লোগোটি জামায়াতে ইসলামীর টুইটার হ্যান্ডেল থেকে নেওয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষণা নেই, তবে জয়ের সম্ভাবনা আছে—এমন উপজেলাগুলোতে নির্বাচন করছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন করা না-করা এবং প্রার্থী মনোনয়নে সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও জেলা কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে দলটির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন নেই। দলটির প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন।

যদিও বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীও এই সরকারের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা না পেয়ে বিগত ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এর চার মাসের মাথায় আগামী ৮ মে স্থানীয় সরকারের উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সে নির্বাচনে অঘোষিতভাবে জামায়াতের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হিসেবে অংশ নিচ্ছেন।

তবে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর অন্যতম ইসলামী আন্দোলন সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে ইতিমধ্যে তারা মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা পাঠিয়েছে যে দলের দায়িত্বশীল কেউ যাতে এই নির্বাচনে অংশ না নেন। যদিও ইসলামী আন্দোলন স্থানীয় সরকারের আগের উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।

ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, যাঁরা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংসদ নির্বাচন বর্জন করে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে জামায়াতের নেতারা বলছেন, নির্বাচন কমিশন তাঁদের দলের নিবন্ধন বাতিল করেছে। সংসদে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব নেই, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়েও প্রতিনিধিত্ব নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় দলের অস্তিত্ব দেখানোটা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এ কারণে এবারের উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে তাঁরা কিছুটা নমনীয়। তবে তাঁরা ঢালাওভাবে নির্বাচন করছেন না। কেবল যেসব এলাকায় দল সাংগঠনিকভাবে ভালো অবস্থায় আছে, সেসব জায়গায় প্রার্থী দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে যশোর, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন উপজেলায় জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছেন বলে প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।

৯ মার্চ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন উপনির্বাচন হয়। তাতে অনেক জায়গায় জামায়াতের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। এর মধ্যে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে জামায়াত–সমর্থিত প্রার্থী ফারুক হোসেন জয়ীও হন। আগামী ৮ মে উপজেলা নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের তিনটি পদে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জেলা জামায়াত। এর মধ্যে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আজিজুর রহমান চেয়ারম্যান পদে, দামুড়হুদা থানা আমির নায়েব আলী ভাইস চেয়ারম্যান পদে এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জেলা জামায়াতের শুরা সদস্য রেহেনা খাতুনকে প্রার্থী করেছে। দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মুহাদ্দিস এনামুল হক। তিনি সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন।

অবশ্য জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘আমরা দলীয়ভাবে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন করছি না। জেলা ও উপজেলার নেতারা একমত হয়ে যদি নির্বাচন করতে চায়, করবে। না করলে কাউকে বাধ্য করা হয়নি। অর্থাৎ কাউকে নির্বাচন করতে উৎসাহ দেওয়া হয়নি, আবার বারণও করা হয়নি।’

সর্বশেষ ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপর অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে জামায়াতের শতাধিক প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলাসহ) হন। এর আগে ২০০৯ সালের নির্বাচনে ২৪ উপজেলায় চেয়ারম্যানসহ ৩৯ জন ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলাসহ) নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে জামায়াত। দলের নিবন্ধন না থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ ছিল জামায়াত নেতাদের। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তে সেবার কেউ নির্বাচনে অংশ নেননি।

এদিকে জামায়াত বিক্ষিপ্তভাবে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলেও এখন পর্যন্ত এ নির্বাচনের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। যদিও দলটি উপজেলা নির্বাচন প্রশ্নে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি। দলের স্থায়ী কমিটির আগামী সোমবারের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন।