বগুড়ার কাহালুর মাদ্রাসাশিক্ষার্থী রেদোয়ান ইসলাম হত্যাকাণ্ডে জড়িত একমাত্র আসামি আবুল কাশেমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বগুড়া: মুঠোফোনে ফ্রি ফায়ার গেম ডাউনলোডের কথা বলে ডেকে নিয়ে বগুড়ার কাহালু উপজেলায় দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী রেদোয়ান ইসলামকে (১৬) কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। রেদোয়ানের এক বন্ধু এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। আজ শনিবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার (এসপি) সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী।

পুলিশ সুপার বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত একমাত্র আসামি আবুল কাশেমকে (১৯) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবুল কাশেম তাঁর বন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনা, হত্যার কারণ এবং হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য আবুল কাশেমকে আদালতে পাঠানো হবে বলে জানান এসপি।

শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে কাহালু উপজেলার পাতানজো গ্রামে তারাবিহর নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বাড়ি ফেরার পথে শিক্ষার্থী রেদোয়ান ইসলাম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের পাতানজো গ্রামের মিরাজুল ইসলামের ছেলে রেদোয়ান এ বছর দুর্গাপুর এনায়েতউল্লাহ দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।

কাহালু থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল পাতানজো জামে মসজিদে তারাবিহর নামাজ শেষে বাড়ি ফিরছিল রেদোয়ান। এ সময় তাকে গলা কেটে ও কুপিয়ে হত্যার পর লাশ ধানখেতে রেখে যায়। রাত ১০টার দিকে স্থানীয় লোকজন রেদোয়ানের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, হত্যাকাণ্ডের শিকার রেজোয়ান এবং গ্রেপ্তার আসামি আবুল কাশেম দুজনই পাতানজো পূর্বপাড়ার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা মুঠোফোনে ফ্রি ফায়ার গেমে আসক্ত। এসপি বলেন, হত্যাকাণ্ডের সাত মাস আগে আসামি আবুল কাশেম তাঁর বন্ধু রেদোয়ান ইসলামের কাছ থেকে ১১ হাজার টাকায় একটি স্মার্টফোন কেনেন। পরে রেদোয়ান ফোনটি ফেরত নেয়। ফোন বাবদ দেওয়া ১১ হাজার টাকা রেদোয়ানের কাছে ফেরত চান আবুল কাশেম। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য ও ক্ষোভ তৈরি হয়। ক্ষোভ থেকে রেদোয়ানকে হত্যার পরিকল্পনা করেন কাশেম। পরিকল্পনা অনুযায়ী, একটি ধারালো হাঁসুয়া কিনে রাস্তার পাশে একটি গাছে লুকিয়ে রাখেন।

পুলিশ সুপার বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী আবুল কাশেম শুক্রবার তারাবিহর নামাজের পর বন্ধু রেদোয়ানকে মুঠোফোনে ফ্রি ফায়ার গেম ডাউনলোড করে দেওয়ার কথা বলে ডেকে নেন। এরপর রেদোয়ান মনোযোগ দিয়ে বন্ধুর মুঠোফোনে গেমটি ডাউনলোড দেওয়ার কাজে লেগে পড়ে। এ সুযোগে আসামি কাশেম আগে থেকে লুকিয়ে রাখা হাঁসুয়া দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে রেদোয়ানকে কুপিয়ে হত্যা করেন। এরপর হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাঁসুয়া নর্দমায় লুকিয়ে রাখেন। এরপর লাশ ফেলে কাশেম ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণ করে ঘটনার পরপরই অভিযান চালিয়ে আবুল কাশেমকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী। তিনি বলেন, আবুল কাশেম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য রাজি হয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ১১ হাজার টাকাই মূল কারণ, নাকি পারিপার্শ্বিক কোনো ঘটনা আছ তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।