কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতে দল বেঁধে সমুদ্রে নেমে পড়ছে দুই দিন বয়সী কাছিমছানা। শুক্রবার বিকেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি কক্সবাজার: কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের রামুর প্যাঁচার দ্বীপ সমুদ্রসৈকত। গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা। বালুচরে ছেড়ে দেওয়া হয় দুই দিন বয়সী ৩৫০টি কাছিমছানা। দল বেঁধে সব কটি কাছিমছানা নেমে যায় সমুদ্রের পানিতে। একসময় তারা গভীর সাগরের দিকে চলে যায়।

একই সময় মহেশখালীর সোনাদিয়া সৈকতে ২৫০টি ও উখিয়ার মাদারবুনিয়া সৈকতে ১৫০টি কাছিমছানা অবমুক্ত করা হয়। ১৫ মিনিটের মাথায় মোট ৭৫০টি কাছিমছানা সাগরে নেমে যেতে সক্ষম হয়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) কাছিমছানাগুলো সাগরে অবমুক্ত করে। সব কটি কাছিম অলিভ রিডলে প্রজাতির।

নেকমের উপপ্রকল্প পরিচালক শফিকুর রহমান বলেন, আড়াই মাস আগে গভীর সমুদ্র থেকে মা কাছিমেরা সৈকতের বালুচরে এসে ডিম পেড়েছিল। ডিম সংগ্রহ করে তাঁরা বালুচরের প্রজনন হ্যাচারিতে সংরক্ষণ করেছিলেন। গত বৃহস্পতিবার প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতের একটি হ্যাচারিতে ৩৫০টি, সোনাদিয়ার একটি হ্যাচারিতে ২৫০টি ও উখিয়ার মাদারবুনিয়া হ্যাচারিতে ১৫০টি কাছিমছানা জন্ম নেয়। গতকাল বিকেলে সব কাছিমছানা সাগরে অবমুক্ত করা হয়। এর আগে গত ২৩ মার্চ টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সৈকতে ১২২টি এবং ২৭ মার্চ ৭০টি কাছিমছানা অবমুক্ত করা হয়েছিল।

প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতের কাছিমছানা অবমুক্ত করার সময় উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সারোয়ার আলম, নেকমের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন ম্যানেজার মো. আব্দুল কাইয়ুম, বন রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহা প্রমুখ।

নেকমের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি প্রজনন মৌসুমে (ডিসেম্বর-মার্চ) মহেশখালীর সোনাদিয়ায় দুটি, রামুর দরিয়ানগর সৈকতের একটি, উখিয়ার মাদারবুনিয়া সৈকতে একটি ও টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সৈকতে একটিসহ মোট ছয়টি হ্যাচারিতে ১৫ হাজার ২০টি ডিম সংরক্ষণ করা হয়। ১০৮টি মা কাছিম এই ডিম পাড়ে। অবশিষ্ট ডিমগুলো থেকেও আরও কাছিমের ছানা জন্ম নেবে।

নেকমের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন ম্যানেজার মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, কক্সবাজার সৈকতের মাত্র ৩৪টি পয়েন্টে এখন সামুদ্রিক কাছিম ডিম পাড়তে আসছে। এক দশক আগেও ৫২টি পয়েন্টে ডিম পাড়তে আসত কাছিম। সৈকতে মানুষের বিচরণ, বেওয়ারিশ কুকুর ও শিয়ালের উপদ্রব বৃদ্ধি, হইচই, আলোকসজ্জাসহ নানা উৎপাতের কারণে সামুদ্রিক কাছিম ডিম পাড়ার পরিবেশ হারিয়ে ফেলছে। গভীর সাগর থেকে সৈকতে ছুটে আসার সময় মাছ ধরার ট্রলারের জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে শত শত মা কাছিম। সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কাছিম।