ঈদের ঢাকা থাকে এমনই ফাঁকা | ফাইল ছবি
ঈদের ঢাকা থাকে এমনই ফাঁকা | ফাইল ছবি

আরমান ভূঁইয়া: ঈদের ছুটিতে নগরীর অধিকাংশ বাসিন্দা পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে গ্রামের বাড়ি চলে যান। ফলে প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে ঢাকা। আর এই সুযোগে ফাঁকা ঢাকায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে অপরাধীরা। বিশেষ করে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। গত কয়েক বছর ধরে ঈদের ছুটির সময়টায় ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম বেড়েই চলছে। এমনকি তাদের ছুরিকাঘাতে পুলিশ সদস্য, ডাক্তারসহ কয়েকজন নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় নগরবাসীর মধ্যে উদ্বেগের পাশাপাশি আতঙ্ক বিরাজ করে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, এবছর ফাঁকা ঢাকা কতটা নিরাপদ থাকবে?

গত বছর ১ জুলাই ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিন ভোরে রাজধানীর র্ফামগটে এলাকায় ছনিতাইকারীর ছুরিকাঘাতে মনিরুজ্জামান তালুকদার নামে এক পুলশি কনস্টবেল নিহত হন। তিনি ঈদের ছুটি শেষে গ্রামের বাড়ি শেরপুর থেকে ঢাকার ফিরছিলেন।

এর আগের বছর, ২০২২ সালে ঈদুল ফিতরে রাজধানীর কাজীপাড়া এলাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে দন্ত্য চিকিৎসক ডা. আহমেদ মাহী বুলবুল নিহত হন। তিনি ঈদের দিন ভোরে তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী যাওয়ার উদ্দেশে মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়া বাসা থেকে বের হন। তখন পুলিশ জানিয়েছিল, ডা. বুলবুলের সঙ্গে থাকা টাকা, মোবাইল ও ব্যাগ ছিনিয়ে নিতেই তাকে ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইকারীরা।

রাজধানী ঢাকা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে শুধু রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা হয়েছে অন্তত ১ হাজার, আর চুরির ঘটনায় হাজারের অধিক মামলা হয়েছে। ২০২৩ সালে রাজধানীতে ছিনতাইয়ে ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৯৯টি, চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে ১ হাজার ৫১১টি। ২০২২ সালে ছিনতাই মামলা ৩১০টি এবং চুরির মামলা ১ হাজার ৬০৩টি।

২০২১ সালে ছিনতাই মামলা হয় ১৬৬টি এবং চুরি সংক্রান্ত মামলা হয় ১ হাজার ৩৪৩টি। ২০২০ সালে ছিনতাই মামলা ১৭৬টি এবং চুরির মামলা ১ হাজার ২১৭টি।

তবে সম্প্রতি ছিনতাইয়ের ঘটনা কমেছে বলে দাবি করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। সংস্থাটির কমিশনার হাবিবুর রহমান মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর পান্থপথ মোড়ে ঈদের বাজার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে ছিনতাইয়ের ঘটনা কিছুটা কমেছে। কিন্তু ঈদকে ঘিরে ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে কারণে চুরি-ছিনতাই প্রতিরোধ ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তিনি এসময় আরও জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে ঢাকায় স্পেশাল পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থাও কাজ করবে।

চুরি-ছিনতাইরোধে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ডিবি, থানা পুলিশ এবং সাদা পোশাকে পুলিশ একসঙ্গে কাজ করবে। ফলে আগের মতো এখন আর ছিনতাই হওয়ার শঙ্কা নেই।

নগরবাসীর উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঈদের ছুটিতে ঢাকা শহরের বেশিরভাগ মানুষ গ্রামের বাড়ি চলে যাওয়ায় ঢাকা ফাঁকা হয়ে যায়। তাই সবাইকে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ঘর-বাড়ি ভালো করে লক করারও আহ্বান জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

আসন্ন ঈদুল ফিতরে ফাঁকা ঢাকায় নগরবাসীর নিরাপত্তায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) কী ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে— এমন প্রশ্নে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঈদের ছুটিতে ঢাকা অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায়। এই সুযোগে ছিনতাই ও চোর চক্রের সদস্যরা যাতে কোনোধরনের কার্যক্রম চালাতে না পারে সেজন্য এলাকাভিত্তিক গোয়েন্দা নজরদারি কার্যক্রম চলছে আমাদের। প্রত্যেক পাড়া-মহল্লার বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে আমাদের কন্ট্রোল রুমের নম্বর দেওয়া হচ্ছে যাতে যেকোনও অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়।

র‌্যাবের গোয়েন্দা টিম, চেকপোস্ট, রোবাট পেট্রোল ও টহল টিমের পাশাপাশি কিছু এলাকায় স্পেশাল টিম কাজ করবে উল্লেখ করে খন্দকার আল মঈন বলেন, ফাঁকা ঢাকায় ছিনতাই রোধে চিহ্নিত রাস্তাসহ প্রত্যেক সড়ক ও পাড়া-মহল্লায় আমাদের মোটরসাইকেল পেট্রোল টিম ২৪ ঘণ্টা টহলে থাকবে। যাতে করে কোনও নাগরিক ছিনতাইকারীর কবলে না পড়েন।