ফাবিহা ফাইজা হক: ঈদের আনন্দ ছোটদেরই সব থেকে বেশি। তবে আরেক দল ‘ছোট’ আছেন, বিশেষ এই দিনে কিছু পেলে বাইরে যাঁরা কপট রাগ দেখান, কিন্তু ভেতরে ভেতরে শিশুর মতোই খুশি হয়ে ওঠেন। তাঁরা হলেন বাড়ির মুরব্বি, কখনো সেটা মা–বাবা, কখনো দাদা–দাদির মতো গুরুজন। তাই বাড়ির এই বয়স্ক মানুষগুলোকে ভুলে গেলে চলবে না
মা–বাবার জন্য মিলিয়ে পোশাক এনেছে অনেক ফ্যাশন হাউস। মডেল: মাসুম বাশার ও মিলি বাশার | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
উপহার পেয়ে মুখ গম্ভীর করে তাঁরা হয়তো বলবেন, ‘অ্যাত টাকা খরচ করে কেন এটা কিনতে গেলে!’ তবে সেই মুখ কিন্তু অন্তরের খুশিটাকে চাপা দিতে পারবে না।
ফ্যাশন হাউসগুলো ঈদের সংগ্রহ করার সময় এখন প্রবীণদের কথাও ভাবে বিশেষভাবে। বয়স্ক পুরুষদের জন্য আছে পাঞ্জাবি-পায়জামা, ফতুয়া ও শার্ট। বয়স্ক নারীদের জন্য আছে শাড়ি, কামিজসহ অন্যান্য পোশাক। ‘রঙ বাংলাদেশ’–এর প্রধান নির্বাহী সৌমিক দাস বলেন, ‘বয়োজ্যেষ্ঠদের সব সময় গুরুত্ব দেয় রঙ বাংলাদেশ। তাদের পোশাকসহ প্রয়োজনীয় নানা জিনিস দিয়ে সাজানো “শ্রদ্ধা” সাব সেকশন। ঈদের পোশাকে গরমকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হয়। আর বয়োজ্যেষ্ঠরা প্রথম প্রাধান্য দেন আরামকে, সে জন্য তাঁদের পোশাকে আমরা সুতি কাপড় ব্যবহার করেছি। বিকেল বা সন্ধ্যার পর গেটটুগেদার বা দাওয়াতে যাওয়ার জন্য জমকালো কাপড় বেছে নেন সব বয়সীরাই। সেই ভাবনা থেকে বাবা–মায়েদের জন্য তাই কিছু পোশাক জমকালো, তবে আরামদায়ক করার চেষ্টা করেছি।’
শাড়ি ও পাঞ্জাবিতে প্রিন্টের নকশা চলছে। পোশাক: ভারমিলিয়ন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নানা রকম রং আর অল্প একটু কাজ দিয়ে সেগুলোকে রাঙানোর চেষ্টা করেছে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস। কিছু কাপড় আবার এমনিতেই অনেক সুন্দর, যেখানে বাড়তি কাজের প্রয়োজন হয়নি। অনেকে আবহাওয়ার কথা ভেবে টাই–ডাই, বাটিক, বিভিন্ন প্রিন্টের নকশা পছন্দ করেন। সেটা যেমন শাড়িতে আছে, তেমনি আছে পাঞ্জাবিতে। পাঞ্জাবির পাশাপাশি হাফহাতা শার্ট ও ফতুয়ায়ও আরাম পাবেন পুরুষেরা।
পোশাকে আছে নানা ধরনের সুতার কাজ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
জ্যেষ্ঠ সদস্যদের জন্য ফ্যাশন হাউসগুলোতে হালকা সুতির কাজের পাঞ্জাবির পাশাপাশি মিলছে ভারী কাজের সিল্ক, অ্যান্ডি সিল্ক, মসলিন, জামেবর, জ্যাকার্ড, রাজশাহী সিল্ক, ভিসকস ইত্যাদি কাপড়ের পাঞ্জাবি। ছাপা নকশার পাশাপাশি এতে যোগ করা হয়েছে নানা ধরনের সুতার কাজ। আছে আধুনিক ও ঐতিহ্যবাহী নানা ধরনের নকশা। এ ছাড়া পাইপিং, চিকন জরির সুতা, মোটা রঙিন সুতা ব্যবহার করে পাঞ্জাবির বাটন প্লেট, কলার ও হাতায় নকশা করা হয়েছে।
কেউ কেউ আবার ঈদ উপলক্ষে জোব্বা পরতে পারেন। বিভিন্ন দোকানেই এবার জোব্বা মিলছে। বাজারে জোব্বা বানানোর কাপড়ও পাওয়া যাচ্ছে।
সুতি শাড়িতে মিলবে আরাম। মডেল: মিলি বাশার, পোশাক: রঙ বাংলাদেশ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
বয়স্ক নারীরা সাধারণত খুব চকমকে রং ও ভারী পোশাক পরতে চান না। অনেকে চওড়া পাড়ও পরতে চান না। তবে হালকা নকশার পাড় অবশ্য একটু চওড়া হলেও অসুবিধা হয় না। সুতি শাড়িতে নানা রকম ব্লকের নকশা দেখা যাচ্ছে এবার। টাঙ্গাইল শাড়ি তো অনেক মায়েরই প্রথম পছন্দ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতন মানুষদের মধ্যে টাঙ্গাইল শাড়ি ও তাঁতিদের পাশে দাঁড়ানোর নানা রকম আলোচনা হচ্ছে। তাই পছন্দ করে তেমন শাড়িও কিনতে পারেন। বাজেট কিছুটা বেশি হলে জামদানি, মসলিন বা সিল্কের শাড়িও কিনতে পারেন।
হাফ হাতার এমন শার্ট দেখতে পারেন বাবাদের জন্য। পোশাক: রঙ বাংলাদেশ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
একাধিক দোকানে কথা বলে জানা গেল, প্রবীণদের জন্য সুতি শাড়ির মধ্যে ব্লকপ্রিন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্টের নকশা এবার বেশি চলছে। আবার কিছু সুতি শাড়ির বুননেই আছে নকশা। চাপা সাদা, গোলাপি, নীল, সবুজাভ, সোনালি, পেঁয়াজরঙা বা পিচ রংগুলো একটু বয়স্কদের জন্য আদর্শ। তবে এর বাইরেও মা–বাবাদের পছন্দের রং থাকতে পারে, এসব মাথায় নিয়েও পোশাক কিনতে হবে।
বয়োজ্যেষ্ঠ অনেক নারীই এখন সালোয়ার-কামিজ পরেন। তাদের সেলাইবিহীন থ্রি–পিস কিনে দিতে পারেন, তাঁরা নিজের মাপমতো তৈরি করে নিতে পারবেন। বাবা–মায়েদের জন্য যুগল পোশাকও এনেছে কিছু প্রতিষ্ঠান। হালকা নকশার সেসব পোশাকেও টুনা–টুনিকে দারুণ দেখাবে।
দেশীদশ, শ্রদ্ধা, আড়ং, টাঙ্গাইল শাড়ী কুটির, লুবনান, রিচম্যান, দর্জিবাড়ি, ইয়েলো, লা রিভসহ সব বড় শপিং মলেই বয়স্কদের জন্য পছন্দসই পোশাক কিনতে পারবেন।