তৈরি পোশাক কারখানা | ফাইল ছবি |
কূটনৈতিক প্রতিবেদক: বাংলাদেশসহ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি করে এমন পাঁচটি দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের বিষয়ে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে নতুন করে তদন্ত শুরু করছে ইউএসআইটিসি। অন্য চারটি দেশ হলো ভারত, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান। বাংলাদেশ নিয়ে শুনানি হবে আগামী শনিবার। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের (ইউএসআইটিসি) ওয়েবসাইট থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের (ইউএস টিআর) অনুরোধে বাংলাদেশসহ এই পাঁচ দেশ নিয়ে তদন্ত শুরু করছে ইউএসআইটিসি। কীভাবে এ দেশগুলো মার্কিন পোশাকশিল্পের বাজারে এত বড় অংশ দখল করে রেখেছে, তা তথ্যানুসন্ধান করে দেখবে কমিশন। এই পাঁচ দেশের কেউ অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাজার দখল করছে কি না, তা খুঁজে বের করাই প্রধান উদ্দেশ্য এ কমিশনের।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, পোশাকশিল্পের পরিস্থিতি নিয়ে ইউএসআইটিসির শুনানিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএর পাশাপাশি শ্রমিক প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। ওয়াশিংটনে ইউএসআইটিসির দপ্তরে গিয়ে সরাসরি ও ভার্চ্যুয়ালি ওই শুনানিতে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট পক্ষের প্রতিনিধিদের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল ঢাকা সফরে এসেছিল। ওই সফরের সময় তারা বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতির উন্নতির ওপর জোর দিয়েছে। তারা বিশেষ করে শ্রমিকদের সমাবেশ এবং ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়ার আইন সংশোধন নিয়ে সরকারের সঙ্গে মুক্ত আলোচনার মতো বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং সেগুলো সরকারের সঙ্গে আলোচনায় তুলে ধরেছিল।
বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের বিষয়ে ইউএসআইটিসির তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল সোমবার গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্টরা কাজ করছে। তদন্তকে চলমান প্রক্রিয়া হিসেবেই দেখা যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছি, এ তদন্ত যদি বস্তুনিষ্ঠতার ভিত্তিতে হয়, সেটি তারা করতেই পারে। এ তদন্তে যাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য না থাকে, সেটি ঢাকার কাম্য।
পররাষ্ট্রসচিব আরও বলেন, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা করেই আজ পোশাকশিল্পে বর্তমান স্থান অর্জন করেছে। আর যদি প্রতিযোগিতাবিরোধী কিছু তদন্তে উঠে আসে, তাহলে তা আমলে নেবে বাংলাদেশ। তবে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে তৈরি পোশাকশিল্পের ব্যবসা করে আসছে। আর মানদণ্ডের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী শনিবার অনুষ্ঠেয় ইউএসআইটিসির শুনানিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিজিএমইএ মৌখিক ও লিখিতভাবে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারে। এ ছাড়া শুনানির পরও ২২ মার্চ পর্যন্ত লিখিত বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ থাকবে। আগামী ৩০ আগস্ট কমিশন তাদের তদন্ত প্রতিবেদন ইউএসটিআরের কাছে উপস্থাপন করবে।
জানা গেছে, তদন্তে শ্রম পরিবেশ ও পরিস্থিতির সার্বিক বিষয়গুলো দেখবে কমিশন। সেখানে নিয়ম মেনে ভবন করা হয়েছে কি না, শ্রমিকের কর্মপরিবেশ, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারের চর্চা, অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা, শ্রমিকের সঙ্গে কেমন আচরণ করা হচ্ছে—এ ধরনের সব বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হবে। দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।