কূটনৈতিক প্রতিবেদক: ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগুয়েল ওয়াংচুক চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আগামীকাল ২৫ মার্চ ঢাকায় আসছেন। আওয়ামী লীগ সরকার গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার পর এটি বাংলাদেশে কোন দেশের শীর্ষ নেতার প্রথম সফর। আগামীকাল সকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দীন ভুটানের রাজাকে স্বাগত জানাবেন।
আজ রোববার দুপুরে ভুটানের রাজার বাংলাদেশ সফর নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এ তথ্য জানান ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভুটানের রাজার সফরে নতুন করে তিনটা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। সেগুলো হলো ভুটানের থিম্পুতে একটি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশের কুড়িগ্রামে ভুটানের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ভোক্তা সুরক্ষায় প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বিষয়ক। এছাড়া সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি চুক্তি আছে আমাদের সঙ্গে সেটার নবায়ন করা হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, সফরের শুরুর দিন রাজা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন এবং জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। বাংলাদেশ সফরকালে তিনি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। সফরের প্রথম দিন রাজার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ২৬ মার্চ ভোরে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন রাজা।
মন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ সফরে ভুটানের রাজা পদ্মাসেতু পরিদর্শন করবেন। তিনি শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করবেন। কুড়িগ্রামে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলটি পরিদর্শনের জন্য বিমানযোগে ঢাকা ত্যাগ করে তিনি সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ছাড়বেন। স্থলবন্দরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কর্তৃক গার্ড অব অনার প্রদান করবেন। সেখানে তাঁকে বিদায় জানাবেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভুটানের রাজার সফরের সময় স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ও পর্যটন ক্ষেত্রে নিবিড়তর সহযোগিতার মতো বিষয়গুলো থাকবে। এছাড়া সংযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক উদ্যোগে সমন্বিত সহযোগিতা, কুড়িগ্রামে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ট্রানজিট চুক্তি এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাণিজ্য বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ খাতে ভারতকে সঙ্গে নিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিনিময়ের ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রস্তাব এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে।
রাজার সফরের তাৎপর্য তুলে ধরে হাছান মাহমুদ বলেন, নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরে বাংলাদেশে প্রথম কোনো উচ্চ পর্যায়ের রাষ্ট্রীয় সফর এটি। এ সফরে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে (বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে) ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। থিম্পুতে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা উদ্যোগের মাধ্যমে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের বৃহত্তর কল্যাণ সাধন হবে। ট্রানজিট এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির (পিটিএ) মাধ্যমে ভুটানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির সুযোগ হবে। বিদ্যুৎ খাতে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার চুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিনিময়ের সুযোগ তৈরি হবে।