ইসরায়েল আক্রান্ত: প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এখন কী করবে

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন | এএফপি ফাইল ছবি

পদ্মা ট্রিবিউন ডেস্ক: ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী বলছে, ইরান থেকে ধেয়ে আসছে শতাধিক ড্রোন। সেগুলোর অবস্থান শনাক্ত করার চেষ্টা করছে তারা। ইরানি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বলছে, এরই মধ্যে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম ব্যারেজ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।

এর অর্থ, ইরান সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি সমরাস্ত্র ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে উৎক্ষেপণ করতে থাকবে। ইসরায়েলের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে এরই মধ্যে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ধেয়ে আসার খবর প্রকাশিত হয়েছে।

উড়ে আসা এতো অস্ত্র কীভাবে ঠেকাবে ইসরায়েল? ইসরায়েলের সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তির ও কার্যকর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধরা হতো আইরন ডোম। কিন্তু গত ৭ অক্টোবর হামাসের নিক্ষেপ করা ৫ হাজার রকেট ঠেকাতে গিয়ে গোল পাকিয়ে ফেলেছিল এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এবার আসছে সুসজ্জিত ড্রোন এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। আরও বড় বিষয় হলো, ইরানের এই উন্নত ড্রোনের মুখোমুখি কখনো হয়নি ইসরায়েলের আইরন ডোম বা ডেভিডস স্লিং ও অ্যারোর মতো আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। খোদ ইসরায়েলি কর্মকর্তারাও এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে খুব একটা আত্মবিশ্বাসী হতে পারছেন না।

ফলে এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলকে নির্ভর করতে হচ্ছে তার প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের ওপর।

ইরান ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে কয়েক ডজন ড্রোন উৎক্ষেপণের আগেই গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্পষ্ট করে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রকে রক্ষা করতে অবশ্যই সহায়তা করবে।

হোয়াইট হাউস থেকে বাইডেন বলেন, আমরা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষায় নিবেদিতপ্রাণ। আমরা ইসরায়েলকে সমর্থন করব। আমরা ইসরায়েলকে রক্ষা করতে সাহায্য করব এবং ইরান সফল হবে না।

এদিকে ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর আসার পরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি সফর বাতিল করে হোয়াইট হাউসে ফিরেছেন। সিচুয়েশন রুমে জাতীয় নিরাপত্তা দলের সঙ্গে বেঠকে বসেছেন।

দুইজন মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কয়েকটি ইরানি ড্রোন ঠেকিয়ে দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে এবং কোথায় এসব ড্রোন ঠেকিয়ে দিয়েছে তা নির্দিষ্ট করেনি জানাননি সূত্রগুলো।

মার্কিন সেনা উপস্থিতি
ইরাক এবং সিরিয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা মোতায়েন রয়েছে। তারা সম্ভাব্য ইসরায়েলের দিকে ধেয়ে আসা ড্রোনগুলোকে বাধা দিতে পারে। অবশ্য সেটি নির্ভর করছে ড্রোনগুলো কোথা থেকে উৎক্ষেপণ করা হচ্ছে তার ওপর।

লোহিত সাগরে মার্কিন নৌবাহিনী এর আগে ইয়েমেনের হুতিদের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকিয়ে দিয়েছিল। এই ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে ছোড়া হয়েছিল।

সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে হাজার হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে। একজন মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা চলতি সপ্তাহে সিএনএনকে বলেছেন, প্রতিরক্ষা বিভাগ মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত যুদ্ধ সরঞ্জাম স্থানান্তর করছে। 

ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধের শুরুতে, যুক্তরাষ্ট্র উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যুদ্ধ সরঞ্জাম মধ্যপ্রাচ্যে স্থানান্তর করে। বাইরের যে কোনো হামলা থেকে ইসরায়েলকে রক্ষায় প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করতে এবং এই অঞ্চলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

এ ছাড়া আরও প্রায় ১ হাজার মার্কিন সৈন্য রয়েছে এই অঞ্চলে। তারা গাজায় মানবিক সহায়তা সরবরাহে ব্যবহারের জন্য একটি ভাসমান পিয়ার বা জেটি স্থাপনে কাজ করছে।

পেন্টাগনের মুখপাত্র মেজর জেনারেল প্যাট রাইডার চলতি সপ্তাহে বলেছেন, এপ্রিলের শেষের দিকে বা মে মাসের প্রথম দিকে ওই জেটি চালু হওয়ার পথে রয়েছে।

স্ট্রাইক গ্রুপ

ইউএসএস ডোয়াইট ডি. আইজেনহাওয়ার ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ এই অঞ্চলে রয়েছে। স্ট্রাইক গ্রুপে রয়েছে ৬ হাজার নাবিক, টিকন্ডেরোগা-শ্রেণির গাইডেড-মিসাইল ক্রুজার ইউএসএস ফিলিপাইন সি (সিজি ৫৮) এবং আরলেই-বার্ক শ্রেণির দুটি গাইডেড-মিসাইল ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস ম্যাসন (ডিডিজি ৮৭) এবং ইউএসএস গ্রেইভলি (ডিডিজি ১০৭)।

গ্রুপটিতে ক্যারিয়ার এয়ার উইং থ্রি-ও রয়েছে, যেটি চারটি স্ট্রাইক ফাইটার স্কোয়াড্রনসহ নয়টি স্কোয়াড্রনের সমন্বয়ে গঠিত।

হুতি হামলা
গত বেশ কয়েক মাস ধরে, ক্রমাগত ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট এবং ড্রোন হামলা ঠেকিয়ে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

সেইসঙ্গে ইরাক ও সিরিয়ায় ইরানের প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোর দ্বারা আক্রমণ চালানো হয়েছে। জানুয়ারিতে জর্ডানে একটি ছোট মার্কিন ফাঁড়িতে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হয়।

সেন্টকম নেতা
মধ্যপ্রাচ্যের জন্য নিয়োজিত মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড বা সেন্টকমের শীর্ষ কমান্ডার জেনারেল মাইকেল কুরিলাকে ইসরায়েলে পাঠানো হয়েছে সম্ভাব্য সামরিক প্রতিক্রিয়ার প্রস্তুতিতে সহায়তা করতে। তিনি ইসরায়েলের জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা ও সমরবিদদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বলেছেন, ‘ইরানি হামলার বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে রক্ষায় পূর্ণ মার্কিন সমর্থন রয়েছে।’