বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে থানচি বাজারে গুলিবর্ষণ করে সন্ত্রাসীরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি বান্দরবান: বান্দরবানের দুই উপজেলায় ১৭ ঘণ্টার মধ্যে দুটি ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা, অস্ত্র লুট ও অপহরণের ঘটনার পর বৃহস্পতিবার রাতে থানচি থানা লক্ষ্য করে গুলি করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠী।
স্থানীয় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে সন্ত্রাসীরা থানচি থানা লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু করে। পুলিশ পাল্টা গুলি চালায়।
রাত ১০টার দিকে থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসীম উদ্দীন বলেন, রাত সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত গোলাগুলি হয়। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, সন্ত্রাসীরা থানার আশপাশে রয়েছে। এ জন্য আমরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছি।’
কতটি গুলিবর্ষণ হয়েছে—এ প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, এখনো গণনা করা হয়নি। তবে ৪০০ থেকে ৫০০টি হবে।
তবে কারা গুলি চালিয়েছে, এ বিষয়ে পুলিশ স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। যদিও এর আগে মঙ্গলবার রাতে বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংকে ডাকাতি, ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ এবং পুলিশ ও আনসারের ১৪টি অস্ত্র লুটের ঘটনায় কেএনএফ জড়িত বলে বলা হয়েছিল।
দুই বছর আগে পাহাড়ে আত্মপ্রকাশ করা সশস্ত্র গোষ্ঠী কেএনএফ (কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট) রুমার ঘটনার ১৭ ঘণ্টার মাথায়, বুধবার বেলা একটার দিকে থানচি বাজারে গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তারা সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের স্থানীয় শাখা থেকে টাকা লুট করে।
এদিকে রুমা থেকে অপহৃত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দীন প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ছাড়া পেয়েছেন। সন্ধ্যায় সাড়ে সাতটার দিকে গণমাধ্যমে র্যাবের পাঠানো এক খুদে বার্তায় বলা হয়, ‘র্যাবের মধ্যস্থতায় সোনালী ব্যাংকের বান্দরবানের রুমা শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দীন উদ্ধার।’ তাঁকে রুমা বাজার এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন র্যাব ১৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন। এরপর নেজাম উদ্দীনকে বান্দরবান র্যাবের ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।
সোনালী ব্যাংক রুমা শাখার ব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিনকে উদ্ধার করেছে র্যাব। বান্দরবান, ৪ এপ্রিল | ছবি: র্যাবের সৌজন্যে |
এর আগে দিনের বেলা খবর বের হয়, ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের জন্য মুক্তিপণ দাবি করেছে সন্ত্রাসীরা। বিকেলে ঢাকায় র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের বলেন, ব্যাংক ম্যানেজারকে ছাড়াতে কেএনএফ বেশ কিছু অর্থ মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করেছে। তাঁকে অক্ষত ও নিরাপদে ফিরিয়ে আনার জন্য নানা কৌশলে কাজ করছে র্যাব।
তবে ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে উদ্ধারে কীভাবে সমঝোতা হয়েছে, সে বিষয়টি স্পষ্ট করেননি এই র্যাব কর্মকর্তা।
থানচি থানায় সন্ত্রাসী হামলার পর পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়তে থাকে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
পরপর দুই দিন সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার ঘটনার পর বৃহস্পতিবার বান্দরবানের রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় সোনালী ব্যাংকসহ সব ব্যাংকের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এসব এলাকায় বৃহস্পতিবার দিনভর থমথমে পরিস্থিতি ছিল। কেএনএফের সঙ্গে সব ধরনের আলোচনা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে স্থানীয়ভাবে গঠিত ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি’। লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধীদের দমনে যৌথ অভিযান শুরুর কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এরই মধ্যে রাতে থানচিতে নতুন করে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। রাত ১০টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘থানাকে লক্ষ্য করে দূর থেকে গুলি করা হয়েছে। আমাদের পুলিশও গুলি করেছে।’
এর আগে রাত সাড়ে নয়টায় পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) নূরে আলম মিনা বলেন, থানচি থানার দক্ষিণ–পূর্ব পাশের পাহাড় থেকে কে বা কারা গুলি ছুড়তে থাকে। থানা থেকে পুলিশ সদস্যরা পাল্টা গুলি ছোড়েন। তিনি বলেন, ‘থানায় পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে থানা পরিদর্শনের পর আমি অতিরিক্ত ফোর্স সেখানে মোতায়েন করি। আমাদের পুলিশ সদস্যরা ভালো রয়েছে। কিছুক্ষণ পরপর থেমে থেমে থানা লক্ষ্য করে গুলি করা হচ্ছে।’
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গুলির শব্দ শোনার পর তাঁরা আতঙ্কে রয়েছেন। গুলি এসে গায়ে পড়তে পারে, সে জন্য অনেকে মাটিতে শুয়ে পড়েন। কেএনএফ গোলাগুলিতে জড়িত বলে স্থানীয় লোকজন মনে করছেন।
রুমা উপজেলা হাসপাতালে আহত দুই পুলিশ সদস্যকে দেখতে গিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
‘যৌথ অভিযান হবে’
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে থানচি উপজেলায় টাকা লুট হওয়া দুটি ব্যাংকের শাখা পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নূরে আলম মিনা। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধীদের দমনে যৌথ অভিযান পরিচালিত হবে। রুমা ও থানচিতে ব্যাংকের টাকা লুট, পুলিশের ওপর হামলাসহ নানা অভিযোগে আট থেকে নয়টি মামলা হতে পারে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।
কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের নাম উল্লেখ না করে ডিআইজি বলেন, তহবিল সংগ্রহের জন্য দুটি ব্যাংকে হামলা হয়েছে। রুমায় বেশি টাকা রয়েছে, তাই ভল্ট ভেঙে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর থানচিতে ঘটনার দিন হাটবার থাকায় ব্যাংকে লেনদেন বেশি হবে। তাই সেখানে ডাকাতি হয়েছে।
বান্দরবান জেলা পরিষদ সভা কক্ষে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সংবাদ সম্মেলন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
শান্তি আলোচনা স্থগিত
এদিকে কেএনএফের সঙ্গে সব ধরনের আলোচনা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি’। বৃহস্পতিবার সকালে কমিটির সদস্যরা বান্দরবানে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন। তাঁরা জানান, কেএনএফের হাতে অপহৃত ব্যাংক কর্মকর্তাকে নিঃশর্ত মুক্তি, লুট করা টাকা ও অস্ত্র ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হলে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা হতে পারে।
জেলা পরিষদ সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক ও পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা মারমা। উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্যসচিব লালজার লম বম, মুখপাত্র কাঞ্চনজয তঞ্চঙ্গ্যা প্রমুখ।
বান্দরবানে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সঙ্গে কেএনএফের প্রথম সশরীর বৈঠকে উভয় পক্ষের লোকজন। গত বছরের ৫ নভেম্বর রুমা উপজেলার মুনলাইপাড়া কমিউনিটি হলে | ফাইল ছবি |
সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকের টাকা ও অস্ত্র লুট, ব্যাংক কর্মকর্তা অপহরণসহ কেএনএফের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
কেএনএফের সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ২০২৩ সালের ২৯ মে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা মারমার নেতৃত্বে এই ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি’ করা হয়। কমিটির সঙ্গে কেএনএফের এ পর্যন্ত কয়েক দফা অনলাইনে এবং দুই দফা সরাসরি বৈঠক হয়েছে। গত বছরের ৫ নভেম্বর ও গত ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত সরাসরি দুই দফা বৈঠকে দুটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। তাতে কেএনএফ চাঁদাবাজি, অপহরণ, লুটপাটসহ সব ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
থানচিতে সোনালী ব্যাংকের সামনে পুলিশের সতর্ক প্রহরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
তিন উপজেলায় ব্যাংক বন্ধ
রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় সোনালী ব্যাংকসহ সব ব্যাংকের কার্যক্রম বৃহস্পতিবার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই তিন উপজেলায় সোনালী ও কৃষি ব্যাংক ছাড়া আর কোনো ব্যাংকের শাখাও নেই।
এই তিন উপজেলার লোকজন জেলা সদরে ব্যাংকের শাখায় সীমিত পরিসরে লেনদেন করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. ওসমান গণি। তিনি বলেন, এটি একটি সাময়িক সমস্যা।
এর মধ্যে বান্দরবান সদর থেকে থানচি ৮১ কিলোমিটার, রুমা ৪৮ কিলোমিটার ও রোয়াংছড়ি ১৮ কিলোমিটার দূরত্বে। ফলে সদরে এসে লেনদেন করা কষ্টকর হবে বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীরা।
বান্দরবানজুড়ে ব্যাংকসহ সরকারি কার্যালয়গুলোয় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
রুমা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অঞ্জন বড়ুয়া বলেন, এ বাজারে ৪০০ ব্যবসায়ী রয়েছেন। এখন ঈদ মৌসুম। কেনাবেচার এই মৌসুমে ব্যাংকে লেনদেন বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ী, ক্রেতা-বিক্রেতারা চরম বেকায়দায় পড়েছেন।
রুমা পৌরসভা সদরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন বলেন, বান্দরবান সদরে গিয়ে সবার পক্ষে লেনদেন করা সম্ভব নয়।
বৃহস্পতিবার সকালে থানচির সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের দুটি শাখায় গিয়ে দেখা যায়, ব্যাংক দুটির দরজায় তালা। বাইরে পুলিশের সতর্ক পাহারা। দুপুরে সোনালী ব্যাংকের সামনে কথা হয় উপজেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এমরান হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এলাকার ৯০ ভাগ লোক টাকা তুলতে পারেননি। তিনি নিজেও বেতন–ভাতা তুলতে পারেননি বলে জানান।
বৃহস্পতিবার রাতে গোলাগুলি থামার পর মুহূর্তে বান্দরবানের থানচি উপজেলা সদরের বাজার | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
থমথমে পরিস্থিতি রুমা ও থানচিতে
বৃহস্পতিবার দুপুরে থানচি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দোকানপাট ক্রেতাশূন্য। আগের দিন বুধবার দুপুরে ঘটনার পর ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দিলেও প্রশাসনের আশ্বাসে এদিন সকালে দোকান খুলেছেন।
ব্যবসায়ী মুসা মিয়া বলেন, ‘দিনদুপুরে যেভাবে ব্যাংক থেকে টাকা লুট করে নিয়ে গেছে, সেখানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা করা তো কিছু না।’
বৃহস্পতিবার বান্দরবান সদর থেকে থানচি উপজেলায় আসা–যাওয়ার সময় পর্যটকবাহী কোনো গাড়ি দেখা যায়নি। গাড়িচালক সালাউদ্দিন বলেন, অন্যান্য সময় রমজানেও কিছু পর্যটক থাকে। কিন্তু ব্যাংক লুটের ঘটনার পর থেকে কেউ আসেনি।
বৃহস্পতিবার ছিল রুমা সদরের সাপ্তাহিক হাট। লোকজন ছিল খুব কম। সেখানে কথা হয় কলা ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ব্যাংক লুটের ঘটনার পর থেকে তাঁরা আতঙ্কে রয়েছেন। কখন কী হয়ে যায়!
ফেসবুকে দেওয়া কেএনএফের ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি |
কেএনএফ ঘিরে যত ঘটনা
দুই বছর আগে ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী কেএনএফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের নামে পেজ খুলে আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেয়। এরপর তারা রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়ন, বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচিতে সশস্ত্র তৎপরতা শুরু করে।
দুই বছরে অন্তত নয়টি বড় ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছে কেএনএফ। গত বছর কেএনএফের সন্ত্রাসীদের চারটি হামলার ঘটনায় পাঁচ সেনাসদস্য নিহত হন। আরেক সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) সঙ্গে সংঘর্ষে গত বছর রোয়াংছড়ি উপজেলার খামতাংপাড়া এলাকায় আটজন এবং রুমা উপজেলার মুয়ালপিপাড়া একজন নিহত হন। এ ছাড়া গত বছরের ৮ মে রোয়াংছড়ি উপজেলা পাইংখিয়ংপাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগের একজন নেতাসহ বম জনগোষ্ঠীর তিনজন এবং ২০২৩ সালের ২২ মার্চ একই উপজেলার রামথারপাড়ায় থংচুল বম নামের এক কারবারিকে (পাড়াপ্রধান) গুলি করে হত্যা করা হয়। ২০২২ সালের ২১ জুন রাঙামাটির বিলাইছড়ির বড়থলি ইউনিয়নের সাইজাম পাড়ায় তিন ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
কেএনএফের আস্তানায় সমতলের নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। ২০২২ সালে সেই আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন জঙ্গি ও কেএনএফ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। তখন কেএনএফ ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। এরপর লম্বা সময় ধরে পাহাড়ে কেএনএফবিরোধী অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
তাদের বিভিন্ন আস্তানা ধ্বংস করে দেওয়ার খবরও বের হয়। একই সঙ্গে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি’ গঠন করে বেসরকারিভাবে আলোচনাও শুরু করা হয়। কিন্তু এরই মধ্যে এই সশস্ত্র গোষ্ঠী আবার সংগঠিত হয়ে নতুন করে আক্রমণের প্রস্তুতি নিলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আঁচ করতে পারেনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এ–সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্যের ঘাটতি ছিল। এই সুযোগে এই সন্ত্রাসীরা রুমা ও থানচিতে ব্যাংকে ডাকাতি ও অস্ত্র লুট করে যায়।
বান্দরবানে সশস্ত্র হামলা ও ব্যাংকে লুটপাটের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ও কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ব্যাংকে ডাকাতি ছোট ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে না। কুকি-চিনকে কঠোরভাবে দমনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।