বাংলাদেশ ও ব্রাজিল | ছবি: সংগৃহীত

শেখ শাহরিয়ার জামান: একদিকে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার কথা ভাবছে সরকার। অন্যদিকে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা এবং বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি পণ্যের মূল্যের ওঠানামার কারণে সাশ্রয়ী বায়ো-ফুয়েলের প্রতিও সরকার মনোযোগী হচ্ছে। এবার বায়ো-ফুয়েল বা ইথানল সরবরাহের জন্য দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের সহযোগিতা চাইবে বাংলাদেশ। ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওরো ভিয়েরার ঢাকা সফরের সময়ে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র।

আগামীকাল রোববার দুই দিনের সফরে ঢাকা আসছেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তার এই সফরে দুই দেশের মধ্যে কী কী বিষয়ে আলাপ হতে পারে এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইথানল একটি কার্যকর জ্বালানি এবং এমন শক্তি উৎপাদন করতে সক্ষম যা গাড়ি, জেনারেটর বা অন্য মেশিনে ব্যবহার করা যায়। ব্রাজিলে প্রচুর ভুট্টা ও আখ থেকে ইথানল তৈরি হয়। এটি ব্রাজিলের সব গাড়িতে এবং অন্যান্য মেশিনে ব্যবহার করা হয়। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এর খরচ প্রচলিত জ্বালানির অর্ধেক বা তারও কম এবং এটি অত্যন্ত কম পরিমাণে পরিবেশ দূষণ করে।’

তিনি বলেন, ‘ভারতকে ইতোমধ্যে ইথানল সহযোগিতা শুরু করেছে ব্রাজিল। এ বিষয়ে আমরাও ব্রাজিলের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই।’

বাংলাদেশে ভুট্টা বা আখের সরবরাহ কম। এজন্য এখানে ধানের তুষ বা কাঠের গুঁড়ি থেকে ইথানল তৈরি করা সম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যদি কার্যকরভাবে ইথানলের ব্যবহার শুরু করতে পারে, তবে এর অনেকগুলো সুবিধা পাওয়া যাবে। একদিকে এটি দামে কম এবং অন্যদিকে পরিবেশ দূষণে এটি অত্যন্ত কম প্রভাব রাখে যা আমাদের জন্য অত্যন্ত দরকারি।’

বাণিজ্য বৃদ্ধি
ব্রাজিলের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। কিন্তু এর সিংহভাগই বাংলাদেশ আমদানি করে থাকে।

এ বিষয়ে আরেক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ প্রধানত সয়া, সয়াবিন তেল, তুলা ও চিনি আমদানি করে এবং এর পরিমাণ প্রায় ২৫০ কোটি ডলার। অন্যদিকে তৈরি পোশাক রফতানির পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ২০ কোটি ডলার।

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি যে ব্রাজিল থেকে প্রায় ৫০ কোটি ডলারের তুলা আমদানি করলেও ওই বাজারে আমরা কোনও শুল্কমুক্ত সুবিধা পাই না। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়।’

ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের সময়ে এটি বড় আকারে আলোচনা হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, দুটি সম্ভাব্য প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। একটি হচ্ছে, যে পরিমাণ তুলা আমদানি করা হয় সেটি দিয়ে যে কাপড় তৈরি হবে সেটি শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে, অথবা তুলা আমদানির সমপরিমাণ পণ্যের ওপর শুল্কমুক্ত সুবিধা।

উল্লেখ্য, দক্ষিণ আমেরিকার বড় অর্থনীতি চিলিতে ২০১৪ থেকে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় এবং গত কয়েক বছরে ওই দেশে রফতানির পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি ডলার।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলের সঙ্গে আমরা পরিচিত হলেও তাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কম। দেশগুলোর মধ্যে ব্রাজিলের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি।’

প্রসঙ্গত, ব্রাজিল থেকে গুরুত্বপূর্ণ চারটি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করা হয়। সেগুলো হচ্ছে সয়া, সয়াবিন তেল, তুলা ও চিনি। এর পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি ডলার। অন্যদিকে রফতানি করা হয় প্রধানত তৈরি পোশাক এবং এর পরিমাণ ২০ কোটি ডলারের মতো।

অন্যদিকে আর্জেন্টিনার মতো বড় দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ অত্যন্ত কম।

গরুর মাংস আমদানি
বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম বেশি এবং সে কারণে এদেশের একটি বড় জনগোষ্টি এই আমিষ গ্রহণ থেকে বঞ্চিত। ব্রাজিল এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে চায় এবং ৪ থেকে ৫ ডলারের মধ্যে হালাল গরুর মাংস সরবরাহ করার প্রস্তাব করেছে।

এ বিষয়ে আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি নিয়ে সরকারের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় মনে করে, মাংস আমদানি করা হলে দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে কেউ কেউ যুক্তি দেন যে কম দামে মাংস আমদানি করা হলে জনগণের বড় অংশ আমিষ গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।’

এ বিষয়ে সহসা সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যে ব্যবসায়ী দল আসবে তাদের মধ্যে কয়েকজন গরু মাংস রফতানিকারকও আছেন। ফলে এ বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হবে।’