পোশাক কারখানা | ফাইল ছবি |
নিজস্ব প্রতিবেদক: ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনকারী পোশাকশ্রমিকদের গ্রেপ্তার, গ্রেপ্তারের হুমকি ও তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনা বন্ধ করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক ব্যবসায়ীদের সংগঠন আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ)।
এ আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও এ দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসানকে চিঠি লিখেছে এএএফএ। চিঠি দুটি গত সোমবার এএএফএর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে এএএফএর সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্টিফেন ল্যামার বলেন, ‘আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের পক্ষ থেকে আমি আবারও ২০২৩ সালে ন্যূনতম মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ ঘিরে হাজার হাজার শ্রমিকের বিরুদ্ধে চলমান আটক ও আটকের হুমকি বন্ধের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি আমি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বিক্ষোভের সময় সহিংসতায় প্রাণহানি ও শ্রমিক আহত হওয়ার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি।’
আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন হলো যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক ও জুতাসহ অন্যান্য পণ্যের ব্যবসায়ীদের অ্যাসোসিয়েশন। এর আওতায় বিশ্বখ্যাত এক হাজারের বেশি ব্র্যান্ড রয়েছে।
চিঠিতে স্টিফেন ল্যামার লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকের তৃতীয় বৃহৎ সরবরাহকারী বাংলাদেশ। তা ছাড়া বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে জুতা ও ভ্রমণে ব্যবহৃত পণ্য সরবরাহও দ্রুত বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিরাট গুরুত্ব রয়েছে। তিনি বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে স্মরণ করছেন। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে সুবিধাজনক সম্পর্ক উভয়ের জন্য সমৃদ্ধি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এসেছে।
এএএফএর চিঠিতে বলা হয়, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে শ্রমিকদের বিষয়ে তাদের আবারও আহ্বান জানাতে হচ্ছে। ন্যূনতম মজুরি নিয়ে বিক্ষোভের সময় গ্রেপ্তার সব ব্যক্তিকে মুক্তি প্রদান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আনা সব ফৌজদারি অভিযোগ প্রত্যাহার এবং আরও হাজার হাজার কর্মীকে গ্রেপ্তারের হুমকি বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া গত বছর গ্রেপ্তার হওয়া জুয়েল মিয়ার মতো যেসব শ্রমিক সংগঠকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহারের জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় এএএফএ।
বিজিএমইএর সভাপতিকে লেখা চিঠিতে এই প্রক্রিয়ায় ব্যবসায়ীদের সংগঠনের ভূমিকা প্রত্যাশা করা হয়েছে। চিঠির বিষয়ে মতামত জানতে গতকাল শুক্রবার রাতে বিজিএমইএর সভাপতি ও একজন সহসভাপতির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তা সম্ভব হয়নি।
দেশের রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পে প্রতি পাঁচ বছর পরপর নতুন মজুরিকাঠামো ঘোষিত হয়। গত বছরের এপ্রিলে প্রায় ৪০ লাখ পোশাকশ্রমিকের মজুরি নির্ধারণে সরকার নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে। এরপর গত ২২ অক্টোবর বোর্ডের চতুর্থ সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরি দাবি করে প্রস্তাব দেন। এর বিপরীতে মালিকপক্ষ প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ১০ হাজার ৪০০ টাকা মজুরি প্রস্তাব দেয়। পরদিন থেকেই গাজীপুরে মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে শ্রমিকেরা আন্দোলনে নামেন। পরে আশুলিয়া-সাভার ও মিরপুরে শ্রম অসন্তোষ ছড়ায়। তিন সপ্তাহের এই আন্দোলনে রাসেল হাওলাদার, ইমরান হোসেন, আঞ্জুয়ারা খাতুন ও জালাল উদ্দিন নামের চার পোশাকশ্রমিক নিহত হন। আহত হন অনেকে। ঘটনায় শ্রমিকনেতা ও আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকদের অনেককে মামলায় আসামি করা হয়।