পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার এই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। এক বছরের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পেরিয়ে গেছে তিন বছর। সেখানে এখন শুধু দুটি পিলার।  লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের চর কুরুলিয়া গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার চর কুরুলিয়া গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মার একটি ক্ষীণধারা। স্থানীয়ভাবে এটিকে শাখাপদ্মা নামেই চেনে লোকে। চর কুরুলিয়া গ্রামে সরু এই নদীর একটি ঘাট রয়েছে, যার নাম গণির ঘাট। এই ঘাটে বর্ষায় নৌকা দিয়ে পারাপার চলে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে যাওয়ায় নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এই সময়ে হাঁটুপানি মাড়িয়ে নদী পারাপার করতে হয়। ফলে স্থানীয় লোকজন দীর্ঘদিন ধরে সেখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি করছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালে এলজিইডি এখানে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।

৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হলেও শেষ হওয়ার নাম নেই। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ৮ অক্টোবর। সেই মেয়াদ শেষ হয়েছে দেড় বছর হতে চলল। এ সময়ে কেবল সেতুটির দুটি পিলার ও দুই পাশের সংযোগ সড়কের গাইড ওয়াল তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ বিল তুলে নেওয়া ঠিকাদারকে পাওয়া যাচ্ছে না।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলাকাটিতে ব্যাপক সবজির আবাদ হয়। এখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১২ ট্রাক সবজি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। কিন্তু পরিবহনে সমস্যা সৃষ্টি হয় গণির ঘাটে। ঘাটটিতে শুষ্ক মৌসুমে নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এই সময়ে বালু, কাদা, পানি মাড়িয়ে নদী পারাপার করতে হয়। শীতকালীন সবজি পরিবহনে দুর্ভোগের শেষ থাকে না। স্থানীয় লোকজন দীর্ঘদিন ধরে এখানে একটি সেতুর দাবি জানিয়ে আসছেন। অন্যদিকে দীর্ঘদিন সেতুটি নির্মাণ না হওয়ায় লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের চর কুরুলিয়া, চর গরগরি, মাধপুর, চর কাতরা, চর প্রতাপপুর, কামালপুরসহ আশপাশের প্রায় ১০ গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বর্ষায় তাঁরা নৌকায় ঘাট পার হতে পারলেও শুষ্ক মৌসুমে পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন।

এলজিইডি জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৬ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির নির্মাণকাজের দরপত্র পায় যশোরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আইসিএল প্রাইভেট লিমিটেড। তবে প্রতিষ্ঠানটি নিজে কাজ না করে স্থানীয় কিছু ঠিকাদারকে দিয়ে কাজটি করাচ্ছিল। ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৮ অক্টোবর পর্যন্ত সেতুটি নির্মাণের সময় নির্ধারণ হয়। এর মধ্যে ঠিকাদার সেতুর দুটি পিলার ও দুই পাশের সংযোগ সড়কের গাইড ওয়াল তৈরি করে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এরপর মেয়াদ শেষ হলেও ঠিকাদার আর কাজে আসেননি। পরে দুই দফা মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলেও সেতুটির নির্মাণকাজ আর শুরু হয়নি। ইতিমধ্যে ঠিকাদার কাজের ৫৫ শতাংশ বিলও তুলে নিয়েছেন। 

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে দেখা যায়, এক পাশে গ্রাম, অন্য পাশে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মার শাখা নদী। গণির ঘাটে নদীর মাঝখানে নির্মাণাধীন সেতুর দুটি পিলার দাঁড়িয়ে আছে। দুই পাশে সংযোগ সড়কের গাইড ওয়াল করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা হেঁটে নদী পার হচ্ছেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি। ঠিকাদারের স্থানীয় প্রতিনিধিও ফোন ধরেননি। স্থানীয় লোকজনের দাবি, ঠিকাদার সেতুটির ৩০ শতাংশ কাজও শেষ করেননি। এর মধ্যেই এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারকে ৫৫ শতাংশ কাজের বিল দিয়েছে। এ কারণেই ঠিকাদার আর কাজে আসছেন না।

চর কুরুলিয়া গ্রামের আক্কাস আলী মালিথা বলেন, ‘সেতুটি চলাচল ও সবজি পরিবহনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু এলজিইডি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই সেতুটির নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। আমরা দ্রুত ঠিকাদার পরিবর্তন করে সেতুটি নির্মাণ সম্পন্ন করার দাবি জানাচ্ছি।’

তবে এলজিইডি জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান মণ্ডল দাবি করেন, সেতুটির ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তিনি ঠিকাদারকে ৫৫ শতাংশ কাজের বিল দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন। কাজ বন্ধ কেন, প্রশ্নে আনিসুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘শুনেছি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির মালিকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে তাঁরা কাজে আসছেন না। তবে আমরা তাঁদের আর সময় দেব না। খুব দ্রুতই সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’