পাহাড়িদের প্রিয় সবজি আগাজা ফুল। আজ সকালে খাগড়াছড়ি বাজার থেকে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি খাগড়াছড়ি: চাকমাদের কাছে ‘আগাজা ফুল’, মারমাদের কাছে ‘জাংব্রে সি’ আর ত্রিপুরারা বলে মানদুই বাথাই। যে নামে ডাকা হোক না কেন, এই সবজির কদর পাহাড়জুড়ে। বনবাদাড়ে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এই ফুলের দারুণ চাহিদা রয়েছে পাহাড়িদের কাছে। বিক্রি হয়ও চড়া দামে।
পাহাড়ের বনাঞ্চলে থাকা বাসিন্দারা জানান, আগাজা ফুলগাছ ৪০ থেকে ৫০ ফুট উঁচু হতে পারে। মার্চ থেকে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত ফুল গাছে থাকে। খাগড়াছড়ি বাজার, মধুপুর বাজার, স্বনির্ভর বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে এই ফুলটি মাঝেমধ্যে পাওয়া যায়। সম্প্রতি খাগড়াছড়ি বাজারে আগাজা ফুল বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা কেজি দরে।
আজাগা ফুল শত বছর ধরে সবজি হিসেবে খেয়ে আসছেন পাহাড়িরা। ২০ থেকে ২৫ বছর আগেও পাহাড়িরা বনজঙ্গল থেকে এই ফুল সংগ্রহ করতেন পাহাড়িরা। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে সামাজিক বনায়ন, ফলদ বাগান, সেগুনবাগান গড়ে ওঠায় এবং বন কেটে ফেলায় প্রাকৃতিকভাবে গজিয়ে ওঠা অন্যান্য গাছের মতো আগাজা ফুল গাছও হারিয়ে যাচ্ছে। সে জন্য হাটবাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে এই সবজিটি। শুধু পাহাড়ের হাটবাজারে নয়, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ পাহাড়ি সম্প্রদায় অধ্যুষিত সব জায়গায় এই সবজি চড়া দামে বিক্রি হয়।
ছোটবেলা থেকে আগাজা ফুল সবজি হিসেবে খেয়ে আসছেন বলে জানান খাগড়াছড়ির আইনজীবী সৌরভ ত্রিপুরা। মাছ আর শুঁটকি দিয়ে এই সবজি রান্না করা হয়ে থাকে। তিনি বলেন, ‘স্বাদে হালকা টকজাতীয় এ খাবার আমরা বিশ্বাস করি এটি বহু ভেষজ গুণে ভরপুর। প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হওয়ার কারণে এই গাছ আর তেমন দেখা যায় না। এই গাছগুলো সংরক্ষণ করা জরুরি।’
খাগড়াছড়ি শহরের শিক্ষক এমিলি দেওয়ান বলেন, আগাজা ফুল কলি থেকে ফুল ফোটার আগপর্যন্ত খাওয়া যায়। পাহাড়ের মানুষ সাধারণত এ সবজি মাছ, চিংড়ি বা শুঁটকি দিয়ে গুদাইয়া (ভর্তা) করে খেয়ে থাকে। কেউ কেউ আবার এ সবজি শুকিয়ে সংরক্ষণ করে রাখে বছরের অন্য সময়ে খাওয়ার জন্য। পাহাড়িদের কাছে এটি বেশ জনপ্রিয় খাবার।
পানছড়ি লতিবান এলাকার সুরেশ চাকমা খাগড়াছড়ি বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন আগাজা ফুল বিক্রি করতে।
তাঁর সঙ্গে কথা হয় গাড়িতে। সুরেশ চাকমা বলেন, তিনি কেজি চার শ টাকা করে কিনে নিয়ে আসেন খাগড়াছড়ি বাজারে। তবে গাছ বড় হওয়ায় আগাজা ফুলগুলো পাড়তে খুবই কষ্ট হয়। প্রতিবছর তিনি গাছ উঠে গাছের ডাল কেটে সবজি সংগ্রহ করেন। এই একটা গাছ থেকে তিনি প্রতিবছর দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পান।
বাংলায় বনচালতা ডাকা হয় এই ফুলকে। মাঝারি আকারের বৃক্ষ হলেও মাঝেমধ্যে বেশ বড় গাছও চোখে পড়ে। পাতা লম্বাটে ডিম্বাকার, কিনারা খাঁজকাটা, পাতার গোড়ার দিকটা সামান্য সরু। পাতাবিহীন গাছে বসন্তে ও গ্রীষ্মে প্রচুর ছোট ছোট হলদে রঙের ফুল থোকা ধরে ফোটে।