মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র যোদ্ধারা এখন দেশটির অনেক এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে | ফাইল ছবি : রয়টার্স |
কূটনৈতিক প্রতিবেদক: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এই গোষ্ঠীর জোরদার হামলায় টিকতে না পেরে প্রাণ বাঁচাতে দেশটির সীমান্তরক্ষীরা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন। গতকাল রোববারও পাঁচজন সীমান্তরক্ষী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১৯৬ সদস্য বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চলতি মাসের মধ্যে তাঁদের ফেরত পাঠাতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ যত শিগগির সম্ভব বিজিপির সদস্যদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তাঁদের এখন পর্যন্ত ফেরত পাঠানো যায়নি। এরই মধ্যে রাখাইন থেকে বিজিপি সদস্যদের পালিয়ে বাংলাদেশে আসাও থামছে না।
টেকনাফ থেকে প্রথম আলোর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কক্সবাজারের টেকনাফের খারাংখালী সীমান্ত দিয়ে বিজিপির আরও পাঁচজন সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁরা মিয়ানমারের নাকফুরা এলাকা থেকে নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাত গত ফেব্রুয়ারি থেকে বেড়েই চলেছে। দুই পক্ষের টানা দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা লড়াইয়ে রাখাইনের বেশ কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে আরাকান আর্মি। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি এলাকায় সীমান্তরক্ষীরা তাঁদের ফাঁড়ি ছেড়ে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছেন।
ফেব্রুয়ারিতে প্রথম দফায় কয়েক দিনে মিয়ানমারের ৩৩০ জন নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমার নৌবাহিনীর একটি জাহাজে বিজিপি, সেনাবাহিনী, শুল্ক কর্মকর্তাসহ দেশটির ওই ৩৩০ জন নাগরিককে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।
এবার দ্বিতীয় দফায় গত ৩০ মার্চ থেকে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ শুরু হয়। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজনকে এর আগে সমুদ্রপথে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। এবারও কি একইভাবে ফেরত পাঠানো হবে কি না, তা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, বছরের এই সময়টা সমুদ্র উত্তাল থাকে। বাংলাদেশ তাই মিয়ানমারকে আকাশপথে লোকজনকে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে, তবে মিয়ানমার নৌপথে তাঁদের ফেরত নিতে আগ্রহী।
অন্যদিকে, রাখাইনে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই অব্যাহত থাকায় সেখান থেকে লোকজনের আসাও থামছে না। এমন এক পরিস্থিতিতে কবে তাঁদের ফেরত পাঠানো যাবে, সেটা নিয়েও বাংলাদেশ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের সঙ্গে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ চলতি মাসের মধ্যে এই সীমান্তরক্ষী সদস্যদের ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।