ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা দুই দিনের সফরে আজ রোববার সকালে ঢাকায় এসেছেন। সকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন | ছবি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সৌজন্যে

কূটনৈতিক প্রতিবেদক: বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের বার্তা নিয়ে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা দুই দিনের সফরে আজ রোববার সকালে ঢাকায় এসেছেন। সকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। সফরের প্রথম দিন বিকেলে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। দুই মন্ত্রীর আলোচনা শেষে দুটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুই দিনের সফরের প্রথম দিনে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা দুপুরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু হোটেল ইন্টারকনটিনেন্টালে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাল সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পরে গাজীপুরে একাধিক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দেখতে যাবেন। দুপুরে ঢাকায় ফিরে তিনি রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বক্তৃতা করবেন। এরপর মাউরো ভিয়েরা ব্যবসায়ীদের একটি সমাবেশে যোগ দেবেন। দুই দিনের সফর শেষ করে কাল রাতে তাঁর ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশে ব্রাজিলের প্রথম কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের মধ্যে দিয়ে সম্পর্ক জোরদারের আভাস রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গত মঙ্গলবার তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের সফরটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে অভিহিত করেছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘ব্রাজিল থেকে আমরা ভোজ্যতেল ও অন্যান্য পণ্য আমদানি করি। দক্ষিণ আমেরিকায় আমাদের রপ্তানি অনেকটাই এখনো আন-এক্সপ্লোরড রয়ে গেছে। ব্রাজিল বড় দেশ, তাদের ক্রয়ক্ষমতাও বেশি। ফলে তাদের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম ঢাকা সফরে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়গুলোই মূলত প্রাধান্য পাবে। ব্রাজিলের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য তিন বছরের মধ্যে ১৫০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে এ মুহূর্তে ২৭০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এর মধ্যে বড় অংশই ব্রাজিল থেকে আমদানি করা ভোজ্যতেল, চিনি ও তুলার পেছনে ব্যয় হয়েছে। ব্রাজিলের পক্ষ থেকে এ সফরে ইথানল রপ্তানি, তুলার রপ্তানি বাড়ানো, পোলট্রি ও ফিশ ফিড বিক্রির বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। সেই সঙ্গে রয়েছে গরুর মাংস রপ্তানির বিষয়টি।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ওষুধ ও তৈরি পোশাক রপ্তানি, ইথানল আমদানি বা দেশে ইথানল উৎপাদনে সহায়তা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সুনীল অর্থনীতি, বিশেষ করে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা ও সামুদ্রিক পর্যটনে সহায়তার ওপর জোর দেওয়া হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে, কোনো রকম শর্ত ছাড়াই এখনই দেশটি থেকে গরুর মাংস কেনা ঠিক হবে না। কারণ, এ মুহূর্তে ঢাকার অভিজাত অনেক এলাকায় আমদানি করা বেশ উন্নত মানের মাংস পাওয়া যায়। পাশাপাশি ব্রাজিল সব সময় সংরক্ষণবাদী নীতি অনুসরণ করে চলে। সে ক্ষেত্রে ব্রাজিল যদি বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের শুল্ক ছাড় দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়, তবে দেশটি থেকে গরুর মাংস আমদানির বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

ব্রাজিলে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. জুলফিকার রহমান বলেন, ব্রাজিলের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের যে সম্ভাবনা, সেটিকে অতীতে কখনোই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এই মুহূর্তে নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা সামগ্রী দেশটি থেকে আমদানির পাশাপাশি ভবিষ্যতে কৃষি, পশুপালন ও প্রতিরক্ষা খাতে ব্রাজিলের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ আছে। এ ছাড়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পাশাপাশি ব্রিকসের মতো জোটে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্রাজিলের ভূমিকা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।