স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে সুন্দরবনের নদীতে ছাড়া হলো কুমির | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি বাগেরহাট: প্রথমবারের মতো শরীরে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে সুন্দরবনের নদীতে অবমুক্ত করা হলো দুটি কুমির। বুধবার দুপুর ও রাতে সুন্দরবনের ভদ্রা নদীতে লোনা পানির কুমির দুটিকে অবমুক্ত করা হয়।
বন বিভাগ বলছে, কুমিরের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে জানতে পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে নদীতে অবমুক্তের ঘটনা এশিয়ায় এই প্রথম। এর মাধ্যমে সুন্দরবনের নদীতে কুমিরের চলাচল ও অবমুক্ত করা কুমিরের বেঁচে থাকা সম্পর্কে জানা যাবে।
ট্রান্সমিটার বসিয়ে অবমুক্ত করা কুমির দুটির মধ্যে একটি পুরুষ ও অন্যটি স্ত্রী। তাদের মধ্যে পুরুষ কুমির জুলিয়েট সুন্দরবনের করমজলে অবস্থিত দেশের একমাত্র সরকারি কুমির প্রজনন কেন্দ্রের পুকুরে ছিল। আর স্ত্রী কুমির মধুকে সম্প্রতি যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ির মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ির এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।
বন বিভাগ ও আইইউসিএনের (আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ) সহযোগিতায় শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার দুজন কুমির বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে কুমির দুটি সুন্দরবনের নদীতে অবমুক্ত করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ নুরুল করিম, সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের ডিএফও আবু নাসের মোহসিন হোসেন, আইইউসিএনের এদেশীয় প্রতিনিধি মো. সরোয়ার আলম, বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ডিএফও নির্মল কুমার পাল, মৎস্যবিশেষজ্ঞ মো. মফিজুর রহমান, শ্রীলঙ্কার কুমিরবিশেষজ্ঞ রু সোমাইয়েরা, অস্ট্রেলিয়ার কুমিরবিশেষজ্ঞ পল, করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবীর প্রমুখ।
হাওলাদার আজাদ কবীর বলেন, এশিয়ায় এই প্রথম কুমিরকে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে নদীতে অবমুক্ত করা হলো। এর মাধ্যমে কুমিরের চলাফেরা ও যেসব কুমির নদীতে অবমুক্ত করা হয়, তার টিকে থাকার ব্যাপারে জানা যাবে।
বর্তমানে বাংলাদেশে কেবল সুন্দরবন এলাকাতেই প্রাকৃতিক পরিবেশে লোনা পানির কুমির দেখা যায়। পরিবেশে লোনা পানির কুমিরের এই প্রজাতির প্রজনন খুব একটা হচ্ছে না। প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএনের তালিকায় লোনা পানির কুমিরকে বাংলাদেশে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এই কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও লালন-পালনের জন্য ২০০০ সালে সুন্দরবনের করমজলে বন বিভাগের উদ্যোগে কুমির প্রজনন কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়।
এখন পর্যন্ত এই কেন্দ্র থেকে সুন্দরবনের নদী-খালে ২০৬টির মতো কুমির অবমুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে আজাদ কবির প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে করমজল কেন্দ্রে কুমির আছে ১১২টি। অবমুক্ত কুমিরের মধ্যে জুলিয়েটের বয়স আনুমানিক ৩৬ বছর এবং মধুর বয়স ১৩ বছর।
এর আগে বিভিন্ন সময়ে বাটাগুর বাসকা নামে বিলুপ্ত প্রজাতির কচ্ছপের পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার যুক্ত সুন্দরবনের বাংলাদেশ ও ভারত অংশে অবমুক্ত করা হয়। মূলত প্রাণীর জীবনাচার সম্পর্কে গবেষণার অংশ হিসেবেই শরীরে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার যুক্ত করা হয়।