কুড়িগ্রামে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৯৫ টাকায় বিক্রি করছেন সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন। শনিবার সকালে উলিপুর উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের পাঁচপীর বাজারে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের পাঁচপীর বাজারে ৫৯৫ টাকায় ১ কেজি গরুর মাংস বিক্রি করছে একটি সংগঠন। শুধু তা–ই নয়, ৩০ টাকা দিয়েও গরুর মাংস কেনা যাচ্ছে এখান থেকে। পবিত্র রমজান মাসে মানুষ যাতে কম দামে গরুর মাংস কিনতে পারেন, সে জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনটি। এ ছাড়া দরিদ্র ও অসহায় পরিবারগুলো যাতে স্বল্প পরিমাণে হলেও গরুর মাংসের স্বাদ নিতে পারে, সে জন্য তাদের এ আয়োজন।
উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাজারে গরুর মাংসের চাহিদা বেশি এবং তা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থাকায় তাঁরা স্বল্প মূল্যে গরুর মাংস বিক্রি শুরু করেছেন। আজ শনিবার প্রথম দিনে মাত্র ২ ঘণ্টায় ৩০০ কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে। জনপ্রতি সর্বোচ্চ ১ কেজি থেকে সর্বনিম্ন ১০০ গ্রাম পরিমাণেও মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। মানুষের চাহিদা থাকলে ঈদের দিন পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলমান থাকবে বলেও তাঁরা জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বপ্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সার্বিক সহযোগিতায় স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সুলভ মূল্যে গরুর মাংস বিক্রি করছে। বাজারদর থেকে কেজিতে ১২৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে এসব মাংস। সর্বোচ্চ ১ কেজি থেকে সর্বনিম্ন ১০০ গ্রাম পর্যন্ত মাংস বিক্রি করা হচ্ছে।
বাজার থেকে কেজিপ্রতি ১২৫ টাকা কম মূল্যে মাংস বিক্রি করেও কোনো লোকসান হয়নি দাবি করে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সাজ্জাত হোসেন বলেন, ‘রমজান মাস এলেই গরুর মাংসের চাহিদা বেড়ে যায়। সেই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মাংসের দাম বাড়িয়ে দেন। এতে করে সাধারণ মানুষ গরুর মাংস কিনে খেতে পারেন না। আমরা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার কথা চিন্তা করে স্বল্প মূল্যে গরুর মাংস বিক্রি শুরু করেছি। বাজারমূল্যের চেয়ে কেজিতে ১২৫ টাকা কম রাখলেও আমাদের কোনো লোকসান হয়নি।’
সাজ্জাত হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা একজন ব্যক্তির কাছে সর্বোচ্চ ১ কেজি এবং সর্বনিম্ন ১০০ গ্রাম মাংস বিক্রি করেছি। তবে কেউ কেউ মাত্র ৫০ টাকা ও ৩০ টাকা নিয়েও আমাদের কাছে মাংস কিনতে এসেছেন। যাঁরা ৩০ টাকা নিয়ে এসেছেন, তাঁদেরকেও মাংস দেওয়া হয়েছে। আমরা কাউকে ফিরিয়ে দিইনি।’
কুড়িগ্রামে উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নে স্বল্পমূল্যের গরুর মাংসের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
আজ সকাল সাড়ে ১০টায় সরেজমিনে উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের পাঁচপীর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কের পাশে প্যান্ডেল করে দোকান সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মাংস কিনতে আসা মানুষজন সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। দুই দিকে খোলা ভ্রাম্যমাণ এই দোকানটির স্বেচ্ছাসেবকেরা কেউ মাংস ডিজিটাল স্কেলে ওজন করছেন, আবার কেউ প্যাকেটজাত করছেন। শুধু হতদরিদ্র মানুষই নন, বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ এই স্বল্প মূল্যের গরুর মাংসের হাট থেকে মাংস কিনছেন। পাঁচপীর বাজারেই কসাইদের দোকানে গরুর মাংস ৭২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কম দামের কথা শুনে স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের দোকানে পাঁচপীর গোড়াই মাস্টারপাড়া থেকে মাংস কিনতে এসেছেন মোর্সেদা খাতুন। তিনি ৬০ টাকা দিয়ে ১০০ গ্রাম মাংস কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘স্বামী ঢাকায় মজুরির কাজ করেন।বাসায় ছোট একটি ছাওয়া (সন্তান) আছে। কিছুদিন থেকে সে গরুর গোস্ত খাওয়ার বায়না ধরেছে। বাজারে গরুর গোস্তের দামে আগুন। তা ছাড়া ওমরা(কসাই) কম টাকার গোস্ত বিক্রি করে না। এট্যায় ৬০ টাকায় গরুর গোস্ত কিনলাম। আজ খুব খুশি লাগছে।’
রাজারহাট উপজেলার ফরকেরহাট থেকে গরুর মাংস কিনতে এসেছেন মো. রোস্তম আলী। তিনি বলেন, ‘পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকে মাংস কিনতে এসেছি। বাজারের মাংসের থেকে এখানে দাম কেজিতে ১২৫ টাকা কম। তা ছাড়া বাজারের মাংসে বারবার পানি ছিটায় এতে করে মাংসের ওজন বেড়ে যায়। লাইনে দাঁড়িয়ে টাটকা মাংস কিনলাম। এই স্বেচ্ছাসেবকেরা তো ব্যবসায়ী নন, তাই এখানে কম দামে ভালো মানের মাংস পাইলাম।’
স্বপ্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন একটি অরাজনৈতিক সামাজিক স্বেচ্ছাসেবামূলক সংগঠন। এই সংগঠনের তরুণ সদস্যরা গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় সহযোগিতা করেন। রমজান মাস উপলক্ষে বাজারে গরুর মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা স্বল্প মূল্যে গরুর মাংস বিক্রির প্রস্তাব করেন। আমি তাঁদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছি। স্বল্প মূল্যে মাংস বিক্রি করে আমাদের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার কোনো চিন্তা নেই। আমরা রমজান মাসে যাতে সব শ্রেণির মানুষ গরুর মাংস কিনতে পারেন, সে জন্য এ আয়োজন করেছি।’