চট্টগ্রামের চন্দনাইশ শাহ জাহাঁগিরিয়া শাহসুফি মমতাজিয়া দরবার শরীফে আজ বুথবার ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
নিজস্ব প্রতিবেদক: সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে আজ বুধবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হচ্ছে। এসব স্থানে ঈদের জামাতে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেছেন। করেছেন ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়, কোলাকুলি। নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে এভাবে মাদারীপুর, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী ও সাতকানিয়া, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, চাঁদপুর, মতলব উত্তর ও ধর্মপাশাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদ উদযাপন করা হচ্ছে।
মাদারীপুর: মাদারীপুরে ২৫টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ ঈদ উদযাপন করছে। জেলার সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিনের তাল্লুক গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। সেখানে আজ সকাল সাড়ে ৯টায় ঈদের প্রধান জামাত পড়ান তাল্লুক গ্রামের মৌলভি বাড়ির মসজিদের ইমাম মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সুরেশ্বর দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠাতা হজরত জান শরিফ শাহ্ সুরেশ্বরীর (রহ.) অনুসারীরা প্রায় দেড় শ বছর আগ থেকে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখেন এবং ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালন করে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় চাঁদ দেখা সাপেক্ষে সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে মাদারীপুর সদর উপজেলার চরকালিকাপুর, মহিষেরচর, পূর্ব পাঁচখোলা, জাজিরা, কাতলা বাহেরচর, তাল্লুক, চরগোবিন্দপুর, পখিরা, খোয়াজপুর, দৌলতপুর, কালিকাপুর, হোসনাবাদ, রঘুরামপুর, আংগুলকাটা, হাজামবাড়ি, বাহেরচর, কেরানীরবাট, রমজানপুর, কয়ারিয়া, রামারপুল, সাহেবরামপুর, আন্ডারচর, খাসেরহাটসহ জেলার ২৫টি গ্রামের মানুষ ঈদ উৎসব পালন করছে।
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মির্জাখীল দরবার শরিফের অনুসারীরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। আজ সকাল ১০টায় তাঁরা মির্জাখীল দরবার শরিফের খানকাহ মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। পাশাপাশি আনোয়ারা ও বাঁশখালীসহ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার শতাধিক গ্রামে ঈদ উদযাপন করা হয়। সাতকানিয়ার মির্জাখীল দরবার শরিফের খানকাহ মাঠে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে হজরত ইমামুল আরেফীন মাওলানা মুহাম্মদ মকছুদুর রহমান ইমামতি করেন।
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় শেষে মুনাজাত করছেন মুসল্লিরা। আজ বুধবার সকালে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার মির্জাখীল দরবার শরীফ প্রাঙ্গণে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
দরবার সূত্র জানায়, সাতকানিয়া উপজেলার মির্জাখীল, সোনাকানিয়া, গারাঙ্গিয়া, চরতি, মনেয়াবাদ, বাজালিয়া, কাঞ্চনা, আমিলাইশ, খাগরিয়া ও গাটিয়াডাঙ্গা, লোহাগাড়া উপজেলার কলাউজান, বড়হাতিয়া, পুটিবিলা, চুনতি ও চরম্বা, বাঁশখালী উপজেলার কালিপুর, জালিয়াপাড়া, ছনুয়া, মক্ষিরচর, চাম্বল, শেখেরখীল, ডোংরা, আনোয়ারা উপজেলার তৈলারদ্বীপ, বরুমচড়া, পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও, বাহুলী, ভেল্লাপাড়াসহ শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ আজ ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন।
এ ছাড়া বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, হাটহাজারী, সন্দ্বীপ, ফটিকছড়ি, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, হাতিয়া, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও ভারত, পাকিস্থান, মিয়ানমারসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যেখানে মির্জাখীল দরবার শরিফের অনুসারীরা আছেন, তাঁরা আজ ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার মির্জাখীল দরবার শরীফ প্রাঙ্গণে ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে কোলাকুলি করছেন মুসল্লিরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
মির্জাখীল দরবার শরিফের মুখপাত্র মোহাম্মদ মছউদুর রহমান বলেন, ‘আমরা হানাফি মাজহাবের অনুসারী হিসেবে সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনা শরিফে তথা আরব বিশ্বে চাঁদ দেখা যাওয়ার খবর পেয়ে আজ আমরা ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছি।’
পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর জেলার অন্তত ২২টি গ্রামে ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হচ্ছে।
পটুয়াখালী: সদর উপজেলার বদরপুর দরবার শরিফের পীর সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছেন। আজ সকাল ৯টায় প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে পটুয়াখালীর সদর উপজেলার বদরপুর গ্রামের বদরপুর দরবার শরিফ প্রাঙ্গণের বদরপুর দরবার শরিফ জামে মসজিদে। এই ঈদের জামাতের ইমামতি করেছেন মসজিদের প্রধান খতিব মাওলানা মোহাম্মদ শফিকুল গনি। নামাজ শেষে বিশ্ব মুসলিম উম্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
খতিব মাওলানা মোহাম্মদ শফিকুল গনি জানান, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে চাঁদ দেখার সংবাদ পাওয়া গেলে, তাঁরা ঈদ উদযাপন করতে পারেন। গতকাল মঙ্গলবার বিভিন্ন দেশে চাঁদ দেখা গেছে। তাই তাঁরা আজ পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন।
পটুয়াখালীর সদর উপজেলার বদরপুর গ্রামের বদরপুর দরবার শরিফের পরিচালক মোহাম্মদ নাজমুস সায়াদাত আখন্দ জানান, প্রতিবছরই তাঁদের ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় বদরপুর গ্রামে। এই গ্রাম ছাড়া জেলার সদর উপজেলার ছোট বিঘাই; গলাচিপা উপজেলার সেনের হাওলা, পশুরীবুনিয়া, নিজ হাওলা ও কানকুনি পাড়া; বাউফল উপজেলার মদনপুরা, শাপলাখালী, বগা, ধাউরাভাঙ্গা, সুরদী, সাবুপুরা ও আমিরাবাদ এবং কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া, নিশানবাড়িয়া, মরিচবুনিয়া, উত্তর লালুয়া, মাঝিবাড়ি, টিয়াখালীর ইটবাড়িয়া, পৌরশহরের নাইয়াপট্টি, বাদুরতলী, মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের সাফাখালীসহ অন্তত ২২ গ্রামের বদরপুর দরবার শরিফের অনুসারী কয়েক হাজার পরিবার আজ ঈদ উদযাপন করছে।
পিরোজপুর: পিরোজপুর মঠবাড়িয়া, নাজিরপুর ও কাউখালী উপজেলার কয়েক শ পরিবার আজ ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঠবাড়িয়া উপজেলার পূর্ব সাপলেজা, ভাইজোড়া, কচুবাড়িয়া, খেতাছিড়া, বাদুরতলী ও চড়কগাছিয়া গ্রামের কয়েক শ পরিবার, কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠী ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামের ৪০টি পরিবার, নাজিরপুর উপজেলার শেখমাটিয়া ইউনিয়নের ৭০টি পরিবার আজ ঈদ উদযাপন করছে।
সকাল ১০টায় মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের ভাইজোড়া গ্রামের খোন্দকার বাড়িতে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন আমির আলী মুন্সি। এ ছাড়া আটটায় উপজেলার কচুবাড়িয়া গ্রামের হাজী ওয়াহেদ আলী হাওলাদার বাড়িতে মৌলভি হায়দার আলীর ইমামতিতে ঈদের আরও একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুরের নাড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর গ্রামের মরহুম হজরত মাওলানা জান শরিফ ওরফে শাহে আহম্মদ আলীর অনুসারী উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের পূর্ব সাপলেজা, ভাইজোড়া, কচুবাড়িয়া, খেতাছিড়া, বাদুরতলী ও চড়কগাছিয়া গ্রামের কয়েক শ পরিবার ১৩০ বছর ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালন করে আসছে। স্থানীয়ভাবে তারা সুরেশ্বরী সম্প্রদায় হিসেবে পরিচিত হলেও মূলত তাঁরা হানাফি মাজহাবের অনুসারী।
কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠী গ্রামের বেলতলা মোল্লাবাড়ি জামে মসজিদে সকাল আটটায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে মাওলানা মহিউদ্দিন ইমামতি করেন। ১০ বছর ধরে আহলে সুন্নাত আল জামায়াতের অনুসারী ৪০টি পরিবার সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছে।
চাঁদপুর: চাঁদপুরের অর্ধশত গ্রামে আজ ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হচ্ছে। সকাল ৯টায় হাজীগঞ্জ সাদ্রা দরবার শরিফে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন দরবার শরিফের বর্তমান পীর মুফতি আল্লামা যাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানী।
আল মাদানী বলেন, ‘কোরআন ও হাদিসের আলোকে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আমরা রোজা পালন ও ঈদুল ফিতর উদযাপন করি। আজ সৌদি আরব, পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় চাঁদ দেখা গেছে। আমরা এক দিন আগে ৩০ রোজা পূর্ণ করেছি।’ আজ সকাল ৯টায় সাদ্রা মাজার কমপ্লেক্স মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন পীর বাকী বিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী। এদিকে সকাল ১০টায় ফরিদগঞ্জের টোরা মুন্সিরহাট জামে মসজিদে ঈদের সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করবেন মাওলানা আকরাম হোসেন।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মাথাভাঙা, আইটাদী, লতুরদী, পচানী, সাড়ে পাঁচানী, দশানী, মোহনপুর, এখলাশপুর, বেলতলী ও মোহাম্মদপুর গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার লোক আজ ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন।
সুনামগঞ্জ (ধর্মপাশা): সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার দশধরী, ধর্মপাশা উত্তরপাড়া, রাধানগর, সৈয়দপুর, কান্দাপাড়া, গাছতলা, জামালপুর, রাজনগর, বাহুটিয়াকান্দা, মেউহারী, মহদীপুর ও মগুয়ারচর গ্রামের সুরেশ্বরী দরবার শরিফের অনুসারীরা আজ পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বরী দরবার শরিফের ভক্তরা উপজেলার দুটি স্থানে পৃথক পৃথক সময়ে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন। উপজেলার দশধরী গ্রামে খানকায়ে সুরেশ্বরী দরবার শরিফের কক্ষে আজ সকাল নয়টার দিকে ও ধর্মপাশা উত্তরপাড়া গ্রামে খানকায়ে সুরেশ্বরী দরবার শরিফের কক্ষে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঈদুল ফিতরের দুটি জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়।
ধর্মপাশা উত্তরপাড়া খানকা শরিফের কক্ষে ঈদের নামাজ পড়ান ওই খানকার খতিব মাওলানা রিফাত নূরী আল মুজাদ্দেদী। অপর দিকে দশধরী খানকা শরিফের কক্ষে ঈদের নামাজ পড়ান ওই খানকার খতিব মো. পলাশ মিয়া।
মো. পলাশ মিয়া বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ২৭ বছর ধরে দশধরী গ্রামের খানকা শরিফে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। খানকার খতিব মাওলানা রিফাত নূরী আল মুজাদ্দেদী বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে এক যুগ ধরে ধর্মপাশা উত্তরপাড়া গ্রামে খানকা শরিফে ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।