ম্যাচ জয়ের পর শশাংক সিংয়ের উচ্ছ্বাস | বিসিসিআই |
খেলা ডেস্ক: ‘এ জীবন কেন এত রং বদলায়’—আইপিএলের ম্যাচগুলো যেন বাংলা এই গানের মতোই! একেকটা ম্যাচের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকে রোমাঞ্চ। ক্ষণে ক্ষণে বদলায় রং, ঘুরে যায় ম্যাচের চেহারা। এক দলের থেকে হার–জিতের নিক্তি ক্ষণিকের মধ্যেই ঝুঁকে পড়ে আরেক দলের দিকে। আহমেদাবাদে আজ গুজরাট টাইটানস ও পাঞ্জাব কিংসের ম্যাচটিও এর ব্যতিক্রম নয়।
টসে হেরে ব্যাটিং করতে নামা গুজরাটের ইনিংস খুব একটা রং বদলায়নি। প্রায় শুরু থেকে একই তালে ব্যাটিং করে ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৯৯ রান তোলে শুবমান গিলের দল। কিন্তু আইপিএলে কি ২০০ রানও নিরাপদ সংগ্রহ! তবে পাঞ্জাবের ইনিংস শুরুতেই এলোমেলো হয়ে যাওয়ায় মনে হচ্ছিল, আজ পাঞ্জাবের এই ১৯৯ রান কম কিছু নয়। কিন্তু ইনিংসের দ্বিতীয়ার্ধে শশাংক সিং ও জিতেশ শর্মা ছোট্ট একটা ঝড় তোলার পর মনে হচ্ছিল অন্যরকম কিছু হতে পারে। তবে বারবার রং বদলানো ইনিংসের পর গুজরাটকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে পাঞ্জাব।
২০০ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই দলের মাত্র ১৩ রানে অধিনায়ক শিখর ধাওয়ানকে হারায় পাঞ্জাব। ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে ফিরে যান ১৩ বলে ৪ চারে ২২ রান করে দলকে আশা দেখানো জনি বেয়ারস্টোও। এরপর ৬ রানের মধ্যে আরও ২ উইকেট হারিয়ে একদমই এলোমেলো হয়ে যায় পাঞ্জাবের ইনিংস। তখন মনে হচ্ছিল গুজরাটের ঘরের মাঠে অসহায় আত্মসমর্পণই করতে যাচ্ছে তারা।
কিন্তু এখান থেকে তারা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে সিকান্দার রাজা ও শশাংকের ব্যাটে। পঞ্চম উইকেট জুটিতে দুজনে মিলে ২২ বলে ৪১ রান তোলেন। জুটি ভাঙে ১৬ বলে ১৫ রান করে মোহিত শর্মার বলে রাজা আউট হয়ে ফিরলে। এ সময় মনে হচ্ছিল, আর জেতা হচ্ছে না পাঞ্জাবের। কারণ, তখন ১২.২ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে তাদের রান ছিল ১১১। জিততে হলে তখনো পাঞ্জাবের ৪৬ বলে প্রয়োজন ছিল ৮৯ রান।
এখান থেকে আবার পাঞ্জাবকে আশা দেখায় শশাংক ও জিতেশের ১৯ বলে ৩৯ রানের জুটি। কিন্তু ৮ বলে ২ ছয়ে জিতেশ ১৬ রান করে আউট হয়ে গেলে আবার মনে হয়, সব আশা নিভে গেছে প্রীতি জিনতার দলের। কিন্তু তখনো হাল ছাড়েননি শশাংক ও বদলি খেলোয়াড় আশুতোষ শর্মা। দুজনে মিলে ম্যাচ নিয়ে যেতে থাকেন গভীরে। ম্যাচটি তাঁরা এমন অবস্থায় এনে দাঁড় করান যে শেষ ২ ওভারে জয়ের জন্য পাঞ্জাবের প্রয়োজন ছিল ১২ বলে ২৫ রান।
মোহিতের করা ইনিংসের ১৯তম ওভারে ১৮ রান নিয়ে ম্যাচটি আরও সহজ করে ফেলেন শশাংক ও আশুতোষ। শেষ ওভারে তাদের দরকার ছিল ৭ রান। এ সময় গুজরাট অধিনায়ক গিল একটা ফাটকা খেলেন। তিনি বল তুলে দেন এর আগে একটিও ওভার না করা দর্শন নালকান্দেকে। দর্শন প্রথম ওভারেই ফেরান ১৭ বলে ৩ চার ও ১ ছয়ে ৩১ রান করা আশুতোষকে। ভাঙে ২২ রানে ৪৩ রানের জুটি।
আশুতোষ চলে যাওয়ার পর ব্যটিংয়ে আসেন হারপ্রীত ব্রার। নতুন ব্যাটসম্যানকে বাউন্সার দিতে গিয়ে অতিরিক্ত উচ্চতার কারণে ওয়াইড দেন দর্শন। দ্বিতীয়টি অবশ্য রিভিউ নিয়ে জেতে গুজরাট। ফলে শেষ ৪ বলে পাঞ্জাবের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৫ রানের। পরের বলটিতে সিঙ্গেল নিয়ে শশাংককে স্ট্রাইক দেন হারপ্রীত। স্ট্রাইক পেয়ে মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে চার মারেন শশাংক। এরপর সিঙ্গেল নিয়ে ১ বল হাতে রেখেই প্রীতির পাঞ্জাবকে এবারের আইপিএলে দ্বিতীয় জয়ে এনে দেন তিনি। জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ার সময় ২৯ বলে ৬ চার ও ৪ ছয়ে ৬১ রানে অপরাজিত ছিলেন শশাংক।
এর আগে গিলের ৪৮ বলে ৬ চার ও ৪ ছয়ে অপরাজিত ৮৯ রানের ইনিংসে ভর করে ১৯৯ রান করতে পেরেছে গুজরাট। দলটির পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৩ (১৯ বল) রান করেছেন সাই সুদর্শন।