রাজশাহীর একটি হিমাগারে এভাবেই ভারতীয় আলুর বস্তা পরিবর্তন করে পাটের বস্তায় ভরা হচ্ছে। আজ বুধবার দুপুরে রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়া এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: বাজারের ঘাটতি মেটানোর জন্য ভারত থেকে আমাদানি করা আলু রাজশাহীর হিমাগারে মজুত করা হচ্ছে। বস্তা পরিবর্তন করে দেশি আলুর সঙ্গে ভারতীয় আলু হিমাগারে রাখা হচ্ছে।

এদিকে রাজশাহীর বাজারে আলুর দাম বেড়েই যাচ্ছে। আজ বুধবার নগরের সাহেববাজারের কাঁচাবাজারে লাল রঙের আলুর কেজি ৬০ টাকায় উঠেছে। কয়েক দিন আগেও এই আলুর কেজি ৪০ টাকা ছিল।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে এবার ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। গত বছর হয়েছিল ৩৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। গত বছর রাজশাহীতে ১০ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছিল। এবারের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লাখ টন। কম আলু উৎপাদন হওয়ার কারণে রাজশাহীর বেশ কিছু হিমাগারের চার ভাগের এক ভাগ ক্যাপাসিটি (সংরক্ষণের সক্ষমতা) খালি রয়েছে। ভারত থেকে আমদানি করা আলু সেখানে মজুত করা হচ্ছে।

বুধবার দুপুরে নগরের পবা উপজেলার বায়া এলাকার হিমালয় হিমাগারে গিয়ে দেখা যায়, হিমাগারের সামনে শেডের সবটা জুড়ে প্লাস্টিকের লাল বস্তায় ভরা ভারতীয় আলু। আলুর বস্তার গায়ে লাগানো লেবেলে ভারতের বর্ধমানের ঠিকানা লেখা রয়েছে। আকারে বড় ঘিয়ে রঙের এই আলু শ্রমিকেরা ভারতীয় বস্তা বদল করে দেশীয় পাটের বস্তায় ভরছেন।

বস্তা ভরার কাজ তদারক করছিলেন হিমাগারের ব্যবস্থাপক হারুণ-অর-রশিদ। আমদানি করা আলু মজুত করার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজশাহীতে এবার আলুর উৎপাদন কম হয়েছে। অক্টোবরের শেষের বৃষ্টির কারণে আলু ছোট হয়েছিল। তাঁদের হিমাগারের এক–চতুর্থাংশ খালি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমদানিকারকেরা ভারত থেকে আলু আমদানি করছেন। সেখান থেকে তাঁরা সামান্য কিছু আলু পেয়েছেন। সেটাই হিমাগারে রাখছেন। তাঁর জানামতে, জেলার আরও দুটি হিমাগার ভারতীয় আলু নিয়ে আসছে।

ভারতীয় বস্তা বদল করে দেশীয় পাটের বস্তায় আলু ভরছেন শ্রমিকেরা। বুধবার দুপুরে রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়া এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ভারত থেকে আলু আমদানি করার কথা শুনে তানোরের এক আলুচাষি বলেন, রাজশাহীর আলুর মান অত্যন্ত ভালো। সারা দেশে এই আলুর বিশেষ চাহিদা রয়েছে। এখন হিমাগারের মালিকেরা তাঁদের হিমাগার খালি রাখতে চাচ্ছেন না। তাঁরা ভারতে নিম্নমানের আলু এনে ভরে রাখছেন। পরে যখন দাম আরও বেড়ে যাবে, তখন দেশি আলুর সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি করা হবে। এতে রাজশাহীর আলু সম্পর্কে ভোক্তারা বিভ্রান্ত হবেন। আর এতে আলুচাষির চেয়ে ব্যবসায়ীরাই বেশি লাভবান হবেন। তাঁরা ভারত থেকে কম দামে আমদানি করে বেশি দামে বিক্রি করবেন।

আলু আমদানির খবরটি রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে নেই। এই দপ্তরের উপপরিচালক বর্তমানে পদোন্নতি পেয়ে খামার বাড়িতে যোগদান করেছেন। দপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা উম্মে সালমা বলেন, আলু আমদানির খবর তাঁদের কাছে নেই। এই প্রথম শুনলেন। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য আমদানি করা আলু মজুত করা যাবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই।

এ ব্যাপারে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কল্যাণ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও বলেন, ভারত থেকে এখন আলু আমদানির কথা তাঁর জানা নেই।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, আমদানির উদ্দেশ্যই হচ্ছে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা। দাম বেশি হওয়ার কারণেই হয়তো সরকার এ সময়ে আলু আমাদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই আলু সরাসরি বাজারে আসার কথা, যাতে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ অবস্থায় কিছুতেই এই আলু মজুত করা যাবে না। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মজুতদারদের বিরুদ্ধে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার বলে তিনি মনে করেন।