বাঘায় ঈদ ঘিরে প্রস্তুত গরিবের গোশত সমিতি

গরিবের গোশত সমিতির টাকায় কেনা গরু | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বাঘা: রাজশাহীর বাঘায় ঈদ ঘিরে কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন গ্রামে গড়ে উঠেছে গোশত সমিতি। এটা বেশি পরিচিত ‘গরিবের গোশত সমিতি’ নামে। এই সমিতি এখন ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ঈদের দিন ঘনিয়ে আসায় এসব সমিতির পক্ষ থেকে গরু কেনার প্রস্তুতি চলছে। অনেকে ইতিমধ্যে গরু কিনে ফেলেছে।

উপজেলার গোচর, কুশাবাড়িয়া, পিয়াদাপাড়া, বাউসা, তেঁতুলিয়া, দীঘা, সরেরহাট, মনিগ্রাম, বলিহার, হরিরামপুর, মীরগঞ্জ, চণ্ডীপুর, ছয়ঘটি, খায়েরহাট, জোতরাঘোব, পীরগাছা, নূরনগর, আড়পাড়া, কিশোরপুর, চকরাজাপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে পাঁচ শতাধিক সমিতি গড়ে উঠেছে। সমিতির সদস্যরা সপ্তাহে ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে জমা দেন। কেউ দেন ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। অনেকে আবার বছরের পুরো টাকা একত্রে দেন। এভাবে টাকা জমিয়ে ঈদুল ফিতরের আগে গরু কেনা হয়। সেই গরু জবাই করে মাংস ভাগ করে নেন সমিতির সদস্যরা। চামড়া বিক্রির টাকা ফান্ডে জমা থাকে।

এতে দরিদ্র পরিবারগুলো বাড়তি আনন্দ পায় এবং তাদের আর্থিক চাপও কমে যায়। গত কয়েক বছর ধরে ঈদুল ফিতর ঘিরে গ্রামে গ্রামে এ রকম অনেকগুলো সমিতি গড়ে উঠেছে। গরুর গোশতের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকায় দিনে দিনে সমিতির সংখ্যা বাড়ছে। এখন শুধু নিম্ন ও মধ্যবিত্তই নয়, এই সমিতিতে যোগ দিয়েছেন ধনীরাও। এতে এখন যোগ হয়েছেন শিক্ষক, সাংবাদিক, সরকারি ও আধা সরকারি চাকরিজীবীরা। ফলে ঈদ ঘিরে সাধারণ মানুষের কাছে’ গরিবের গোশত সমিতি’ এখন ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

পীরগাছা গ্রামের ঝর্ণা বেগম ও লতা বেগম কর্মজীবনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাঁরা ১০-১৫ বছর আগে মানুষকে একত্র করে নিজ এলাকায় দুজন দুটি গোশত সমিতি গঠন করেন। তাঁদের সমিতির সদস্যসংখ্যা ৩১ ও ৩৩। তাঁরা শিক্ষক ও নারী হওয়ায় স্থানীয় লোকজন আস্থার সঙ্গে সমিতির সদস্য হয়ে চাঁদা দিয়েছেন। তাঁরা সফলতার সঙ্গে এই সমিতির কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন।
 
পীরগাছা গ্রামের ১০-১৫ জন যুবক মিলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ সমাজ সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করতেন। তাঁরা শুরুতে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের লোকজনকে সংগঠিত করে গোশত সমিতি করার উদ্যোগ নেন। এরপর দেখা যায় গ্রামে গ্রামে আরও সমিতি গড়ে উঠেছে।

ঝর্ণা বেগম বলেন, ‘এ বছর আমার সমিতির সদস্যসংখ্যা ৩১। বছরে মোট চাঁদার পরিমাণ ১ লাখ ৬৬ হাজারে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকায় গরু কেনা হয়েছে। বাকি টাকায় একটি খাসি কিনে গোশত ভাগ করে নেব। অতিরিক্ত টাকা আগামী বছরের চাঁদার সঙ্গে যোগ হবে। গত বছর আমরা একেকজন ১৪ কেজি করে গোশত পেয়েছি। আমাদের এই সমিতির সদস্য রিকশা ও ভ্যানচালক, দরিদ্র, চাকরিজীবী, নিম্নবিত্তের লোকজন।’

দীঘা গ্রামের মহন আলী বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ঈদে ছেলেমেয়েদের কাপড়চোপড় কিনে টেকা শেষ হয়ে যায়। পরে চিনি-সেমাই কিনি কোনোমতে। কেমনে গোশত কিনুম? সমিতিতে দুই বছর ধরে নাম দিয়েছি। এ বছর ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকায় গরু কেনা হয়েছে। ঈদের এক দিন আগে গরু জবাই করে গোশত ভাগ করে নেওয়া হবে।’

গোচর গ্রামের অলিম মিয়া বলেন, ‘আমাদের সমিতিতে ৪০ জন সদস্য। সপ্তাহে ১০০ টাকা চাঁদায় এই সমিতি হওয়ায় গরিব মানুষের জন্য ভালো হয়েছে। ঈদে বাড়তি চিন্তা থাকে না।’

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে ভালো। তারা নিজেরা সঞ্চয়ী হচ্ছে। বছরব্যাপী সঞ্চয় করা টাকা দিয়ে ঈদের আগে গরু কিনলে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে না। উপরন্তু ঈদে ছেলেমেয়েদের নিয়ে সবাই ভালো খাবারও খেতে পারল। গোশত সমিতি এলাকার মানুষের মাঝে মেলবন্ধন তৈরিতে অনেকটা সহায়ক হয়েছে। সবাইকে ঈদ মোবারক জানান তিনি।