মেদিনীপুরের বাউল সংগীতশিল্পী রোমি মণ্ডল একাধিক গান গান। এ ছাড়া স্থানীয় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সাঁওতাল, ওঁরাও, গোড়াইত, মাহালি, মাল পাহাড়ি, মুন্ডা, কোল, রবিদাস, মাহাতো ও লহড়া সাংস্কৃতিক দল তাদের ঐতিহ্যবাহী নাচ-গান পরিবেশন করে। মান্ওয়া নাট্যদল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের অধিকারভিত্তিক নাটক ‘জাতের বড়াই’ ও ‘স্বীকৃতি’ পরিবেশন করে।

নাট্যদল ও আয়োজক কমিটির সভাপতি জয়েন মুর্মু বলেন, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষেরা উৎসবপ্রিয়। চৈত্র ও বৈশাখ মাসে তাঁদের নানা আয়োজন থাকে। বৈশাখকে সামনে রেখে চৈত্র মাসের শেষ দিকের দুই দিন তাই এই আয়োজন করা হয়। এ দুই দিন গোদাগাড়ী, নাচোল ও তানোর উপজেলার দূরদূরান্ত থেকে এসে মানুষ এই আয়োজন উপভোগ করে। দুই দিনে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষের সমাগম হয়েছে।

তবে অনুষ্ঠানের শেষ আধা ঘণ্টা গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে পদপ্রার্থী হতে ইচ্ছুক সাঁওতাল সম্প্রদায়ের হুরেন মুর্মুর নির্বাচনী প্রচারণায় পরিণত হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী হুরেন মুর্মুকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চান বলে মন্তব্য করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনুষ্ঠানে ভারতের শিল্পীদের বাংলাদেশে আনার বিষয়ে হুরেন মুর্মুর ভূমিকাই ছিল মুখ্য। এ বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাচ-গানপ্রিয় মানুষদের বিনোদন দিয়ে মনজয় করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে এ সাংস্কৃতিক আয়োজনে পেছনে ছিলাম। অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সবাইকে একসঙ্গে জানাতে পেরেছি আমার ইচ্ছার কথা। প্রাথমিকভাবে আমি সফল। এ ছাড়া এ পদে এ পর্যন্ত কোনো আদিবাসী নির্বাচিত হননি। এবার মানুষ, বিশেষ করে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষেরা আমাকে ভোট দেবে।’