জনতা ব্যংকের তামাই শাখা  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জ: গ্রাহকদের হিসাব থেকে ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জনতা ব্যাংকের সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার তামাই শাখার ব্যবস্থাপকসহ তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ব্যাংকের সিরাজগঞ্জ এলাকা কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) নজরুল ইসলাম অভিযোগটি দায়ের করেন। এরপর রাতেই তামাই শাখা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। আজ সোমবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাঁদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন জনতা ব্যাংক তামাই শাখার ব্যবস্থাপক ও সিরাজগঞ্জ শহরের ধানবান্দি মহল্লার আল আমিন (৪২), সহকারী ব্যবস্থাপক ও বগুড়া ধুনট উপজেলার বেলকুচি গ্রামের রেজাউল করিম (৩৪), ব্যাংকের কর্মকর্তা ও সিরাজগঞ্জের বনবাড়িয়া কাদাই গ্রামের রাশেদুল ইসলাম (৩১)।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি জনতা ব্যাংক তামাই শাখার নগদ লেনদেন সন্দেহজনক মনে হওয়ায় রোববার ব্যাংকের তামাই শাখায় গিয়ে লেনদেনের সবকিছু নিরীক্ষা করেন ডিজিএম নজরুল ইসলাম। নিরীক্ষা শেষে ভল্টে ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার হিসাব গরমিল পান। জানতে চাইলে ওই তিন কর্মকর্তা টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে স্বীকার করেন। এরপর তিনি এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করলে পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে।

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমার নিরীক্ষায় ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা হিসাবে কম পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এই টাকা আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। যে কারণে তাঁদের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। জনতা ব্যাংক প্রধান কার্যালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদল এ বিষয়ে অধিকতর নিরীক্ষা করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’

বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান বলেন, ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫৪ ধারায় তাঁদের গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে বিষয়টি বিধি মোতাবেক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) আকারে গ্রহণ করে অভিযোগটি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হয়েছে।

বিষয়টি জানাজানি হলে জনতা ব্যাংকের তামাই শাখার গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। বেশ কিছু গ্রাহক তাঁদের ব্যাংক হিসাব প্রতিবেদন তুলে সেখানে মোটা টাকার হিসাব গরমিল পেয়েছেন। তামাই শাখার গ্রাহক তাঁত ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘এই শাখায় আমার দুটি চলতি হিসাবে সিসি ঋণ নেওয়া আছে। গত ১ জানুয়ারি আমি আমার হিসাবে ঋণের সব টাকা পরিশোধ করেছি। এখন খবর পেয়ে প্রতিবেদন তুলে দেখছি, আমার একটি হিসাব নম্বর থেকে ১৫ লাখ ৫২ হাজার ও আরেকটি হিসাব নম্বর থেকে ৪ লাখ টাকা ১৫ জানুয়ারি উত্তোলন করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি বড়ই হতাশ।’

আরেক তাঁত ব্যবসায়ী চাঁন মিয়া বলেন, ‘আমার চান কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ হিসাব নম্বর থেকে অসংখ্যবার টাকা তুলে আবার জমা দেওয়া হয়েছে। অথচ বিষয়টি আমি অবগত নই। সবশেষ সিসি ঋণ হিসাবে ব্যাংক আমার কাছে পাবে প্রায় দেড় লাখ টাকা। কিন্তু আমার হিসাব প্রতিবেদনে দেখানো হচ্ছে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা।’