প্রতীকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার উত্তরায় একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব থেকে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা তুলে পালিয়েছেন বাসার তত্ত্বাবধায়ক (কেয়ারটেকার)। নাজমুল হাসান নামের ওই তত্ত্বাবধায়ককে খুঁজছে পুলিশ। মালিকের বিশ্বস্ততা অর্জনের মাধ্যমে ছয় মাসে তিনি এসব টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে মামলার তথ্য ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী ওই অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার নাম মাসুদ হাসান। ৮৫ বছর বয়সী মাসুদ হাসানের সন্তানেরা সবাই থাকেন বিদেশে। বৃদ্ধ স্ত্রীকে নিয়ে তিনি রাজধানীর উত্তরায় নিজের বাসায় বসবাস করেন। বয়সের ভারে ন্যুব্জ মাসুদ হাসান নানা রোগে আক্রান্ত।

এ ঘটনায় মাসুদ হাসানের ছোট ভাই রেজাউল হাসান বাদী হয়ে ৭ এপ্রিল নাজমুলের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করেছেন। রেজাউল বলেন, ‘আমার ভাইয়ের অগোচরে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছে নাজমুল।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নুরুল হক বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, মাসুদ হাসান এবং তাঁর স্ত্রী দুজনই অসুস্থ। দীর্ঘদিন মাসুদ হাসানের বাসায় কাজকর্ম করে নাজমুল তাঁদের বিশ্বাস অর্জন করেন। মাঝেমধ্যে চেকের মাধ্যমে নাজমুলকে দিয়ে ব্যাংক টাকা তুলিয়ে আনতেন গৃহকর্তা মাসুদ হাসান। কিন্তু এত টাকা কীভাবে নাজমুল তুলেছেন, সেটি নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হচ্ছে না।

পুলিশ কর্মকর্তা নুরুল হক জানান, মাসুদের হাসানের তিনটি ব্যাংক হিসাবের বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। ঈদের ছুটির পর এসব তথ্য পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে, কীভাবে কোন প্রক্রিয়ায় নাজমুল এতগুলো টাকা তুলেছেন।

মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, গত বছরের ২২ অক্টোবর থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত মাসুদ হাসানের ৩টি ব্যাংক হিসাব থেকে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা তুলে নেন নাজমুল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল হাসান বলেন, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মাসুদ হাসানের ব্যাংক হিসাব থেকে কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের মামলাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক নাজমুলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তাঁর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দির নারানদিয়া গ্রামে। বাবার নাম মো. ফারুক মিয়া।

ভুয়া ব্যাংক হিসাব বিবরণী দেন নাজমুল
অশীতিপর মাসুদ হাসান শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় বেশির ভাগ সময় বাসায় অবস্থান করতেন। ভবনের ভাড়াটেদের কাছ থেকে ভাড়া তোলাসহ বাসা দেখভালের জন্য আড়াই বছর আগে নাজমুল নামের ওই যুবককে বাসার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি। মাসিক বেতন ধরা হয় ২০ হাজার টাকা। ভাড়া তোলা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজে দক্ষতা দেখানোয় ধীরে ধীরে নাজমুলকে বিশ্বাস করতে শুরু করেন মাসুদ হাসান। একপর্যায়ে বাজার করা থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজকর্ম নাজমুলকে দিয়ে করাতে থাকেন তিনি। সংসার খরচ, চিকিৎসা খরচসহ অন্যান্য খরচের জন্য বিভিন্ন সময় নাজমুলকে দিয়ে চেকের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করাতেন মাসুদ হাসান। তিনটি বেসরকারি ব্যাংকে তাঁর পৃথক তিনটি হিসাব রয়েছে।

৬ এপ্রিল মাসুদ হাসান নাজমুলকে বলেন, তিনটি ব্যাংক থেকে যেন বার্ষিক হিসাব বিবরণী তুলে আনেন। এরপর সেদিন নাজমুল একটি ব্যাংকের হিসাব বিবরণী মাসুদ হাসানকে দেন। তিনি দেখতে পান, ব্যাংকের হিসাব বিবরণীতে কোনো ব্যাংক কর্মকর্তার স্বাক্ষর ও সিল নেই। তখন মাসুদ হাসানের মনে সন্দেহ হয়। তিনি তাঁর ছোট ভাই রেজাউল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। নিজের সন্দেহের কথা খুলে বলেন তাঁকে। এরপর রেজাউল হাসান ব্যাংক থেকে মাসুদ হাসানের তিনটি পৃথক হিসাব বিবরণী তুলে আনেন। তখন মাসুদ হাসান দেখতে পান, বিগত ছয় মাসে তাঁর তিনটি ব্যাংক হিসাব থেকে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন নাজমুল। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর নাজমুল কৌশলে বাসা থেকে পালিয়ে যান।

জানতে চাইলে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, ‘মাসুদ হাসান সাহেব একজন সরকারি প্রকৌশলী ছিলেন। অবসরে যাওয়ার পর পেনশনের টাকা এবং পৈতৃক জমি বিক্রির টাকা ব্যাংক হিসাবগুলোয় রেখেছিলেন। দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে নাজমুল তাঁর বিশ্বস্ত হয়ে ওঠেন। চেকের মাধ্যমে মাসুদ হাসানের ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তুলতেন। পাশাপাশি মাসুদ হাসানের ব্যাংক হিসাবগুলোর মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের জন্য দেওয়া ওটিপি নম্বরও তিনি জানতেন। এসব তথ্য জানার পর বিগত সাত মাসে মাসুদ হাসানের এতগুলো টাকা তিনি উত্তোলন করেছেন।’

কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে নাজমুলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে নাজমুলের বাবা মো. ফারুক মিয়া বলেন, ‘১০ দিন ধরে ছেলের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। সে কোথায় আছে জানি না। তবে বাসার একজন লোক আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন, নাজমুল নাকি মালিকের অনেক টাকা আত্মসাৎ করেছে।’