এআইয়ের ব্যবহার যেন সীমিত না হয়, শ্রেণিকক্ষে পরিচয় করানোর পরামর্শ

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আইন প্রণয়ন নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় | ছবি: আইসিটি বিভাগের সৌজন্যে

নিজস্ব প্রতিবেদক: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) যেন শিল্প খাতেই আটকে না যায়। শ্রণিকক্ষ থেকেই যেন এআইকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া এআইয়ের কারণে মানুষ যেন চাকরি না হারায়, বরং কর্মসংস্থানের আরও সুযোগ তৈরি হয়। এআই নিয়ে আইন করার ক্ষেত্রে এসব বিষয় মাথায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন অংশীজনেরা।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণের লক্ষ্যে অংশীজনদের সঙ্গে এ সভা হয়। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ এ আইনের খসড়া তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আগে আইনের খসড়া করে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা হতো। এবার অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করেই খসড়াটি করতে চান। এরপর খসড়ার আউটলাইন (রূপরেখা) তৈরি করে সেটার ওপর আবারও অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক হবে। ধাপে ধাপে আলোচনার মাধ্যমে আইনটি চূড়ান্ত করা হবে।

এআই প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হবে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী আরও বলেন, নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে শক্ত হওয়া যাবে। কিন্তু এআই আইন যেন যথেষ্ট ফ্লেক্সিবল (নমনীয়) হয়।

আইসিটি বিভাগ সম্প্রতি জাতীয় এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) নীতিমালা ২০২৪-এর খসড়া প্রকাশ করেছে। সেটা নিয়ে গতকাল আইসিটি বিভাগে অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক হয়। আজকের সভায় এআই নীতি ও আইনের মধ্যে সমন্বয় করার কথা বলেন আইনমন্ত্রী।

সভাপতির বক্তব্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক বলেন, এআইয়ের ঝুঁকি ও সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে এআই আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আইন প্রণয়নে নিয়ন্ত্রণ, উদ্ভাবন, সম্প্রসারণ ও সমন্বয় সাধন—এই চারটি বিষয় মাথায় রেখে এগোতে হবে। আইন প্রণয়নে সমন্বিত উদ্যোগ যেন থাকে, তার ওপর জোর দেন তিনি।

প্রতিমন্ত্রী জানান, পরীক্ষামূলকভাবে ‘কনস্টিটিউশন জিপিটি’ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে সংবিধান–সংক্রান্ত সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।

সভায় অংশীজনদের আলোচনার শুরুতে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ইডিজিই প্রকল্পের পলিসি অ্যাডভাইজার আবদুল বারী এআই নিয়ে বৈশ্বিক উদ্যোগ ও আইন প্রণয়নে কোন কোন বিষয় গুরুত্ব পেতে পারে, সেসবের ওপর একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন।

সভায় অংশীজনেরা এআই ব্যবহারে নীতিনৈতিকতা, কর্মসংস্থান, উপাত্তের সুরক্ষা, শিক্ষাব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিজেদের মতামত দেন। এ ছাড়া আইন তৈরিতে সরকারি-বেসরকারি খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করারও আহ্বান জানান তাঁরা।

বিটিআরসির সিস্টেম ও সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. খলিলুর রহমান বলেন, এআইকে দেশীয় সংস্কৃতিসংক্রান্ত উপাত্ত দিয়ে প্রশিক্ষিত করতে হবে। এর নিজস্ব নৈতিক দিক গড়ে তুলতে হবে। এ ছাড়া এআইকেন্দ্রিক কোনো অপরাধ হলে তার দায়ভার কে নেবে, তা বিবেচনায় নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জন্য এআইয়ের ভয়ংকর ঝুঁকিও আছে। বাংলাদেশে ডিজিটাল বৈষম্য আছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের সামর্থ্য মানুষের আছে কি না, এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে। এ ছাড়া এআই ব্যবহারে উচ্চ গতির ইন্টারনেটের প্রয়োজন হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশে মাইক্রোসফটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউসুপ ফারুক বলেন, এআই যেন শিল্প খাতভিত্তিক (ইন্ডাস্ট্রি) না হয়ে যায় এবং এর ব্যবহার যেন সীমিত করা না হয়। শ্রীলঙ্কার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, শ্রেণিকক্ষ থেকেই এআইকে পরিচয় করাতে হবে। আইনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিষয়টি মাথায় থাকে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রভাষক মো. সাইমুম রেজা তালুকদার বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অনেকগুলো আইন, নীতি হচ্ছে। বাইরের দেশের আইনগুলোর সঙ্গে যদি সংগতিপূর্ণ না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে ব্যবসা বা সরকারি কাজে সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া এসব আইনের অধীন সংস্থা (এজেন্সি) তৈরি হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে সমন্বয় কীভাবে হবে, স্বয়ংক্রিয় ডেটা প্রসেসিংয়ের কর্তৃত্ব কার থাকবে—এসব নিয়ে যেন সংস্থাগুলোর মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব না দেখা দেয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

শিক্ষাব্যবস্থায় এআই অন্তর্ভুক্তির ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি রাসেল টি আহমেদ।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রতিনিধিরা নিজেদের বিভাগে এআই নিয়ে আলোচনা চান বলে জানান। সভায় আরও বক্তব্য দেন আইসিটি বিভাগের সচিব সামসুল আরেফিন, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ, এটুআইয়ের পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী, আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচাম) প্রতিনিধিসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।