নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদযাত্রার জন্য বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও উড়োজাহাজের টিকিট পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। এবার ২৫ রোজার পরই ঈদযাত্রার চাপ শুরু হচ্ছে। তবে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগে তিন দিনের টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

দুই দিন ধরে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি চলছে। প্রথম দুই দিন ৩ ও ৪ এপ্রিল ঈদযাত্রার টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। এ দুই দিন বিক্রির জন্য অনলাইনে প্রায় ৬১ হাজার টিকিট ছাড়া হয়। এর মধ্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৪৫ হাজারের বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে। এর বেশির ভাগই টিকিট ছাড়ার এক ঘণ্টার মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়। আজ মঙ্গলবার ৫ এপ্রিল ঈদযাত্রার টিকিট বিক্রি করা হবে।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদের সম্ভাব্য ছুটি ১০ থেকে ১২ এপ্রিল। রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, ৭ ও ৮ এপ্রিলের টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকবে। আর অঞ্চল বিবেচনায় উত্তরবঙ্গ, বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকার ট্রেনগুলোর টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা অঞ্চলের ট্রেনের টিকিট নির্ধারিত সময়ের পরও অবিক্রীত থেকে গেছে।

ঈদে সবচেয়ে বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়েন বাসে করে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদের টিকিট বিক্রি করছে না বাস কোম্পানিগুলো। অনেক কোম্পানি আগে থেকেই ঈদের টিকিট বিক্রি করছে। বেশির ভাগই অনলাইনে। আজ ও আগামীকাল বুধবার বেশির ভাগ বাসের টিকিট বিক্রি হবে বলে পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

পরিবহন খাতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালকেন্দ্রিক যেসব বাস চলাচল করে, সেগুলোতে অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয় না। যাত্রার আগে টিকিট বিক্রি করা হয়। এতে বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যায়। অন্যদিকে গাবতলীকেন্দ্রিক কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগ বড় কোম্পানি। এবার ঈদযাত্রা লম্বা বলে আগে থেকেই তাদের অনেকেই টিকিট ছেড়ে দিয়েছে। ৬ এপ্রিল থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাসের টিকিটের চাহিদা বেশি।

সোহাগ পরিবহনের স্বত্বাধিকারী ফারুক তালুকদার সোহেল বলেন, এবার মনে হচ্ছে, পবিত্র লাইলাতুল কদরের পরই মানুষ বাড়ি যাওয়া শুরু করে দেবেন। এরপরও অন্যান্য দিনের টিকিটের চাপ আছে। তিনি বলেন, ছুটি লম্বা হওয়ায় ঈদের আগের দিন বিকেলের পর যে বাস যাবে, সেগুলোর টিকেটের চাপ কম। অন্যান্য বছর ঈদের আগের দিন গভীর রাত পর্যন্ত চাপ থাকে।

অভ্যন্তরীণ পথে উড়োজাহাজের টিকিটের ৭০ শতাংশ বিক্রি হয়ে গেছে। উত্তরবঙ্গের পথে চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আর পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণের পথে লঞ্চে যাত্রী কিছুটা কমে গেছে। এরপরও কাল বুধবার লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে।

ট্রেনে উত্তরের টিকিটের চাহিদা বেশি
রেলের পশ্চিমাঞ্চলে (রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগ) চলাচল করা সব আন্তনগর ট্রেনের ৪ এপ্রিলের যাত্রার অগ্রিম টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়। পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনের জন্য দিনে নির্ধারিত আছে ১৪ হাজার ৭১৫টি টিকিট। বেলা দুইটার মধ্যে নির্ধারিত টিকিটের প্রায় সবই বিক্রি হয়ে যায়।

পূর্বাঞ্চলের (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ) টিকিট বরাদ্দ আছে ১৬ হাজার ২২টি। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১১ হাজারের মতো টিকিট বিক্রি হয়েছে। অবিক্রীত টিকিটের বেশির ভাগই চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের। 

চাপ আকাশপথের টিকিটেও
সড়কপথে যানজট, রেলপথে বিলম্ব, নৌপথে ভিড়সহ নানা দুর্ভোগ এড়িয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণের জন্য আকাশপথকে বেছে নেন ঈদে ঘরমুখী মানুষের অনেকেই। ঈদযাত্রায় অভ্যন্তরীণ পথে যেসব উড়োজাহাজ চলাচল করবে, এর প্রায় ৭০ শতাংশ টিকিট এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। বাকি যেসব টিকিট এখনো অবিক্রীত, সেগুলোর নাগাল পেতে ঈদে মূল্য দিতে হবে দুই থেকে তিন গুণ বেশি।

দেশের বিমান সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২৫ রোজার পর থেকে টিকিটের চাহিদা বেশি।

অনলাইনে উড়োজাহাজের টিকিট কাটার জনপ্রিয় একটি ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখা যায়, আগামী ৯ এপ্রিলের ঢাকা থেকে সৈয়দপুর পথে উড়োজাহাজের টিকিটের সর্বনিম্ন দাম সাড়ে আট হাজার টাকা। এয়ার অ্যাস্ট্রা, নভোএয়ার, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও ইউএস বাংলার টিকিটের দাম কমবেশি সাড়ে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজারের মধ্যে। সাধারণ সময়ে এই গন্তব্যে টিকিটের দাম তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজারের মধ্যেই থাকে।

 ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বলেন, ২৫ রোজার পরের ৭০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। এখন টিকিট কাটলে দাম বেশিই পড়বে। আর ঈদের সময় ঢাকা থেকে যাত্রী পূর্ণ করে ছাড়লেও ফ্লাইটগুলো ফিরবে একেবারে ফাঁকা।

নভোএয়ারের একজন কর্মকর্তা বলেন, সৈয়দপুর ও রাজশাহী রুটের টিকিটের চাহিদা বেশি। যে টিকিটগুলো এখনো অবিক্রীত, সেগুলোর নাগাল পেতে দুই থেকে তিন গুণ বেশি দাম দিতে হবে যাত্রীদের।

লঞ্চের টিকিট আগামীকাল থেকে

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল জানিয়েছেন, ঈদ উপলক্ষে ঢাকা-বরিশাল নৌপথে আগামী ৬ এপ্রিল বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস শুরু হচ্ছে। চলবে ঈদের পর এক সপ্তাহ পর্যন্ত। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও লঞ্চমালিকদের সংগঠন (যাত্রী পরিবহন) যাপ মিলে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য লঞ্চগুলোর প্রথম শ্রেণি ও ভিআইপি কেবিনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হচ্ছে আগামীকাল।

বিআইডব্লিউটিএ ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক ইসমাইল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৬ এপ্রিল থেকে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনাল থেকে বিশেষ লঞ্চ চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পদ্মা সেতু চালুর পর লঞ্চে যাত্রী কমে গেছে বলে উল্লেখ করেন যাপের সহসভাপতি সাইদুর রহমান। তিনি  বলেন, ঈদ উপলক্ষে দুই প্রান্ত থেকে প্রতিদিন ছয়টি লঞ্চ চলাচলের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাত্রীর চাপ বেশি হলে আরও লঞ্চ বাড়ানো যাবে।